হলোকাস্টকে অস্বীকার বিশ্বব্যাপী শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকি, জানালেন ইসরায়েল ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত৷ ইহুদি নির্মূলে অনুষ্ঠিত ভানজে সম্মেলনের ৮০ বছর পূর্তিতে এই আহ্বান জানান দুই দেশের রাষ্ট্রদূত৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আজ দুই দেশ হলোকাস্টের অস্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান এবং নিন্দা জানানোর একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করবে৷ ইসরায়েলের জার্মান রাষ্ট্রদূত সুজানে ভাসুম-রাইনের এবং জার্মানির ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জেরেমি ইসাকারাওফ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে যৌথভাবে এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারা বলছেছেন, ‘‘বিশ্বের সব রাষ্ট্রে এবং সমাজে বৈচিত্র, সহাবস্থান, সহনশীলতার প্রতি আশা আর উৎসাহের এক প্রতীক হবে এই প্রস্তাব৷ এই প্রস্তাব সবাইকে স্মরণ করাবে যে হলোকাস্টকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই বরং এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেটা মনে রাখতে হবে৷''
জার্মান পত্রিকা টাগেসস্পিগেল এবং ইসরায়েলের পত্রিকা মারিভে তাদের এই আপিল প্রকাশ হয়েছে৷
১৯৪২ সালে বার্লিনের ভানজে লেকের পাশে একটি ভিলাতে ভানজে সম্মেলন করেছিল নাৎসি নেতারা৷ সেই সম্মেলনে ইউরোপের ১ কোটি ১০ লাখ ইহুদিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারা৷ যদিও এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের আগে থেকেই ইহুদি গণহত্যা শুরু হয়েছিল৷ ৮০ বছর আগের সেই সম্মেলনের কথা স্মরণ করেই আজ এই আহ্বান জানিয়েছেন দুই দেশের রাষ্ট্রদূত৷
জাতিসংঘের এই প্রস্তাবে ইহুদিবিদ্বেষ এর সংজ্ঞা এবং এ বিষয়ে আরো শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া যারা হলোকাস্টকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে৷
জার্মানিকখনোভুলবেনা
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ‘‘নাৎসি আমলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যারা কর্মরত ছিলেন তারাও ওই গণহত্যা এবং অপরাধের অংশীদার৷'' তিনি হলোকাস্টে নিহতদের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘‘তাদের সাথে জার্মানি কি করেছে তা আমরা কখনোই ভুলবো না৷''
১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সৈন্যরা আউশভিৎস নাৎসি শিবির মুক্ত করেন৷ এই দিনটি আন্তর্জাতিক হলোকাস্টে স্মরণ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে৷
জার্মানিতে ইহুদিদের ১৭০০ বছরের ইতিহাসের গল্প
জার্মানিতে ইহুদিদের ১৭০০ বছরের ইতিহাস দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
প্রাচীন বাতি
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন চতুর্থ শতকের এই অয়েল ল্যাম্প৷ইহুদিবাদের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতীকটি পাওয়া গিয়েছিল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ট্রিয়ারে৷দেখে মনে হয় এটি হয়ত উত্তর আফ্রিকার শহর কার্থেজে তৈরি৷
ছবি: Rheinisches Landesmuseum Trier
কানের দুল
মধ্যযুগে জার্মানির রাইনলান্ড অঞ্চলের স্বর্ণকারদের বিশেষ সুখ্যাতি ছিল৷কিছু ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই শিল্পে ইহুদি এবং খ্রিস্টান স্বর্ণকারদের দক্ষতার সাক্ষ্য দেয়৷ছবির এই কানের দুলটি ২০১১ সালে কোলন শহরে পাওয়া যায়৷
ছবি: MiQua. LVR-Jüdisches Museum Köln
মোজেস মেন্ডেলসনের চশমা
ইহুদি দার্শনিক মোজেস মেন্ডেলসনের ব্যবহার করা চশমা এটি৷১৮ শতকে তিনি জ্ঞানের জগতে আলো ছড়িয়েছিলেন, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের মাঝে এক সংলাপেও ভূমিকা রেখেছিলেন৷তার বন্ধু গঠোল্ড এফ্রাইম লেসিং ‘নাথান দ্য ওয়াইজ’ নাটকে মেন্ডেলসনের দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
হাইনরিশ হাইনের স্মৃতিচিহ্ন
লেখক হাইনরিশ হাইনের জন্ম ইহুদি পরিবারে৷ তবে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে খ্রিষ্টান হয়ে যান৷ধর্মান্তরিত হওয়া যে ভুল ছিল তা নিজেই পরে স্বীকার করেছেন৷একবার দুঃখ করে লিখেছিলেন, ‘‘ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা আমাকে সমানভাবে ঘৃণা করে৷ খ্রিষ্টান হওয়ার জন্য আমি অনুতপ্ত৷’’ ওই একটি সিদ্ধান্তের জন্য ইসরায়েলে এখনো হাইনরিশ হাইন এক বিতর্কিত নাম৷
ছবি: Heinrich Heine Institut in Düsseldorf
ইহুদি বীর সেনা
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যে এক লাখ ইহুদি অংশ নিয়েছিলেন, নাবিক মাক্স হালার তাদের একজন৷১৯১৫ সালে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাবমেরিন বহরে যোগ দেন৷সেখানে নাবিক হিসেবে অনন্য ভূমিকার জন্য ‘আয়রন ক্রস’ পুরস্কার দেয়া হয় তাকে৷ প্রথম যুদ্ধের পর ব্যবসা শুরু করেন হালার৷ নাৎসি বাহিনী ইহুদিদের বর্জন করলে নিজের দোকানের জানালায় বীরত্বের জন্য পাওয়া পুরস্কারগুলো সাজিয়ে রাখেন৷ফলে তার দোকানে নাজিদের হামলা হয়নি৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin
মপেড
পূর্ব জার্মানিতে এই মপেড পরিচিত ছিল সায়মন শলবে বা সায়মন সোয়ালো নামে৷ইহুদি পরিবারে জন্ম নেয়া সায়মন এ ধরনের বাহন তৈরির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৫৬ সালে৷নাৎসিরা এই কোম্পানি বাজেয়াপ্ত করায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সায়মন৷
ছবি: AKF Fahrzeugteile GmbH/Janos Bayer
ভার্চুয়াল প্রদর্শনী
‘শেয়ার্ড প্রোজেক্ট’-এর ওয়েবসাইটে শুরু হয়েছে ইহুদিদের এমন ৫৮টি প্রাচীন স্মৃতিচিহ্নের প্রদর্শনী৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে প্রতি সপ্তাহে একটি করে নতুন সামগ্রী দেখানো হবে৷প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ভাবন, পেইন্টিং, স্টাম্বলিং ব্লক থেকে শুরু করে হলোকস্টের শিকার ইহুদিদের নানা রকমের স্মৃতিচিহ্নও থাকবে সেখানে৷