জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর যৌন নির্যাতনের কালো অধ্যায়
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষা করতে অন্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনী পাঠায় জাতিসংঘ৷ অতীতে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে গ্যাবনের সাড়ে চারশ শান্তিরক্ষা সদস্যকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জাতিসংঘ৷
এই অভিযোগের আগ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১০ সালের পর থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ১,২৬৫ জন সেনা, পুলিশ ও স্টাফের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে৷
জাতিসংঘ কী করে?
বিশ্ব নেতাদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলার পর ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে জাতিসংঘ৷ সে হিসেবে এ বছর ৭৮ পেরুলো সংস্থাটি৷ ছবিঘরে জাতিসংঘের দৈনন্দিন কাজের কথা তুলে ধরা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Roberts
খাবার
৮৩ দেশের সাড়ে আট কোটির বেশি মানুষকে খাবার ও সহায়তা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/A. Amra
টিকা
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্য টিকা সরবরাহ করে৷ এর ফলে বছরে প্রায় ৩০ লাখ শিশুর জীবন রক্ষা পায়৷
ছবি: picture alliance/AA
নিরাপত্তা
যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে পালানো আট কোটির বেশি মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে জাতিসংঘ৷ তাদের বিভিন্ন সহায়তাও দিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখতে ১৯৬টি দেশের সঙ্গে কাজ করছে জাতিসংঘ৷
ছবি: AFP/M. Tama
শান্তিরক্ষা
সারা বিশ্বে পরিচালিত ১৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে ৯৫ হাজার নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত আছেন৷ এর মধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ছয় হাজার ৭৩১ জন, যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Bothma
পানি
বিশ্বের প্রায় ২২০ কোটি মানুষ পানি সমস্যায় রয়েছে৷ এই সমস্যা লাঘবে কাজ করছে জাতিসংঘ৷
ছবি: ABDELHAK SENNA/AFP/GettyImages
মানবাধিকার
৮০টি চুক্তি/ডিক্লারেশনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Reuters/D. Balibouse
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় ১১ কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিতে ২৮.৮ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘ৷ এই অর্থ পেতে কাজ করছে সংস্থাটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/
নির্বাচন
প্রতিবছর প্রায় ৫০টি দেশে নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করে জাতিসংঘ৷ এই সময় সংঘাত এড়াতে কূটনীতিও কাজে লাগায় সংস্থাটি৷
ছবি: imago images/Afrikimages/A. Keita
মা ও শিশু
মাসে প্রায় ২০ লাখ নারীকে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব সংক্রান্ত জটিলতার সময় সহায়তা প্রদান করে৷
ছবি: Imago/Xinhua
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গত ৭৫ বছরে জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তিগুলোর মধ্যে সামরিক সংঘাত এড়াতে সক্ষম হওয়া৷
ছবি: Manuel Elías/UN Photo/Imago Images
11 ছবি1 | 11
২০১৬ সালের এক ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রায় অর্ধেক শিশু হওয়ায় তখন বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়েছিল৷
২০১৭ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রতিবছর তার স্টাফ ও সেনাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে৷
ক্যামেরুন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডিআর কঙ্গো ও গ্যাবনের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে৷
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন থাকা শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷
একের পর এক অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালের মার্চে গ্যাবন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে তাদের সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল৷ কিন্তু সেনারা তা না শুনে সেখানে থেকে গেছে৷
২০১৬ ও ২০১৭ সালে রিপাবলিক অফ কঙ্গোর সাতশর বেশি সৈন্যকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়৷
২০১৪ সালে ফ্রান্সের সেনাদের বিরুদ্ধে সাত থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশুদের খাবারের বিনিময়ে যৌন সুযোগ দেয়ার লোভ দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল৷
২০০৮ সালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন থাকার সময় ২৩ জন অপ্রাপ্তবয়স্কের ওপর যৌন হামলা চালানোর দায়ে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা ফ্রান্সের এক মেকানিককে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ঐ মেকানিক ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন ছিলেন৷
বিদেশে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী
সেই ১৯৮৮ সালে যাত্রা শুরু৷ তারপর থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়মিত বাংলাদেশের সামরিক ও পুলিশ বাহিনী৷ মিশনে বাংলাদেশের সেনারা এক আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
কয়েকজন সামরিক পর্যবেক্ষক দিয়ে শুরু
১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের ‘ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক গ্রুপে’ যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য৷ সেসময় ক্ষমতায় ছিলেন সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷ পরের বছর বাংলাদেশ পুলিশ এবং ১৯৯৩ সালে নৌ ও বিমানবাহিনী মিশনে যোগ দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Healing
৪০ দেশে এক লাখ চল্লিশ হাজার সেনা
১৯৮৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে বাংলাদেশের ১,৩৪,৯৪৭ সেনা ও পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন৷ জাতিসংঘের মিশনে সেনা পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷
বর্তমানে ১৫টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় দশ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় তিন হাজার সদস্যের অবস্থান কঙ্গোতে৷ ছবিতে সেদেশে নিযুক্ত এক বাংলাদেশি সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. van Zuydam
রাজনৈতিক দলের সমর্থন
বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অনেক বিষয়ে মতভেদ থাকলেও সামরিক বাহিনীর শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকে উভয় পক্ষই পুরোপুরি সমর্থন করছে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা৷ বাংলাদেশের কাছে বিষয়টি জাতীয় গর্বের ব্যাপার৷
ছবি: DW/M. Mamun
অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ৷ আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিশনে দায়িত্বে থাকাকালে একজন সদস্য মাসে এক হাজার মার্কিন ডলারের মতো আয় করেন, যা বাংলাদেশে গড় বেতনের চেয়ে অনেক বেশি৷ এই অর্থ সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Kouyate
নিহত ১২৪ সদস্য
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শান্তিরক্ষা মিশনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১২৪ সদস্য নিহত হয়েছেন৷ এদের মধ্যে দশজন পুলিশ সদস্যরা, বাকিরা সবাই সামরিক বাহিনীর সদস্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
6 ছবি1 | 6
২০১৬ সালে মিশরের এক সেনাকে পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়েছিল৷
হাইতি
শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের সমালোচনা করে৷ সেই সময় তারা হাইতিতে শ্রীলঙ্কার সেনাদের পরিচালিত একটি ‘সেক্স রিং' এর উদাহরণ দিয়েছিল৷ এই ঘটনায় শ্রীলঙ্কার একশর বেশি সেনাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলেও তাদের বিচার করা হয়নি৷
২০১১ সালে উরুগুয়ের সেনারা হাইতির এক টিনএজারকে ধর্ষণ করছে এমন এক ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ পেয়েছিল৷ এই ঘটনায় উরুগুয়ের পাঁচ সেনাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷ উরুগুয়ের সেই সময়কার প্রেসিডেন্ট হাইতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন৷
দক্ষিণ সুদান
২০০৭ সালে দক্ষিণ সুদানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগে বাংলাদেশের চার শান্তিরক্ষা সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছিল৷
শরণার্থী নারীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগে ঘানার ৪৬ জন শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷
এছাড়া ডিআর কঙ্গো ও আইভরি কোস্টেও এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷