জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ পেতে জার্মানির সম্ভাবনা বেড়েছে কেননা ইসরায়েল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে৷ ফলে পরিষদের অস্থায়ী দু’টি সদস্যপদ পাওয়ার পথে আরো এগিয়ে গেল জার্মানি এবং বেলজিয়াম৷
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশন শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘সঙ্গী এবং ভালো বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর ইসরায়েল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদের আবেদন স্থগিত করেছে৷''
‘‘এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করবো যাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণের এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশটির মতামত প্রদানের অধিকার থাকে,'' বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে৷
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
ইসরায়েল সরে যাওয়ায় এখন পশ্চিম ইউরোপ এবং অন্যান্যদের জন্য বরাদ্দ থাকা নিরাপত্তা পরিষদের দু'টি আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছে শুধু জার্মানি এবং বেলজিয়াম৷ ফলত দেশ দু'টির নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ পাওয়ার পথে দৃশ্যত বড় কোনে বাধা থাকলো না৷
জাতিসংঘে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হয়েসগেন অবশ্য জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে জানিয়েছেন যে, ইসরায়েল যে সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহার করতে পারে সে গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল৷ এখন ইসরায়েল সরে যাওয়ায় বার্লিনের সদস্যপদ পাওয়ার পথ সহজ হয়েছে বটে, তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি৷
কয়েকজন কূটনীতিক অবশ্য জানিয়েছেন, ইসলায়েল বুঝে গিয়েছে যে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে অনেকেই দেশটির সদস্যপদের আবেদনের পক্ষে ভোট দেবে না৷ ফলে জার্মানি এবং বেলজিয়ামের কাছে দেশটির পরাজয় মোটামুটি নিশ্চিত ছিল৷
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের৷ এটির পাঁচ স্থায়ী সদস্য হচ্ছে ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ পরিষদের বাকি দশটি অস্থায়ী আসনে জাতিসংঘের সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত বিভিন্ন দেশ দুই বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে৷
জাতিসংঘের এই পরিষদ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা যে কোনো দেশ আইনগতভাবে মানতে বাধ্য৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতাও এই পরিষদের রয়েছে৷ পরিষদের দশটি অস্থায়ী আসনের পাঁচটি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়৷
বাকি পাঁচটি আসনের জন্য ভোটাভুটি হলেও সেগুলোর একটি আফ্রিকা, একটি এশিয়া-প্যাসিফিক, একটি ক্যারাবীয় অঞ্চল এবং দু'টি পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্যদের জন্য বরাদ্দকৃত রয়েছে৷ অর্থাৎ এই আসনগুলোর সদস্যদের উল্লেখিত অঞ্চলগুলো থেকে হতে হবে৷ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হতে হলে জার্মানি ও বেলজিয়ামকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আয়োজিত ভোটাভুটিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দুই তৃতীয়াংশের ভোট পেতে হবে৷