জাতিসংঘে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দাবি ট্রাম্পের
২০ আগস্ট ২০২০
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করলেন, জাতিসংঘ আবার ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করুক।
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্পের দাবি, ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে জাতিসংঘকে। শুধু এই মৌখিক দাবিই নয়, অ্যামেরিকার বিদেশ সচিব পম্পেও নিউ ইয়র্কে জাতি সংঘের সদরদফতরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দাবি জানাবেন। ২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের ধারাণা, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে মরিয়া ট্রাম্প এখন ভোটদাতাদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় এ ভাবে সামনে আনছেন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছেন। এ বার ইরানের বিরুদ্ধে আবার নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তুললেন এবং জাতি সংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক দাবিও জানাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ''একে বলে স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম। যা আদৌ বিরল ঘটনা নয়।'' ঘটনা হলো, অ্যামেরিকার বন্ধু দেশগুলিই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করছে না। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স তো বটেই নিরাপত্তা পরিষদের বাকি দুই স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীনও চায় ২০১৫ সালের চুক্তি বহাল থাক। এই চুক্তিতে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সব সদস্য সই করেছিল। তা ছাড়া সই করেছিল জার্মানি।
‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Nasser
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mehr
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/Iranian Presidency
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U.S. Department of Defense/S. Apel
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
10 ছবি1 | 10
এই চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচিতে কাটছাঁট করবে, বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। এই চুক্তিতে একটা স্ন্যাপব্যাক মেকানিজমের কথা বলা হয়েছে। সেটা হলো, তেহরান যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তা হলে আবার তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে অ্যামেরিকার আর কিছু বলার অধিকার নেই। কারণ, দুই বছর আগে তারা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু অ্যামেরিকার দাবি, যেহেতু তারা মূল চুক্তিতে সই করেছিল এবং তারা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য, তাই স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম চালু করার দাবি তারা করতেই পারে।
পম্পেও বলেছেন, ''আমাদের আশা, নিরাপত্তা পরিষদের অন্য প্রস্তাবের মতো ইরানের ক্ষেত্রে এই মেকানিজমও চালু হবে। আমরা মনে করি, বিশ্ব তার দায়িত্ব পালন করবে।'' সপ্তাহখানেক আগে নিরাপত্তা পরিষদে অ্যামেরিকা অনুরোধ করেছিল যে, ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র কেনাবেচা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হোক। কিন্তু সেই অনুরোধ খারিজ হয়ে যায়। তারপরেই স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম চালু করার দাবি তুলল অ্যামেরিকা।