ফাতাহ ও হামাস সমর্থিত ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েল অধিকৃত এলাকায় আরও বসতি নির্মাণের ঘোষণা করেছে৷ ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার তোড়জোড় করছে৷
বিজ্ঞাপন
দুই শিবিরের দুই রকম যুক্তি৷ ইসরায়েলের যুক্তি ছিল, পশ্চিম তীরে ফাতাহ, গাজায় হামাসের নেতৃত্বে দুই বিচ্ছিন্ন প্রশাসন থাকায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার কোনো অর্থ নেই৷ এবার ফাতাহ ও হামাস সমর্থিত নতুন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর ইসরায়েলের যুক্তি, হামাস সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না, তাই তাদের অংশগ্রহণে কোনো সরকার বৈধতা পেতে পারে না৷
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস অবশ্য এবার এমন এক মোক্ষম চাল চেলেছেন, যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে৷ অর্থাৎ ফাতাহ ও হামাসের মৌলিক আদর্শগত পার্থক্য কাটানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয় জেনে তিনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক অ-রাজনৈতিক মন্ত্রিসভার পথ বেছে নিয়েছেন, বাইরে থেকে দুই দলই যাকে সমর্থন করবে৷ ফলে হামাসকে নিয়ে আপত্তি অনেকটা কেটে যেতে বাধ্য৷ প্রায় ৭ বছরের বিভাজনের পর পশ্চিম তীর ও গাজার ঐক্য দেখা গেল৷ সোমবার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর এমন এক জাতীয় ঐক্য সরকার আন্তর্জাতিক সমাজের কাছেও গ্রহণযোগত্যা পাচ্ছে৷ এই প্রশাসন চলতি বছরেই নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে৷
আরাফাতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক
বিষ প্রয়োগে নয়, স্বাভাবিক কারণেই ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের তদন্ত সংস্থা৷
ছবি: DW/Y.Teyze
ফরাসি তদন্ত
ফ্রান্সের একটি তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে দেশটির একটি বেতার জানিয়েছে, ‘বার্ধক্য ও সংক্রমণজনিত’ কারণে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসির আরাফাতের৷
ছবি: AP
সুইস তদন্ত থেকে ভিন্ন
ফরাসি এই প্রতিবেদন সুইস বিশেষজ্ঞদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে একেবারে ভিন্ন৷ সুই বিশেষজ্ঞরা গত মাসে জানিয়েছিল, আরাফাতের দেহাবশেষ পরীক্ষায় উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম পাওয়া গেছে৷ বিষ প্রয়োগে আরাফাতকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী সুহা আরাফাত আদালতে মামলা করার পর ফ্রান্স ২০১২ সালের আগস্টে তদন্ত শুরু করে৷ সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা আরাফাতের কাপড়ে এই বিষাক্ত পদার্থের খোঁজ পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরাফাতের মৃত্যু
২০০৪ সালের নভেম্বরে ৭৫ বছর বয়সে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিলিস্তিনের এই কিংবদন্তি নেতা৷ হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু কি কারণে দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এরপর থেকেই তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে৷
ছবি: Reuters
পলোনিয়াম নিয়ে আলোচনার শুরু
লন্ডনে এক সাবেক কেজিবি গোয়েন্দাকে হত্যা করতে ব্যবহৃত হওয়ায় ২০০৬ সালে পলোনিয়াম নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনার ঝড় ওঠে৷ কেজিবি গোয়েন্দা লিটভিনেঙ্কো লন্ডনের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক করার সময় পলোনিয়াম মেশানো চা পান করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: AP
পলোনিয়াম কী?
‘পলোনিয়াম ২১০’ বিশ্বের বিরলতম পদার্থগুলোর একটি৷ ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী দম্পতি মেরি ও পিয়েরে কুরি এই পদার্থটি আবিষ্কার করেন৷ এই বিজ্ঞানীদ্বয়ের দেশ পোল্যান্ডের নাম অনুসারে সেই পদার্থের নাম রাখা হয় পলোনিয়াম৷ ভূপৃষ্ঠের শক্ত আবরণে খুব নিম্ন ঘনত্বে প্রাকৃতিকভাবেই এই পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে৷ তবে পারমাণবিক চুল্লিতেও কৃত্রিমভাবে এটির উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: dpa
বিপদজনক
পলোনিয়াম অত্যন্ত বিপদজনক৷ খুব সামান্য পরিমাণেও যদি মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে৷ কারণ এটির আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান যকৃত, বৃক্ক এবং অস্থিমজ্জার উপর বিষক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক অঙ্গ বিকল করে দেয়৷ ২০০৬ সালে পলোনিয়ামের বিষক্রিয়ায় নিহত লিটভিনেঙ্কোর ক্ষেত্রে বমিবমি ভাব, চুল উঠে যাওয়া, গলা ফোলা এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো ধরা পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হন্তাদের কাছে লোভনীয়
পলোনিয়াম দিয়ে ভালো অস্ত্র বানানো যায়৷ এর আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান ত্বক ভেদ করে না এবং তেজস্ক্রিয় নির্ণয়কারী যন্ত্রেও ধরা পড়ে না৷ ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এটি অন্য দেশে পাচার করা সহজ৷ নিশ্বাসের সাথে অথবা ক্ষতস্থান দিয়ে কারো দেহে পলোনিয়াম ঢুকিয়ে দেওয়া যায়৷ তবে সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো খাবার কিংবা পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুরি দম্পতির মেয়ে’র মৃত্যু
কুরি দম্পতির মেয়ে ইরিন লিউকেমিয়ায় মারা গিয়েছিল বলেই বিশ্ব জানে৷ তবে অনেকে সন্দেহ করেন যে, তাদের পরীক্ষাগার থেকে দুর্ঘটনাবশত কোনোভাবে পলোনিয়াম ইরিনের দেহে প্রবেশ করে থাকতে পারে৷
ছবি: DW/Y.Teyze
8 ছবি1 | 8
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার নতুন ফিলিস্তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানাভাবে রোষ দেখাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবারই পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতিকারীদের জন্য আরও ৩,২০০ বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে ‘গভীর হতাশা' প্রকাশ করেছে৷ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার ডাক দিয়েছে ইইউ৷ পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা ক্যাথরিন অ্যাশটন বলেন, শান্তির উদ্যোগের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত মোটেই সহায়ক হবে না৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও ইসরায়েলের ঘোষণার ফলে হতাশা প্রকাশ করেছেন৷
ফিলিস্তিনি নেত্রী হানান আশরাউয়ি বলেছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পর পিএলও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ দাবি করছে৷ তাছাড়া অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতি নির্মাণের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেরও দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে ফিলিস্তিনিরা৷ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক রাজনৈতিক উপদেষ্টা মার্কিন প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷
নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে সরকারের জোটসঙ্গী কিছু দল দুই রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধানসূত্রে বিশ্বাস করে না৷ খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উরি আরিয়েল বসতিকারিদের দলের নেতা৷ অন্য শরিকরাও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে তাদের কট্টরপন্থি নীতি চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর৷ এই অবস্থায় ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক ক্রমশ আরও শীতল হয়ে পড়ছে৷ ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে চলেছে৷