বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে জাতিসংঘে দেয়া মিয়ানমারের বক্তব্যে ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের দেয়া তথ্যকে ‘বানোয়াট’ হিসেবে অভিহিত করে দেশটির সরকারকে অপপ্রচার বন্ধের আহবান জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
একটি জঙ্গি গোষ্ঠী ও তার সমর্থকদের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কিয়াও টিনট সোয়ে৷ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এমন দাবি করেন তিনি৷ টিনট সোয়ে বলেন, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসা এবং আরাকান আর্মির গেরিলা বাহিনী মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তাদের কার্যকলাপে বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে৷
সাধারণ অধিবেশনে দেয়া মিয়ানমারের এই বক্তব্যে বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা এপি৷ মিয়ানমারের উপস্থাপন করা তথ্য প্রত্যাখ্যান করে একে ‘দেশটির আরেকটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি৷ মিয়ানমারের সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিচ্ছে, এমন দাবি উড়িয়ে দেন ঐ কর্মকর্তা৷
২০১৭ সালের নভেম্বরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল৷ তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি৷
তবে টিনট সোয়ে দাবি করেছেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের ভালো প্রতিবেশী হতে চায় এবং ‘যাচাইকৃতদের (রোহিঙ্গা) স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক উপায়ে’ ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা৷ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ নিরর্থক বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ তিনি জানান, তার দেশ মনে করে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং তথ্য প্রমাণ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘গুরুতর অভিযোগ’ করছে৷
এদিকে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবি ঢাকার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে জানায়, মিয়ানমার সরকারকে মিথ্যাচার, অপপ্রচার বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশে জাতিসংঘের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো সন্ত্রাসীকে আমাদের মাটি ব্যবহারের সুযোগ দেই না৷ মিয়ানমারের উচিত, তাদের নিজেদের ভুলগুলো দেখা৷’’
এফএস/এসিবি (এপি, ইউএনবি)
বাংলাদেশ-মিয়ানমার: কার সামরিক শক্তি কেমন?
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে কখনও সরাসরি যুদ্ধ না বাধলেও পুশ ব্যাক-পুশ ইন, জেলে আটক, রোহিঙ্গা নির্যাতন ইত্যাদি ইস্যুতে সীমান্তে বিরোধ রয়েছে দুই দেশের৷ গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী দেখুন দেশ দুটির সামরিক শক্তির তথ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/Phyo Hein Kyaw
ব়্যাংকিং
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে মিয়ানমার৷ ১৩৮ দেশের তালিকায় ৩৫ নাম্বারে মিয়ানমার, আর বাংলাদেশ রয়েছে ৪৬ নাম্বারে৷ এই তালিকায় প্রথম পাঁচটি অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপান৷
ছবি: AP
সক্রিয় সেনাসদস্য
মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন গুণ হলেও সেনাসদস্যের সংখ্যায় মিয়ানমার অনেক এগিয়ে৷ মিয়ানমারের সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা মোট চার লাখ ছয় হাজার, বাংলাদেশের রয়েছে মোট এক লাখ ৬০ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য৷ দুই দেশের কোনোটিরই রিজার্ভ সেনাসদস্য নেই৷
ছবি: AP
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা বাজেটের দিক থেকে অবশ্য মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট ৩৮০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও এগিয়ে মিয়ানমার৷ বাংলাদেশের ১৭৭টির বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ২৭৬টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Karadjias
নৌবহর
নৌশক্তিতেও মিয়ানমার বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ মিয়ানমারের রয়েছে ১৮৭টি জাহাজ, বাংলাদেশের রয়েছে ১১২টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
যুদ্ধবিমান
বাংলাদেশের কমব্যাট এয়ারক্রাফট বা যুদ্ধবিমান রয়েছে ৪৪টি, মিয়ানমারের রয়েছে ৫৯টি৷
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৭টি হেলিকপ্টারের বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ৮৬টি হেলিকপ্টার৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Robayo
ট্যাঙ্ক
বাংলাদেশের কমব্যাট ট্যাঙ্ক রয়েছে ২৭৬টি, মিয়ানমারের রয়েছে ৪৩৪টি৷
ছবি: picture-alliance/Newscom/J. Farmer
সাঁজোয়া যান
বাংলাদেশের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ১২৩০টি, মিয়ানমারের ১৩০০টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারিতে অনেক এগিয়ে মিয়ানমার৷ দেশটির স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারির সংখ্যা ১০৮টি, বাংলাদেশের মাত্র ১৮টি৷
ছবি: AP
ফিল্ড আর্টিলারি
ফিল্ড আর্টিলারিতেও মিয়ানমার কয়েকগুণ এগিয়ে আছে৷ মিয়ানমারের ১৬১২টি ফিল্ড আর্টিলারির বিপরীতে বাংলাদেশের রয়েছে কেবল ৪১৯টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: DW/S. Tanha
রকেট প্রজেক্টর
বাংলাদেশের ৭২টি রকেট প্রজেক্টরের বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ৮৪টি রকেট প্রজেক্টর৷
ছবি: imago stock&people
সাবমেরিন
সাবমেরিনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের একটি সাবমেরিনের বদলে বাংলাদেশের রয়েছে দুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Kuleshov
বিমানবাহী জাহাজ
বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনো দেশেরই বিমানবাহী জাহাজ নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Goldman
ডেস্ট্রয়ার
দেশদুটির কোনোটিরই ডেস্ট্রয়ার নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/Zuma Wire/U.S. Navy
ফ্রিগেট
এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ৷ দেশটির রয়েছে আটটি ফ্রিগেট, অন্যদিকে মিয়ানমারের রয়েছে পাঁচটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
করভেট
বাংলাদেশের করভেটের সংখ্যা মিয়ানমারের দ্বিগুণ৷ মিয়ানমারের তিনটির বদলে বাংলাদেশের আছে ছয়টি৷
ছবি: imago/StockTrek Images
উপকূলে পেট্রোল
উপকূলে টহল দেয়ার জন্য মিয়ানমারের রয়েছে ১১৭টি নৌযান৷ বাংলাদেশের রয়েছে ৩০টি৷
ছবি: Shwe Paw Mya Tin/NurPhoto/picture-alliance
বিমানবন্দর
মিয়ানমারে ৬৪টি বিমানবন্দর রয়েছে৷ বাংলাদেশে রয়েছে ১৮টি৷
ছবি: dapd
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
এক্ষেত্রে দুদেশ সমানে সমান৷ দুই দেশেরই তিনটি নৌবন্দর ও টার্মিনাল রয়েছে৷