আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, জাতীয় প্রয়োজনেই ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা ঘটছে৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সাপ্তাহিক ইউটিউব টক শো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এ এমন মন্তব্য করেন তিনি৷ এ সপ্তাহের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘আওয়ামী লীগ কি বদলে যাচ্ছে?'৷
‘‘সমাজের যে সমস্ত জিনিস আজকে বেরিয়ে এসেছে, আজকে জঙ্গিবাদ যেভাবে দানা বেঁধেছিল, যেটা চরম আকার ধারণ করেছিল, বিশ্বে যেভাবে এটা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন যদি এইভাবে ক্রসফায়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হতো, তাহলে আমার মনে হয়, এটা দমানো সম্ভব ছিল না৷ ঠিক তেমনিভাবে জঙ্গিবাদসহ যে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকতা যেভাবে এইদেশে বিস্তার লাভ করছে এবং তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরেও কিন্তু থামানো যাচ্ছে না৷ সেই ক্ষেত্রে যদি অন-দ্য-স্পট গুলি করা হয়, এটা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে নয়, জাতীয় প্রয়োজনে করা হচ্ছে৷''
একজন মানুষের মৃত্যুর বা বিচারের ভার ‘অন দ্য স্পট গুলি'র উপর ছেড়ে দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘একজন মানুষের কার্যক্রম যদি হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়, একজন মানুষের কার্যক্রম যদি লাখো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়, তাকে (তার) বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই৷''
দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রায় আওয়ামী লীগের আদর্শগত কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান ও দেশে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থাসহ নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসে৷
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব একটি পরিবারে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত কিনা বা এটি দল বা দলের আদর্শের জন্য কতটা উপকারী- এমন প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘‘যে মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে দলের নেতৃত্বে আনা হয়েছিল, সেই থেকে আজ পর্যন্ত যদি বিচার করা হয় তাহলে দেখা যাবে এটাই অপরিহার্য ছিল৷''
‘‘তাঁর (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বেই দল তার ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে, ঐক্যবদ্ধ থাকছে এবং ক্ষমতায় যাচ্ছে৷ মানুষের যে চাওয়া-পাওয়া, বঙ্গবন্ধু যেটা চেয়েছিলেন, আজকে তার সরকারের মাধ্যমে সেটা দেওয়া হচ্ছে৷ পরিবার হিসেবে নয়, যোগ্যতা দিয়েই নেতুত্বে আছেন তিনি,'' বলেন আমির হোসেন আমু৷
আরআর/এসিবি
রাষ্ট্রের দমন কৌশল
বাংলাদেশে যখন যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল কিংবা বিরুদ্ধমত দমন করেছে৷ কখনও আইন, কখনও প্রশাসন, কখনও সহযোগী সংগঠনের পেশি শক্তি ব্যবহার করে ভিন্ন মতের মানুষের উপর চালানো হয়েছে নির্যাতন৷
ছবি: Sony Ramany/AFP
জনতার মিছিলে পুলিশের গুলি
সরকার বিরোধী প্রতিবাদ কিংবা মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা বারবার ঘটেছে বাংলাদেশে৷ এরশাদের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশ গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করে৷ এমন ঘটনা অব্যাহত ছিল গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও৷ ২০০৬ সালে কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে গণবিক্ষোভে ২০ জন নিহত হয়েছে৷
ছবি: DW/H. U. Rashid Swapan
মিছিল-সমাবেশে বাধা
নব্বইয়ের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলো প্রতিপক্ষকে রাস্তায় প্রতিবাদে বাধা দেয়৷ চলে পুলিশি হামলা, নির্যাতনের ঘটনা৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পরিস্থিতি আরো প্রকট হয়েছে৷ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয় নাগরিক সমাজের প্রতিবাদেও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটছে৷
ছবি: bdnews24.com
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসেবে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন ৩৬১ জন৷ গত বছর নিহত হয়েছেন ৪২১ জন, যা আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি৷ এসব ক্রসফায়ারের ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাসানোর অভিযোগ আছে৷
ছবি: bdnews24.com
গুম কিংবা নিখোঁজ
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের (এফআইএইচআর) হিসাবে ২০০৯-১৮ পর্যন্ত গুম হয়েছেন ৫০৭ জন৷ এর মধ্যে ৬২ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ১৫৯ জনের হদিস মেলেনি৷ গত ১০ বছরে নিজেদের ৩০০ এর বেশি নেতাকর্মী গুম হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose
মামলার হয়রানি
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ৪,৪২৯টি মামলা করা হয়েছে৷ যাতে চার লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫ জনকে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি৷ সেখানে এমনকি মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের উপর ককটেল ছুড়ে মারার মামলা হয়েছে৷ ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে আশি বছরের প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধেও৷
ছবি: bdnews24.com
পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে বরাবরই ব্যবহার করে আসছে বিপক্ষ বা ভিন্নমত দমনে৷ সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে এমন পেশিশক্তির ব্যবহার আরও প্রকট হয়েছে৷ ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের নির্যাতনে বুয়েটে আবরারের মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে৷ ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: bdnews24.com
নিষ্পেষণমূলক আইন
ভিন্নমত দমনে আশ্রয় নেয়া হয় আইনেরও৷ ২০১৫ সালে করা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷ গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক, ব্লগার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়েছে৷ সেটি বাতিল করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হলে সেখানেও একই ধরনের বিভিন্ন ধারা রাখা হয়৷ এই আইনে আটক হয়ে জেলখানায় বিনা বিচারে মারা যান লেখক মুশতাক আহমেদ৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
গণমাধ্যমের উপর চাপ
বাংলাদেশে এখন বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম থাকলেও তাদের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ বিভিন্ন সময়ে টিভি চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয় সরকার৷ মালিকানা, বিজ্ঞাপন বন্ধে চাপ দেয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে গণমাধ্যমগুলো নিজেরাই এখন সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ
২০১৯ সালের ২৯ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, ঐ বছরের শেষ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের এখন সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হচ্ছে রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে যে কোনো ওয়েবসাইটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এটি বড় অর্জন৷’’
ছবি: picture-alliance/chromorange/C. Ohde
ফোনে আড়িপাতা
সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিভিন্ন মানুষের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটছে৷ ইউটিউব বা গণমাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, লঙ্ঘন করা হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা৷
ছবি: imago/avanti
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যা বলছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৯ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না৷ সভা-সমাবেশ ও বাকস্বাধীতার ওপর নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বিরোধী দলসহ নাগরিকদের প্রতিবাদ ও সংবাদ মাধ্যমের ওপর হামলা, মামলা এবং বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কথা বলা হয়েছে৷