জাতিসংঘ-তালেবান সম্পর্ক : আফগানিস্তানে আছে, সম্মেলনে নেই
৩ মে ২০২৩
জাতিসংঘ আপাতত আফগানিস্তানে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷ কাতারের দোহায় আফগানিস্তান নিয়ে দুই দিনের সম্মেলন শেষে এই মন্তব্য করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ ২০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি ঐ সম্মেলনে অংশ নেন৷ তালেবানের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রাখা উচিত তা নিয়ে তারা আলোচনা করেন৷
আফগানিস্তানকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷ জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে তালেবান৷ দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান সুহেল শাহিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান আইইএর প্রতিনিধি ছাড়া এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন সফল হয় না, বরং অনেক সময় উলটো হতে পারে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে সম্মেলনের অংশ নই, সেই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত কীভাবে গ্রহণযোগ্য বা বাস্তবায়িত হতে পারে? এটা বৈষম্যমূলক এবং অন্যায়৷’’
আফগানিস্তানে নারীদের ত্রাণ সংস্থায় কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা
01:49
আফগানিস্তানের নারী বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী সিমা সমর মনে করেন তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘শুরুতেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা স্পষ্ট বার্তা দেয়া উচিত ছিল যে, মানবাধিকার লঙ্ঘন গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটা মেনে নেয়া হবে না৷''
ওয়াশিংটনভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো এবং ক্যানাডা, ফ্রান্স ও ইইউতে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করা ওমর সামাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লাখ লাখ দরিদ্র আফগান পরিবারের দুর্দশার কথা ভেবে আফগানিস্তানের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করা উচিত৷'' তালেবানের সঙ্গে এখন যে সম্পর্ক আছে তা পরীক্ষা করে ভবিষ্যতে কীভাবে আরো কার্যকরভাবে আগানো যায় সেই চেষ্টা করারও পরামর্শ দেন তিনি৷
এদিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান৷ কারণ সেটি হলে তাদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করছে তারা৷ এই লক্ষ্যে সম্প্রতি তারা ইসলামিক স্টেট-খোরাসানের নেতাকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে৷ ঐ সংস্থা ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরে হামলার জন্য দায়ী বলে জানিয়েছে তালেবান৷ ঐ হামলায় ১৩ মার্কিন সেনা ও প্রায় ১৭০ জন আফগান নাগরিক প্রাণ হারান৷
শামিল শামস/জেডএইচ
আফগানিস্তানে মাদ্রাসায় নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের পড়াশোনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ সে কারণে এখন মাদ্রাসাগুলোতে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
এক মাদ্রাসায় দ্বিগুন নারী শিক্ষার্থী
কাবুলের উত্তরের এক মাদ্রাসার প্রধান মনসুর মুসলিম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে৷ কান্দাহারের এক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও রয়টার্সকে গতবছর তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুন হওয়ার কথা জানিয়েছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
মেয়েদের স্কুলে যেতে বাধা
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের পড়াশোনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ সে কারণে মাদ্রাসাগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা৷ গত ডিসেম্বর মাসে কান্দাহার ও কাবুলের চারটি মাদ্রাসা পরিদর্শন করার অনুমতি পেয়েছিল রয়টার্স৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
‘স্বপ্ন পূরণ হবে না’
কাবুলের এক মাদ্রাসায় মাস তিনেক আগে ভর্তি হয়েছে ১৭ বছর বয়সি মুরসাল৷ রয়টার্সকে সে বলেছে, ‘‘আমি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে চাই৷ ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা সম্ভব নয়৷ কারণ মাদ্রাসায় পড়ে আপনি শুধু শিক্ষক হতে পারবেন৷’’ মুরসালের মতো আরও কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীও মনে করছে, মাদ্রাসায় যেহেতু শুধু কোরান ও ধর্মীয় বিষয় পড়ানো হয় তাই তাদের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
অন্যান্য বিষয় চালুর পরিকল্পনা
তবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতিন কানি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ অন্যান্য বিষয় চালুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সরকারি এক কমিটি৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
‘ইসলাম আমাদের অধিকার দেয়’
রয়টার্স প্রায় ৩০ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে৷ তাদের মধ্যে কয়েকজন জানিয়েছেন, ইসলামি শিক্ষা তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ তবে তারা অন্যান্য বিষয়ও পড়তে চান৷ কান্দাহারের তালুম-উল-ইসলাম মাদ্রাসার এক নারী শিক্ষক রয়টার্সকে জানান, ধর্ম শিক্ষা তাকে সুখ ও শান্তি দিয়েছে৷ ‘‘ইসলাম আমাদের নারীদের অধিকার দেয়৷ আমি সেসব অধিকার চাই, পশ্চিমা ঘরানার নারী অধিকার চাই না৷’’
ছবি: Ali Khara/REUTERS
ব্যস্ত রাখার জন্য মাদ্রাসায়
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশের নারী অধিকারকর্মী মার্জিয়া নুরজাই জানান, গতবছর তার ভাগ্নির স্কুল শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সেটি সম্ভব না হওয়ায় এখন সে স্থানীয় মাদ্রাসায় যাচ্ছে৷ ‘‘শুধুমাত্র ব্যস্ত রাখার জন্য তাকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে, কারণ সে হতাশ হয়ে পড়ছিল৷’’