জাতীয় পার্টি-এনসিপি বিরোধের কারণ কী?
৩ জুন ২০২৫
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি আদায়ের পর এবার তাদের ‘টার্গেট’ জাতীয় পার্টি৷ তবে এমন দাবি এনসিপির একাধিক নেতার মুখে আগেও শোনা গেছে৷ ‘শেখ হাসিনা সরকারের দোসর’ সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষেও কথা বলেছেন তারা৷
রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা ও ভাচুরের ঘটনার সঙ্গে সেই উদ্দেশ্য হাসিলের যোগ আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে এনসিপি একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করতে চায়, যে শূন্যতা তাদের পক্ষে যাবে। এর সঙ্গে ভোটের হিসাবের সম্পর্ক আছে বলেও মনে করেন তারা।
রংপুরের ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসাও করছেন তারা৷ সেখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়, ‘মব’ তৈরি করে আর বেশি দূর এগোনো যাবে না।
এদিকে জাতীয় পার্টির দাবি হলো, জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের আন্দোলনে তারা সমর্থন দিয়েছে, তারা ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ছিল না। তাই তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি অযৌক্তিক, অগণতান্ত্রিক।
রংপুরে যা ঘটেছে
২৯ মে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পরে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সেনপাড়ার বাড়ি ‘দ্য স্কাই ভিউ’ -তে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। এর আগে বিকাল ৫টার দিকে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন। ওই দিন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম লালমনিরহাটে রাজনৈতিক সফরে ছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ীমী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘‘সেই জি এম কাদের এখনো বাইরে কীভাবে? সরকারকে ধাক্কা না দিলে কি কাজ হয় না? নাকি প্রত্যেকটা কাজের জন্য ছাত্র-জনতাকে নতুন করে মাঠে নামতে হবে?’’
রাত ৮টার দিকে জাতীয় পার্টিকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে এবং জি এম কাদেরের রংপুরে অবস্থান করার প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি।
রংপুরের টাউন হল থেকে শুরু করা মিছিলটি সেনপাড়া চৌরাস্তা মোড়ে যায়। এরপর জি এম কাদেরের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও একটি মোরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। তখন জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন। হামলার খবর পেয়ে জাতীয় পার্টির সমর্থকরাও রাস্তায় নামেন। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া৷ তবে পুলিশ এসে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কিন্তু সংঘর্ষ থামলেও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন৷ হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে কঠোর প্রতিবাদ, কর্মচূচি পালনের ঘোষণাও দেন তারা৷ জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা কোনো বক্তব্য থাকলে পার্টি অফিসে এসে না বলে জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘‘রংপুরের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে৷ সারা দেশের মতো রংপুরেও প্রশাসন কাজ করছে না৷ প্রশাসনকে, বিশেষ করে পুলিশ, বিজিবি সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করবো, আপনারা দলদাসে পরিণত হইয়েন না৷ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়৷ আপনার যে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন, সেটা কিন্তু রংপুরের মানুষদের ব্যথিত করছে৷’’ এ সময় তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো সন্ত্রাসী দল নই৷ জাতীয় পার্টি একটা সাধারণ গণমানুষের দল৷ আমাদের চেয়ারম্যান সেটাই আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন৷ কোনো ভাংচুর, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্যের মধ্যে জাতীয় পার্টি কোনোদিনই ছিল না, আমরা এখন নাই, ভবিষ্যতেও থাকবো না৷’’ এরপর এক পর্যায়ে তিনি
এনসিপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘‘ এখন মবের যুগ৷ আমরা প্রশাসনকে বলবো, আপনার সরে দাঁড়ান৷ জাতীয় পার্টি কিন্তু দুর্বল না৷ আমরা যে কোনো মব ফেস করতে পারি৷’’
এরপর শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের পায়রা চত্বরে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের’ মহানগর আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও জেলা ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। খবর পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে ছুটে যান সারজিস আলম। রাত ২টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিএনপির কয়েকজন নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনাবাহিনী। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট অবস্থানের কথা জানান। পরদিন রবিবার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠক করে হামলায় জড়িতদের নাম প্রকাশ এবং ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন স্থানীয় ‘বৈষম্যবিরোধী’ ও বিএনপি নেতারা।
২৯ মে জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় মামলা করতে গেলেও শুরুতে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে জাতীয় পার্টির অভিযোগ৷ তবে পরে শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে রংপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা নেয়া হয়। শনিবার ‘বৈষম্য বিরোধী’রাও পাল্টা মামলা করে। রংপুর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ আজ (মঙ্গলবার) ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ আমরা উভয় পক্ষের মামলাই নিয়েছি। তদন্ত চলছে, তবে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।”
পেছনের কথা
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের অন্য মেয়রদের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র , জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাও মেয়রের পদ হারান। আদালতের রায়ে চট্টগ্রামের মেয়র ডা. শাহাদত হোসেন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ইশরাক হোসেন মেয়র পদ ফিরে পাওয়ায় রংপুরেও মোস্তাফিজার রহমানকে মেয়র পদ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তোলেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। গত ২৮ মে মোস্তাাফিজার রহমানকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে নগর ভবনের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অথর্ব’ আখ্যায়িত করে দাবি বাস্তবায়নে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে রংপুর অচল করার হুমকি দেন মোস্তাফিজার। এর প্রতিক্রিয়ায় ওই দিন রাতেই বিক্ষোভ করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ ও এনসিপি। তারা মোস্তাফিজার রহমান ও জাতীয় পার্টির নেতাদের ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। এমন পরিস্থিতে জি এম কাদের বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুর সফরে গেলে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
রংপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি দাবি করেন, “ওইদিন আমরা জি এম কাদেরের রংপুর অবস্থানের প্রতিবাদে মিছিল বের করেছিলাম। আমরা কোনো হামলা করিনি। জাতীয় পার্টির লোকজনই আমাদের ওপর প্রথম হামলা করে।” সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“ আমরা হামলা করিনি এবং হামলার জন্য ক্ষমাও চাইনি। আমরা ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি।”
তিনি আরো দাবি করেন, “জাতীয় পার্টি হলো ফ্যাসিবাদের দোসর, দালাল। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।’’ তার মতে, ‘‘তাদের (জাতীয় পার্টি) রজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। এর আগেও তারা রংপুরে আমাদের নেতা সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘেষণা করেছিল। আমরা রাজপথে তার জবাব দিয়েছি।”
এর জবাবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা কোনো হামলা চালাইনি। তারাই হামলা করেছে। জি এম কাদের সাহেব তার বড়িতে ছিলেন। আর আমরা নেতা-কর্মীরা সেন্ট্রাল রোডে পার্টি অফিসে ছিলাম। তারা ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে, ফেসবুক লাইভে সবাইকে ডেকে হামলা চালায়। আমরা খবর পেয়ে ছুটে আসি।”
“এর আগে আমাদের সহায়তায় সারজিস আলম রংপুরে সমাবেশ করেছিল। আমাদের ধন্যবাদও দেয় তখন। কিন্তু দুইদিন পর আমাদের ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়,” বলেন তিনি।
তার দাবি, “ জাতীয় পার্টি দেশের প্রচলিত আইন মেনে রাজনীতি করছে। আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলাম না। আমাদের নিষিদ্ধ করার দাবি আসবে কেন? সাংবিধানিকভাবেই মেয়র হিসাবে মোস্তাফিজার রহমানের পুনর্বহালের দাবি করছি আমরা।”
সংঘাত যেভাবে শুরু
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে করলেও আমন্ত্রণ পায়নি ১৪ দলের শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বৈষম্যবিরোধীরা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির রাজনীতিও নিষিদ্ধের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত করা হলেও ১৪ দলের অন্য শরিক এবং জাতীয় পার্টির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
শুরুতে সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকার প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ৭ অক্টোবর ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সারজিস লিখেছিলেন, “জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালালদের প্রধান উপদেষ্টা কি’ভাবে আলোচনায় ডাকে?’’ হাসনাত লেখেন, “স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে, আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করবো।”
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার বিজয় নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। তাদের সংলাপে না ডাকার প্রতিবাদে ২ নভেম্বর দলীয় অফিসের সামনে সমাবেশ ডেকেছিল জাতীয় পার্টি। ওই সমাবেশ ডাকার কারণেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয় এবং ভাংচুর করা হয় বলে অনেকের অভিযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় নগরে গিয়ে হামলা ও আগুন দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গেলেও তাদের আগুন নেভাতে বাধা দেয়া হয়। তখন পুলিশও নিস্ক্রিয় ছিল।
এর আগে ১৪ অক্টোবর সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্থানীয় জাতীয় পার্টি। তখন রংপুরে হাসনাত সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর গত মার্চে রোজার সময় হামলা চালিয়ে ঢাকায় জাতীয় পার্টির একাধিক ইফতার মাহফিল পণ্ড করা হয়। ১৯ মার্চ কচুক্ষেতে এবং ৮ মার্চ শ্যামলীতে দুইটি ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা হয়। দুইটি অনুষ্ঠানেই জি এম কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের থাকার কথা ছিল।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন,“ জাতীয় পার্টি হলো শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের দোসর। তারা অবৈধ নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করেছে। স্বৈরশাসনকে পাকাপোক্ত করেছে। তারা সুবিধা নিয়েছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নমই। আওয়ামী লীগের মতো তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারে সরকারকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে জোলোভাবে এই দাবি তুলবো।”
এর জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,“ জাতীয় পার্টি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা কোনোভাবেই স্বৈরাচোরের সহযোগী ছিলাম না। ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের সমর্থন ছিল। ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের এক করা হচ্ছে। আমরা আওয়ামী লীগের ১৪ দলে ছিলাম না। ছাত্র আন্দোলন দমাতে ১৪ দলের যে বৈঠকে কারফিউ জারি করতে বলা হয় ওই বৈঠকে তো আমরা যাইনি। আমরা কোনো পরমার্শও দেইনি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,“ আমরা গণতান্ত্রিক দল, নির্বাচনে আমরা অংশ নেবো। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। প্রফেসর ইউনূস সাহেব নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। তাই নির্বাচনের ঘোষণা এলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো নির্বাচনে যাবো কিনা।”
বিশ্লেষকরা দেখছেন ভিন্ন চোখে
শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন,“ আওয়ামী লীগের পর এখন এনসিপি জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এর তিনটি কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। প্রথমত,যদি সরকার জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত করে, তাহলে এনসিপির শক্তি বাড়বে। এখন বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তখন জাতীয় পার্টিও পারবে না। নির্বাচন নিয়ে যদি বিএনপি মাঠে নামে, আর সরকার যদি নির্বাচন দেয়, তার বিরুদ্ধে এনসিপি ও জামায়াত এক সঙ্গে অবস্থান নিতে পারবে। তারা যদি নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করার আর কোনো উল্লেখযোগ্য দল থাকবে না। একটা সংকট তৈরি হবে। একপাক্ষিক নির্বাচনের প্রশ্ন উঠবে। তখন এনসিপি সুবিধা পাবে।”
“আরেকটি বিষয় হলো, আওয়ামী লীগের সাথে যদি জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়, তখন এনসিপির প্রার্থী পেতে সুবিধা হবে। তারা দুই দল থেকেই কিছু লোক নিতে পারবে নির্বাচনে প্রার্থী করার জন্য। ফলে, তাদের দিকে কিছু ভোটও আসতে পারে,” বলেন তিনি।
জাহেদ উর রহমানের মতে তৃতীয় কারণ হলো,“ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যদি জাতীয় পার্টির প্রতীকে ওই দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে নির্বাচনে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছে তারা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “ জাতীয় পার্টি যে শেখ হাসিনা সরকারের দেসর, তাতে ভুল নেই। তাদেরও নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু সেটা হামলা বা মবের মাধ্যমে নয়, আইনি প্রক্রিয়ায় হতে পারে।”
তার কথা,“ রংপুরের ঘটনার আগেও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে হামলা এবং আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রংপুরের ঘটনায় সেনবাহিনী মবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে সেনাবাহিনীর অবস্থান বোঝা যাচ্ছে। অতীতের মতো বৈষম্যবিরোধীরা আর পারবে না।”
তিনি মনে করেন, “এনসিপির অনেক কাজ বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তারা সমর্থন হারাচ্ছে। ফলে, তাদের দাবিতে সরকার এবার জাতীয় পার্টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।”
“আর জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করলে হয়তো এনসিপির কিছু সুবিধা হতে পারে ভোটের হিসাবে। অথবা তারা আরেকটি ইস্যু তৈরি করে আবার মনযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে। আর রংপুরে যেহেতু জাতীয় পার্টির মূল ঘাঁটি তাই তারা রংপুরকে টার্গেট করেছ্,ে” বলেন তিনি।