জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাজেট এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমানোর প্রস্তাব করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ বর্তমানে মিশনের এক চতুর্থাংশ খরচ বহন করে দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট কমানোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে জাতিসংঘের পক্ষে মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ মুখপাত্র স্টেফান ড্যুশারি বলেন, ‘‘আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের দিকে তাকালে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, জাতিসংঘের পক্ষে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া, উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে৷’’
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের বাৎসরিক বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷ জাতিসংঘের নিয়মিত বাজেট প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পঁচিশ শতাংশ প্রদান করে সেই দেশ৷ এছাড়া শান্তিরক্ষা মিশনের আলাদা বাজেটের (প্রায় আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার) আঠাশ দশমিক পাঁচ শতাংশও এতদিন যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে এসেছে৷
আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন
আফ্রিকার অনেক দেশেই চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ কোথাও কোথাও সেই অস্থিরতা যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ তাই সেসব দেশে শান্তি রক্ষা মিশন পাঠিয়েছে জাতিসংঘ৷ ছবিঘরে থাকছে আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর উদ্যোগের কথা৷
ছবি: picture-alliance/AA/S. Mohamed
কঙ্গোয় সবচেয়ে বড় মিশন
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য জাতিসংঘ মিশন কাজ করে যাচ্ছে সেই ১২৯৯ সাল থেকে৷ ২০ হাজার সৈন্যের ওই মিশনের জন্য বার্ষিক বাজেট এক দশমিক চার বিলিয়ন ডলার৷ আফ্রিকায় জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় এই শান্তিরক্ষা মিশনটি মোনুসো (এমওএনইউএসও) নামে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
দারফুরে যৌথ মিশন
সুদানের দারফুর অঞ্চলে আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের যৌথ শান্তিরক্ষা বাহিনী ইউএনএএমআইডি কাজ করছে৷ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মিশনটি এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ৷ সফল হতে হলে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আরো জোর চেষ্টা চালানো দরকার বলেও মনে করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. G. Farran
দক্ষিণ সুদানেও শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ
দক্ষিণ সুদানে ২০১৩ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ লাখ বেসামরিক নাগরিক ঘরছাড়া হয়েছেন৷ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে রাজধানী যুবায় সরকারি সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে শুরু হয়েছিল ব্যাপক সংঘাত৷ ‘ব্লু হেলমেট’ বাহিনী, অর্থাৎ জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন তখন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A.G.Farran
সবচেয়ে বিপজ্জনক মিশন যেখানে
শান্তিরক্ষা মিশন সেখানে সরকার এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন একিউআইএম-এর কারণে সেই উদ্যোগ সফল হচ্ছে না৷ জঙ্গি সংগঠনটি কিছুদিন পরপরই হামলা চালায়৷ মালির শান্তিরক্ষা মিশনে জার্মানিরও ৭০০ সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
শান্তিরক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধেই যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকে শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধেই উঠেছে ব্যাপক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ৷ অভিযোগটি মূলত ফ্রান্সের সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে৷ তিন বছর হয়ে গেলেও যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুরা কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি৷
ছবি: Sia Kambou/AFP/Getty Images
পশ্চিম সাহারায় শান্তির অপেক্ষা
পশ্চিম সাহারায় শান্তিরক্ষা মিশন আছে ১৯৯১ সাল থেকে৷ ১৯৭৬ সাল থেকে অঞ্চলটি মরক্কোর দখলে৷ ‘ফ্রেন্টে পলিসারিও’ বিদ্রোহীরা তাই স্বাধীনতার জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Senna
আইভরি কোস্টে শান্তি
দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৬ সালের ৩০ জুন আইভরি কোস্টে শান্তি ফিরেছে৷ ধীরে ধীরে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করছে জাতিসংঘ৷ সৈন্য পুরোপুরি প্রত্যাহারের পরও শান্তি বজায় থাকে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Sanogo
লাইবেরিয়াতেও প্রতীক্ষার অবসান
লাইবেরিয়াতেও ১৪ বছর বছর পর শান্তি ফিরেছে৷ শান্তিরক্ষা মিশন ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে৷ আশা করা যায়, ২০১৭ সালের মধ্যেই সব বিদেশি সৈন্য লাইবেরিয়া ছাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
সুদানে শান্তি আনবে ইথিওপিয়া?
তেলসমৃদ্ধ আবেয়ি অঞ্চলে টহল দিচ্ছে ইউএনআইএসএফএ-র সৈন্যরা৷ সুদান এবং দক্ষিণ সুদান দুই দেশেরই দাবি এই অঞ্চলটি তাদের৷ সংঘাত এড়াতে তাই মোতায়েন করা হয়েছে ইথিওপিয়ার চার হাজারেরও বেশি সেনা সদস্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. G. Farran
সোমালিয়া: ভবিষ্যৎ দৃষ্টান্ত?
সোমালিয়ায় আফ্রিকান ইউনিয়নের নেতৃত্বে লড়ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী৷ সেখানকার শান্তিরক্ষা বাহিনীর সংক্ষিপ্ত নাম এএমআইএসওএম৷ জঙ্গি গোষ্ঠী আল শাবাবের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা৷ ইথিওপিয়া, বুরুন্ডি, জিবুতি, কেনিয়া, উগান্ডা, সিয়েরা লিয়ন, ঘানা এবং নাইজেরিয়ার সৈন্যও আছে এই বাহিনীতে৷
ছবি: picture-alliance/AA/S. Mohamed
10 ছবি1 | 10
কিন্তু অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অর্থ বছরের যে বাজেট পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে পেশ করেছে তাতে কূটনীতি এবং ত্রাণ বাজেট প্রায় উনিশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে যে, শান্তিরক্ষা মিশনের বর্তমান বাজেট থেকে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমানো হবে৷ শুধু শান্তিরক্ষা মিশনই নয়, ইউনিসেফ এবং ইউএনএফপিএ’র বাজেট কমানোরও ঘোষণা দিয়েছে দেশটি৷
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বর্তমান বাজেট দিয়ে ১৬টি মিশন, একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র, লজিস্টিক বেস এবং ১১৩,০০০ সদস্য মোতায়েনের খরচ বহন করা হয়৷ এর মধ্যে কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান এবং সুদানের দারফুরে থাকা মিশনগুলোর প্রতিটিতে এক বিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলার করে খরচ হচ্ছে৷ এছাড়া শীঘ্রই হাইতি, আইভরি কোস্ট এবং লাইবেরিয়াতে মিশন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ৷
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন মাঝেমাঝেই সমালোচনার মুখে পড়ে৷ অভিযোগ রয়েছে যে, হাইতিতে পরিচালিত মিশন সে দেশে ২০১০ সালের ভূমিকম্পের পর কলেরা ছড়িয়ে পড়া রোধে ব্যর্থ হয়েছে৷ এছাড়া কিছু শান্তিরক্ষী ‘সেক্স রিং’ পরিচালনা করেছিল বলেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷