জাতিসংঘ-তালেবান বৈঠকে নারীর অংশগ্রহণ না থাকায় সমালোচনা
২৯ জুন ২০২৪
কাতারের দোহায় তালেবানের সঙ্গে প্রায় ২৫ দেশের প্রতিনিধির দুইদিনব্যাপী বৈঠক রোববার শুরু হচ্ছে৷ জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এই বৈঠকে অংশ নিতে আফগানিস্তানের নারীদের আমন্ত্রণ না জানানোর সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক প্রধান রোজমেরি ডিকার্লো এমন সমালোচনার জবাবে বলেছেন, বৈঠকের প্রতিটি সেশনে নারী অধিকারের বিষয়টি তোলা হবে৷দুই দিনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ডিকার্লো৷
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা নেওয়ার পর তালেবানের সঙ্গেএটিই এমন প্রথম বৈঠক৷ তবে ‘‘এটা স্বীকৃতি (তালেবানকে) দেওয়ার বৈঠক নয়,'' বলে জানিয়েছেন ডিকার্লো৷ ‘‘সেখানে (বৈঠকে) তালেবান নয়, আফগানিস্তান ও সে দেশের জনগণ নিয়ে কথা হবে'', বলেও জানান তিনি৷
আর তালেবান বলছে, তারা অর্থনীতি, ব্যাংক ব্যবস্থা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, মাদক পাচার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী৷
তবে বৈঠকে আফগান নারীদের অংশগ্রহণ না থাকায়জাতিসংঘের সমালোচনা হচ্ছে৷ আফগানিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক কমিশনার শবনম সালেহি বলছেন, দোহা বৈঠকে আফগান নারীদের অংশগ্রহণনা থাকায় বৈঠকটি ‘অসম্পূর্ণ' থেকে যাবে৷
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফয়জুল্লাহ জালাল বলছেন, ‘‘আলোচনা থেকে মানবাধিকার ও নারী অধিকার বাদ দেওয়া জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুন্ন করে৷''
‘অধিকারহীন’ অসহায় আফগান নারীরা
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানের নারীদের নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে তালেবান৷ সম্প্রতি নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে তারা৷
ছবি: AFP
বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ
বোরকা পরা এক নারী কান্দাহারের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন৷ গত বুধবার, এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার৷ এরপর থেকে নারীদের আর শ্রেণিকক্ষে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: AFP
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক নিয়ন্ত্রণ
বিবৃতি দেওয়ার পর কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান৷ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হয়েছে৷ পুরুষ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে গেছেন৷ আর কিছু পুরুষ শিক্ষক ধর্মঘট করছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই
নারীদের বিষয়ে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা অবশ্য আগে থেকেই জারি ছিল৷ যেমন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ এবং প্রবেশপথ নারী পুরুষের জন্য আলাদা করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব’
গত অক্টোবর মাসে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল৷ কিন্তু নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনিশ্চয়তায় তারা৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘‘নারীদের উচ্চশিক্ষার উপর দেওয়া এই নিষেধাজ্ঞা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয়, এমন পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷’’
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
একা একা দূরে নয়
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের এক নির্দেশনা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না৷ যেতে হলে সঙ্গে কোনো পুরুষকে রাখতে হবে৷তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অব ভাইস এক নির্দেশনায় কোনো চালক যাতে কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন সেই কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Sayed Khodaiberdi Sadat/AA/picture alliance
টেলিভিশনে, মুভিতে চেহারা দেখানো যাবে না
টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে নারীদের চেহারা দেখানোও সীমিত করেছে তালেবান৷ এই নির্দেশের ফলে কোনো নারী আর টিভি শো, নাটক বা চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারেন না৷ বিশেষ ক্ষেত্রে অংশ নিলেও নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হয়৷এক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Ariana News
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় অবলুপ্ত
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্ণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷ ওপরের ছবিতে কাবুলের এক বেকারির সামনে দরিদ্র নারীদের মধ্যে রুটি বিতরণের দৃশ্য৷ রুটি দিচ্ছেন এক সাধারণ নাগরিক৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
‘বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জা’
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নারীদের উপর এমন নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে তালেবান৷ তবে তালেবানের এই নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবাদে পিছপা হননি অনেকেই৷ গত নভেম্বরে নিজেরদের এই অবস্থা বিশ্বকে জানাতে এভাবেই প্রতিবাদে শামিল হন নারীরা৷ সেখানে এক নারীকে ইংরেজিতে লেখা ‘আফগান নারীদের ভয়াবহ অবস্থা বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জা’ প্লেকার্ড নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন৷
ছবি: AFP
চেষ্টা করছে কেউ কেউ
তালেবানের শাসনে থাকা আফগানিস্তানের তরুণীরা শুধুমাত্র ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়৷ তবে এই ছবির তরুণীরা ভাগ্যবান৷ তালেবানের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম এমন কিছু প্রদেশে অবশ্য নারীরা নিষেধাজ্ঞা মানছে না৷
ছবি: AFP
9 ছবি1 | 9
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসানও তেমনটা মনে করছেন৷ তিনি বলেন, নারীদের না রাখায় তালেবানের অসদাচরণকে বৈধতা দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে৷ এছাড়া এটা নারী অধিকার ও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের রক্ষক হিসাবে জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলেও মনে করেন হাসান৷
তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তা ডিকার্লো বলেন, তালেবানের সঙ্গে দুই দিনের বৈঠকটা হচ্ছে তাদের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ স্থাপন৷ ‘‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, এটা একটি প্রক্রিয়া৷ আমাদের অনেক সমালোচনা হচ্ছে: কেন নারীরা নেই? কেন আফগান নারীরা নেই? কেন সুশীল সমাজ নেই? এটা আন্তঃআফগান সংলাপ নয়,'' বলেন তিনি৷
‘‘আমি আশা করি, আমরা একদিন ঐ অবস্থানে যেতে পারবো, কিন্তু এখন আমরা সেই অবস্থায় নেই,'' বলেন ডিকার্লো৷
তবে অনেক সমালোচনার পর জাতিসংঘ দোহায় আফগান সুশিল সমাজের সঙ্গেও আলাদা একটি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
প্রত্যাবাসনে অনিশ্চিত আফগান নারীদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ