জাতিসংঘে চীনের কড়া সমালোচনায় জার্মানি। পাল্টা আক্রমণ চীনের। তৈরি হলো দুইটি ব্লক।
বিজ্ঞাপন
এক দিকে জার্মানি, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ ৩৯টি দেশ। অন্য দিকে চীন এবং তার সমর্থনকারী কিউবা, পাকিস্তান সহ আফ্রিকার এবং আরবের একাধিক রাষ্ট্র। জাতিসংঘে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ল বিশ্বের দুই অর্ধ। বিতর্কের কেন্দ্রে চীন।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে জার্মানি। সেখানে চীনের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে অনাচার থেকে শুরু করে তিব্বতে চীনের আগ্রাসন, হংকংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি, চীনের মূল ভূখণ্ডে নাগরিকের অধিকার হরণ-- বিবিধ বিষয়ে শি জিনপিংকে আক্রমণ করেছে জার্মানি। তবে চীনকে এই সমস্ত বিষয়ে এই প্রথম আক্রমণ করছে না জার্মানি। মাত্র কয়েক দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আয়োজিত এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্টের সামনেই এই সমস্ত প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়।
মঙ্গলবার জাতিসংঘে জার্মানি যে প্রস্তাব পেশ করেছে তাতে সই করেছে বিশ্বের ৩৯টি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। যার মধ্যে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য আছে। রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ। এর আগে চীনের বিরুদ্ধে এতগুলি দেশ একজোট হয়নি।
‘সিল্ক রোড’ দিয়ে যা করতে চায় চীন
চীনের প্রস্তাবিত সিল্ক রোড বিশ্বায়নের নতুন সূচনা করবে বলে বলছেন বিশেজ্ঞরা৷ কী আছে সেই সিল্ক রোডে?
ছবি: picture-alliance/C. Noronha
বিশ্বায়নের নতুন যুগ
২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সিল্ক রোড স্থাপনের প্রস্তাব করেন৷ এ সময়ের মধ্যে ১৫৭টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে৷ অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, এ প্রকল্প বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে যুক্ত করবে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/L. Xu
পৃথিবীর প্রাচীন বাণিজ্যপথ
প্রায় ২০০ বছর আগেও এ পথে বাণিজ্য করতো ব্যবসায়ীরা৷ প্রস্তাবিত এ সিল্ক রোডটি মূলত হাজার বছর আগের ব্যবসায়িক করিডোরকে আবার জাগিয়ে তুলবে৷
ছবি: Getty Images/L. Zhang
সিল্ক থেকেই ‘সিল্ক রোড’?
সিল্ক রোডটি মূলত অনেকগুলো বাণিজ্য পথের সমষ্টি যা চীন, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার কিছু দেশ ও ইউরোপকে যুক্ত করবে৷ কোথা থেকে এসেছে সিল্ক রোড নামটি? লাভজনক এশিয়ান সিল্ক থেকেই? বিলাস বহুল ও মূল্যবান এই পণ্যটি ইউরোপীয় ও মধ্য এশিয়ার বণিকদের ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করেছিল৷ তাঁরা স্বর্ণ, আইভরি, পশম, কাঁচের জিনিসপত্র, ঘোড়া ইত্যাদির বিনিময়ে চীন থেকে সিল্ক ক্রয় করে নিয়ে যেত বলে জানা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Fabi
সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প
সিল্ক রোড নির্মাণের এ প্রকল্পকে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলে আখ্যা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট৷ এ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে অন্তত চার ট্রিলিয়ন ডলার৷ আর এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত এ রোডটির দৈর্ঘ্য সাত হাজার মাইল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance / All Canada Photos
কী উদ্দেশ্য চীনের?
চীন বলছে, প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ততপরাতা বড়ানো৷ পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের একটি বড় মাধ্যমও হতে পারে এটি, বলছে তারা৷
ছবি: picture-alliance
উদ্বেগ উন্নত দেশগুলোর?
যদিও চীন বলছে, ব্যবসার সম্প্রসারণই সিল্ক রোডের উদ্দেশ্য, উন্নত দেশগুলো যেমন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ করছে এর পিছনে চীনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে৷ যে কারণে গ্রুপ-৭ দেশগুলোর কেউই খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না সিল্ক রোডে প্রকল্পে৷
ছবি: picture-alliance/Ulrich Baumgarten
যোগ দিল ইটালি
উন্নত দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে গ্রুপ-৭ দেশগুলোর মধ্যে ইটালি সিল্ক রোডে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে৷ এই লক্ষ্যে তারা সিল্ক রোড বিষয়ক বিষয়ক আগামী সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen
সতর্ক ইউরোপের অন্য দেশগুলো
ইটালির সিল্ক রোডে যোগদানকে সহজভাবে দেখছে না ইউরোপ৷ এ বিষয়ে ইইউর বাজেট কমিশনার গ্যুন্টার ও্যন্টিংগার বলেন, ইউরোপের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না৷ এদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা বয়ে না আনাই ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Monasse
8 ছবি1 | 8
স্বাভাবিক ভাবেই জার্মানির পদক্ষেপে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় চীন। ফলে জাতিসংঘে নিজেদের সমর্থন আদায়ে নেমে পড়ে তাঁরা। সঙ্গে পেয়ে যায় পাকিস্তান, কিউবা সহ একাধিক আরব এবং আফ্রিকার দেশকে। এরপর তীব্র ভাষায় জার্মানিকে আক্রমণ করেন জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধি। তিনি বলেন, জার্মানি যা প্রস্তাব পেশ করেছে, তা ভিত্তিহীন। চীন তার নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার করে না। জার্মানি যা বলছে, তা একান্তই চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে চীন কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।
উইঘুর মুসলিম, হংকং এবং তাইওয়ান নিয়ে গত কিছু দিন ধরে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় চীন। একের পর এক দেশ এ বিষয়ে চীনের বিরোধিতা করছে। হংকংয়ে বিশেষ আইন বলবৎ করে প্রায় গোটা বিশ্বের বিরাগভাজন হয়েছেন শি জিনপিং। তাইওয়ান নিয়ে দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সম্প্রতি তাইওয়ান দিবস নিয়ে তাইওয়ানের সরকার ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। তা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন। বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। ভারত বরাবর চীনের 'এক চীন' নীতি মেনে চলেছে। ভারত যেন এমন কিছু না করে, যাতে সেই নীতির সঙ্গে আপস করা হয়। ভারতের পত্রপত্রিকা যেন এক চীন নীতি মেনে চলে। ভারত জবাবে জানিয়েছে, দেশের সমস্ত পত্রপত্রিকা স্বাধীন ভাবে কাজ করে। সেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার সরকারের নেই।