1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় নির্বাচনে কেন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ তবে কেন পাঠাবে না তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তাদের এসংক্রান্ত চিঠিতে কোন কারণ উল্লেখ নেই৷ ঢাকার নির্বাচন কমিশনও কোনো কারণ জানাতে পারেনি৷

ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar

২০০৮ সালে ইইউ'র প্রায় ৮০০ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে৷ তারা শুধু নির্বাচনের দিনই নয়, নির্বাচনের আগে ও পরে বেশ কিছুদিন বাংলাদেশে থেকে এই পর্যবেক্ষণের কাজ করেন৷ তবে ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসেননি৷ এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউ পর্যবেক্ষকরা আসবেন না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷

‘‘তারা মনে করে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না’’

This browser does not support the audio element.

ইউনিয়নের ব্রাসেলস কার্যালয় থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বেলজিয়ামে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এক চিঠিতে (নোট ভারবাল) জানানো হয়েছে, ‘‘ইইউ বাংলাদেশের এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন নিয়োজিত করবে না৷ কিন্তু দুই সদস্যের একটি ইলেকশন এক্সপার্ট দল পাঠানো হবে৷ যারা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করবেন এবং রিকমেন্ডেশন দেবেন৷'' 

নোট ভারবালে আরো লেখা হয়েছে, ‘‘এই দু'জন বিশেষজ্ঞ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, বিচার বিভাগ-এর সঙ্গে দেখা করতে চান৷ তারা চূড়ান্ত নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন এবং কোনো পাবলিক কমেন্ট করবেন না৷''

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর এক চিঠিতে ইইউকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানোর জবাবে এই নোট ভারবাল ইস্যু করে ইউরোপের ২৮টি দেশের এই ইউনিয়ন৷

এদিকে, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ জানা গেছে, কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তে ইইউ'র অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন তারা৷ সাক্ষাৎকালে ইইউ-এর পক্ষ থেকে আগে পাঠানো চিঠিও ইসিকে সরবরাহ করা হয়েছে৷''

‘‘তাদের ওপর নির্ভর করে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে’’

This browser does not support the audio element.

বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান ও ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিংক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়ে কিছু না জানালেও নির্বাচনের আগে এক্সপার্ট মিশন পাঠানোর কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করি, নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ৷ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ৷ নির্বাচনের আগে ইইউ বিশেষজ্ঞ টিম পাঠাবে৷ তফসিলের পরে নভেম্বরে তারা দু'সপ্তাহ অবস্থান করে ভোটের পরস্থিতি দেখবে৷''

জানা গেছে, বৈঠকের সময়ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি তোলেন৷ তারা তাদের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর আগের অবস্থানের কথাই জানান৷ 

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এই বিষয়ে শনিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবার নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে আমাদের জানিয়েছে৷ তারা কোনো কারণ জানায়নি৷ তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষক আসতে পারেন৷ আমার জানা মতে. ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়নি৷ তবে এবার তারা দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে৷ তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখে একটি প্রতিবেদন দেবেন৷''

‘‘তারা কোনো কারণ জানায়নি’’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘অতীতে আসেনি৷ এবারও আসবে না৷ ফলে এর কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়৷ এমনিতে ইউরোপীয় কেনো কোনো দেশ থেকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষক আসবে বলে মনে হচ্ছে৷''

প্রসঙ্গত, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সময় (২০০৮) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউ'র প্রায় আটশ' প্রতিনিধি এসেছিলেন৷ তার মধ্যে লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম প্রতিনিধি ছিল৷ লং টার্ম প্রতিনিধিরা একমাস এখানে অবস্থান করেছেন৷ লং টার্ম অবজারভাররা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ছিলেন৷ শুধু ঢাকা নয়, তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছেন৷ ২০১৪ সালে তারা আসতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে বিএনপি ও তার সমমনাদের নির্বাচন বয়কটের কারণে আসেনি৷ ওই সময়তো কেউই আসেনি৷ ইউএনডিপিও শেষ পর্যন্ত নিজেদের প্রত্যাহার করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘ইইউ'র পর্যবেক্ষক থাকা মানে হল নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বৈধতা দেয়া৷ এখন এবার কেন তারা আসবে না৷ এখান থেকে তাদের কাছে কী প্রতিবেদন গেছে৷ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, কি হবে না? তারা কি মনে করে সেটাতো আর আমি বলতে পারব না৷ তবে নিশ্চিতভাবে তারা কিছু একটা পেয়েছে যার কারণে তারা পর্যবেক্ষণ করতে আসবেনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘হতে পারে তারা সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়৷ কিন্তু এটাতো ইইউ বা নির্বাচন কমিশন কেউই প্রকাশ করেনি৷ ইইউ'র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বডি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান৷ অনেক দেশ এর সঙ্গে যুক্ত৷ আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে তারা আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী৷'' 

‘‘হতে পারে তারা সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়’’

This browser does not support the audio element.

বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মনে করি বাংলাদেশে এবার একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না মনে করেই তারা এবার পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না৷ অথবা তারা মনে করে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না৷ আর কোনো কারণতো দেখিনা৷ তারা বরাবরই পাঠায়, এবার কেন তারা পাঠাবে না তাতো আমরা জানি না৷''

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না এটা তাদের ব্যাপার৷ আর এই পর্যবেক্ষক পাঠালে দেশ-জাতির কী লাভ হয়! কার কী লাভ হয় তা আমি জানিনা৷ বাংলাদেশ বা পৃথিবীর কোনো দেশে এমন কি কোনো বিধান আছে, যে পর্যবেক্ষক পাঠাতেই হবে?''

এর সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া বা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন৷ তাদের ওপর নির্ভর করে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে৷ তবে আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ