নারীর আন্দোলন দমনে ইরানের ভূমিকার জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। অ্যামেরিকা এই ভোটের আহ্বায়ক ছিল।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সমাজ বিষয়ক কমিটি বুধবার জাতিসংঘে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করে। সেখানে প্রশ্ন ছিল, ইরানকে ইউএনসিএসডাব্লিউ বা জাতিসংঘের নারী অধিকার সংক্রান্ত কমিটিতে রাখা হবে কি না! অ্যামেরিকা এই ভোটের আহ্বান জানিয়েছিল। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি ২৯-৮ ভোটে প্রস্তাব সমর্থন করেছে। অর্থাৎ, ইরান আর ওই কমিটিতে থাকতে পারবে না।
গাফুরিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ সমর্থন করার জন্য। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। প্রবল কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। সাবেক ফুটবলার গাফুরি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছিলেন। বলা হয়েছে, তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন।
ছবি: Alireza Zeinali/SPP/IMAGO
বরাবর বিদ্রোহী গাফুরি
গাফুরি হলেন ইরানের কুর্দ এলাকার সবচেয়ে নামী ফুটবলার। তিনি আমিনির পরিবারের কাছে সমবেদনা জানিয়েছেন। এর আগে তিনি মেয়েদের দর্শক হিসাবে মাঠে না থাকার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন। এর আগেও তিনি বারবার কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন।
ছবি: AFP
বিশ্বকাপের প্রতিবাদ
কাতার বিশ্বকাপে ইরানের ফুটবলাররা জাতীয় সংগীত গাননি। তারা এভাবে ইরানে মেয়েদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেছেন। দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি এই বিক্ষোভ নিয়ে বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি তারা সহানুভূতিসম্মন্ন।
ছবি: Han Yan/Xinhua/IMAGO
আচরণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে
ইরানের তরফে জানানো হয়েছে, ফুটবলারদের আচরণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তেহরানের সিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা কিছুতেই জাতীয় সংগীতের অপমান সহ্য করবেন না। কুর্দিস্তানের এক রক্ষণশীল এমপি বলেছেন, যারা জাতীয় সংগীত গাইবে, তাদের কাতার পাঠানো হোক। বর্তমান প্লেয়ারদের দেশে ফেরানো হোক।
ছবি: Anthony Stanley/ATP photo agency/picture alliance
আন্দোলনকারীদের সমালোচনা
এর আগে আন্দোলনকারীরা ফুটবলারদের সমালোচনা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ইরানের এই পরিস্থিতিতে কেন কাতারে যাচ্ছেন ফুটবলাররা?
ছবি: Anthony Stanley/ATP photo agency/picture alliance
কী হতে পারে?
ইরানের ফুটবলাররা দেশে ফিরলে কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। গার্ডিয়ানের রিপোর্ট বলছে, দেশে ফিরলে ইরানের ফুটবলাররা শাস্তির মুখে পড়তে পারেন এই আশঙ্কা বাড়ছে। সান জানিয়েছে, ফুটবলারদের জেল, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ডেইলি মেল জানিয়েছে, ইরানের ফুটবলারদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, বাকি ম্যাচগুলিতে তারা যদি জাতীয় সংগীত না গায়, তাহলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
ছবি: MARKO DJURICA/REUTERS
বিক্ষোভ চলছে
ইরানে এখনো বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোরতম ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাও বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছে না।
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
7 ছবি1 | 7
মার্কিন প্রস্তাবের পক্ষে ২৯ ভোট পড়েছে। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে আটটি দেশ এবং ভোটে অংশ নেয়নি ১৬টি দেশ। অ্যামেরিকার বক্তব্য, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইরানে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন নারীরা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিচ্ছে ইরানের প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের উপর অত্যাচার চলছে, তাদের জেলে ভরা হচ্ছে এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নারী অধিকার সংক্রান্ত কমিটিতে ইরানের থাকার কোনো যোগ্যতা নেই বলে জানিয়েছিল অ্যামেরিকা।
রাশিয়া অবশ্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সমাজ বিষয়ক কমিটি আদৌ এF ধরনের ভোটের আয়োজন করতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
চার বছরের জন্য বিভিন্ন দেশ জাতিসংঘের ইউএনসিএসডাব্লিউ কমিটিতে যোগ দিতে পারেন। বর্তমান কমিটি ২০২২ সালে নির্বাচিত হয়েছিল। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই কমিটি থাকবে। ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ইরান আর এই কমিটির কোনো বৈঠকে যোগ দিতে পারবে না।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত নভেম্বর মাস থেকে ইউএনসিএসডাব্লিউ থেকে ইরানকে সরানোর দাবি জানাতে শুরু করেছিলেন। এদিনের ভোটের পর টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, এটি ইরানের নারীদের জয়।
বস্তুত, অ্যামেরিকা জানিয়েছে, এই ভোটের মধ্য দিয়েই ইরানের আন্দোলনকারী নারীদের পাশে দাঁড়াতে চায় অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘ। এর আগেও ইরানকে এবিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘ।
এদিনের ঘটনা নিয়ে ইরান এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি।