ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রেনের সময়সূচির মাত্র একদিন আগে অনলাইনে টিকিট পাওয়া স্বপ্নের মতো৷ আগে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়ার জন্য ৪ দিন আগে টিকিট কাটতে হতো৷যেদিন সকালে টিকিট ছাড়ে সেদিনও একটু দেরি করলে টিকিট পাওয়া যেতো না৷'
তিনি সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, 'ভ্রমণের সময় টিকিট চেকিংয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন৷'
'বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যান গ্রুপ' নামের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে অনেকেই প্রশংসা করছেন৷ তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধনে অনেকের সমস্যা হচ্ছে৷
শুধু চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনই নয়, আজ দুপুর দেড়টায় ১ মার্চ রাত ৯টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া মহানগর এক্সপ্রেসের ৫৪টি টিকিট অবিক্রিত দেখা গেছে৷
এছাড়া আগামী ২, ৩ ও ৪ মার্চ চট্টগ্রামগামী প্রায় সব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বা কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে৷ অন্যান্য জেলার ট্রেনের টিকিটের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য দেখা যায়৷
যাত্রীরা এখন যাত্রার ৪ দিন আগে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেন৷ তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে টিকিট বিক্রি শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যেতো ফলে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পেতেন না৷
এই সিন্ডিকেট পরে টিকিটগুলো বেশি দামে বিক্রি করতো৷ এতে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে কখনো কখনো প্রকৃত ভাড়ার দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ আদায় করতেন তারা৷ বিভিন্ন উৎসব, ছুটির দিন বিশেষ করে ঈদের সময় এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করে৷
ন্যারোগেজ রেলপথ অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে উঠে গেছে, এখন মেট্রোরেল উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকাবাসী৷ বাংলাদেশের রেল যোগাযোগের আদ্যোপান্ত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Rahmanবাংলাদেশে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে৷ ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা-জগতি রেললাইন স্থাপনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রেল যুগের৷
ছবি: DW/M. Rahmanবাংলাদেশ রেলওয়ের ২৭৮টি লোকোমোটিভ, এক হাজার ৬৫৬টি মিটারগেজ ও ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং আট হাজার ৬৮০টি পণ্যবাহী ওয়াগন আছে৷ তবে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় অধিকাংশের অবস্থাই জরাজীর্ন৷
ছবি: DW/M. Rahmanবাংলাদেশে বর্তমানে ‘ব্রডগেজ’ এবং ‘মিটারগেজ’ এই দুই ধরনের রেলপথ চালু রয়েছে৷ দেশের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে মিটার ও ব্রডগেজ রেলপথ৷ পূর্বাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ রয়েছে৷ আগে ন্যারোগেজ রেলপথ চালু থাকলেও এখন আর তার ব্যবহার নেই৷
ছবি: DW/M. Rahmanবাংলাদেশে দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ আছে৷ তবে অনেকটাই ব্যবহারের উপযোগী নয়৷ দেশের ৪৪ টি জেলার সঙ্গে রেললাইন নেটওয়ার্ক সংযুক্ত৷
ছবি: Samdani Haque Najum১৯৮২ সালের ২ জুন পর্যন্ত একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য নিয়ে রেলওয়ে বোর্ডের মাধ্যমে রেলপথের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো৷
ছবি: DW/M. Rahman১৯৮২ সালের ৩ জুন রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত করে এর কার্যক্রম যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের রেলওয়ে বিভাগের আওতায় নেয়া হয়৷ তখন থেকে এই বিভাগের সচিব রেলওয়ের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করতেন৷ পরে রেলওয়েকে পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে ভাগ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Rahman১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট রেলপথের দৈনন্দিন কার্যক্রম যোগাোযাগ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে মহাপরিচালকের হাতে ন্যস্ত করা হয়৷ তবে নীতি নির্ধারণের জন্য যোগাযোগমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় নয় সদস্যের বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি৷
ছবি: DW/M. Rahman২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করে আদেশ জারি করে৷ বর্তমানে সচিবালয় সংলগ্ন রেলভবনে এই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponirঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব প্রায় ৫০৫ কিলোমিটার, এটিই দেশের সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ রেলরুট৷ এই রুটে ‘দ্রুতযান’ ও ‘একতা এক্সপ্রেস’ চলাচল করে৷
ছবি: bdnews24.comবাংলাদেশ রেলওয়ে কয়ক বছর আগে ই-টিকেটিং চালু করেছে৷ যাত্রীরা অনলাইনে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন৷
ছবি: Sony World Photography Awards/Md Enamul Kabir বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের রেলপথকে সব থেকে সুন্দর রেললাইন হিসেবে অভিহিত করেছে টেলিগ্রাফ৷ শ্রীমঙ্গলের সবুজে ঘেরা পথটুকু আসলেই দৃষ্টিনন্দন৷
ছবি: bdnews24.com/Mustafiz Mamunবাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৫ হাজার ৮৩ জন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে৷ এর বাইরে বিভিন্ন কারিগরি পদে চুক্তিতে কয়েক হাজার মানুষ কাজ করেন৷
ছবি: Samdani Haque Najumমেট্রেরেল চালুর জন্য কয়েক বছর আগে কাজ শুরু হলেও ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো এই রেল সার্ভিস চালু হতে পারে৷ মেট্রেরেল চালু করতে রেলপথ স্থাপনের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে৷
ছবি: Samdani Haque Najumরেলে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বাড়লেও এর সেবার মানে উন্নতি না হওয়ায় লোকসানের মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রেলওয়ে৷ ২০১৭ সালের থেকে ২০১৮ সালে রেলের যাত্রী বেড়েছে এক কোটিরও বেশি, কিন্তু ২০১৭ সালে রেলে এক হাজার ২০০ কোটি এবং ২০১৮ সালে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে৷
ছবি: Samdani Haque Najumদুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি, যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা দেয়া এবং ট্রেনে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ বাংলাদেশের রেলখাতের ১০টি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে প্রতিবেদন দিয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com তবে আগামীকাল বুধবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে ভ্রমণ ও টিকিট কেনার জন্য যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ সঙ্গে রাখতে হবে৷
এভাবে একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন, তবে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই ট্রেনে ভ্রমণ করতে হবে এবং তার সঙ্গে যে ৩ জন থাকবেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক নয়৷
প্রতি মাসে ঢাকা থেকে রাজশাহী ভ্রমণকারী আহমেদ শফিক বলেন, এই উদ্যোগের ফলে কালোবাজারিরা আর টিকিটি নিয়ে তেমন একটা কারসাজি করতে পারবেন না৷
ঢাকা থেকে দিনাজপুরে ট্রেনে যাতায়াত করা মো. সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত টিকিট বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে আর টিকিটি পাওয়া যেত না৷ জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির যে নিয়ম চালু হচ্ছে এতে আশা করি এই সমস্যা আর হবে না৷ এখন কালোবাজারিরা আর তেমন একটা কারসাজি করতে পারবেন না৷ তবে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে৷'
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকাল বুধবার থেকে টিকিট যার ভ্রমণ তার চালু হবে৷ ট্রেনের ভেতরে বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করা হবে৷ কেউ আর অন্যের টিকিট দিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন না৷ সবাইকে ভ্রমণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা জাতীয় জন্ম নিবন্ধন সনদ সঙ্গে রাখতে হবে৷'
এই উদ্যোগের ফলে টিকিট কালোবাজারিরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারবেন জানিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি৷
এনএস/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)