জাতীয় সংগীতের অসম্মান নিয়ে বর্তমানে দুই বাংলার সঙ্গীত জগত সরগরম৷ এই বিতর্কে কতটুকু তথ্য আর কতটুকু নিপাট গুজব?
বিজ্ঞাপন
জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা নিয়ে বর্তমানে দুই বাংলার সঙ্গীত জগত সরগরম৷ শুধু সঙ্গীত জগৎ বললে ভুল বলা হবে, কারণ সাম্প্রতিক একটি বিতর্কের আঁচ এখন জায়গা করে নিয়েছে বাঙালির দৈনন্দিন আলোচনায়৷ পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্কে সোশাল মিডিয়া রীতিমত জর্জরিত৷
কিন্তুকোথাথেকেঘটনারসূত্রপাত?
ভারতের জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো জি বাংলা চ্যানেলের ‘সা রে গা মা পা'৷ সেখানে প্রতি বছরই অংশগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশসহ অন্য অঞ্চল থেকে আসা বাংলাভাষী উঠতি গায়ক-গায়িকা৷ এই অনুষ্ঠানের হাত ধরেই বাঙালি সঙ্গীতপ্রেমীদের নজরে আসেন বাংলাদেশের তরুণ কন্ঠশিল্পী মইনুল আহসান নোবেল৷ দুই বাংলাতেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি৷ প্রতিযোগিতা শেষে নোবেল পান তৃতীয় স্থান এবং তার কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে করে বসেন বেফাঁস মন্তব্য৷
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...
দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত কোনো গানকে রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে জাতীয় সংগীত বলা হয়৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আছে সেই দেশের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর গৌরবগাঁথা৷ আমাদের জাতীয় সংগীতেরও আছে বর্ণাঢ্য অধ্যায়৷
ছবি: Reuters
ইতিহাসের পথ ধরে
এক ডাক হরকরার কণ্ঠে ‘আমি কোথায় পাবো তারে‘ গানটি শুনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ ফকির লালন সাঁইয়ের ভাবশিষ্য গগন হরকরার গানটি মনে ধরে তাঁর৷ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ‘আমার সোনার বাংলা‘সহ বাউল সুরে কিছু গান লেখেন কবি৷ সে বছর ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউনহলে গানটি প্রথম গাওয়া হয়৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের আদবকেতা
১৯৭৮ সালে জাতীয় সংগীত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালা মেনে সঠিক উচ্চারণে ও শুদ্ধ সুরে গাইতে হবে জাতীয় সংগীত৷ গাওয়ার সময় দেখাতে হবে যথাযথ সম্মান৷ জাতীয় সংগীত বাজানো ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময়, সমবেত সকলকে জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় সংগীত গাইতে হবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এর পুরোটা সব অনুষ্ঠানে গাওয়ার নিয়ম নেই। জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংগীত বাজাতে হবে।
ছবি: DW/M. Mamun
অবিনশ্বর কবিগুরু
বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একমাত্র কবি, যিনি বাংলাদেশ আর ভারত-দুটি দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন৷ ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘জনগণমন অধিনায়ক‘-গানটি মূলত ব্রহ্মসঙ্গীত৷ ১৯৩৭ সালের ২৮ অক্টোবর এটিকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস৷ স্বাধীনতার পর গানের প্রথম স্তবকটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সম্মাননা পায়। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতের সুর করেছেন রবীন্দ্রনাথ৷ তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি লিখেছেন আনন্দ সামারাকুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানব পতাকা
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে ২৭ হাজার ১১৭ জন। সবার হাতে একখণ্ড বাংলাদেশ। চারদিকে সবুজ আর মাঝে লাল। লাল-সবুজ মিলেমিশে রূপ নিল একটি জাতীয় পতাকায়। এদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করা হয়৷ ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি স্বীকৃতি দেয় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস৷ ঠিক পরের বছর ভারতের চেন্নাইতে ৪৩ হাজার ৮৩০ জন মিলে তৈরি করে মানব পতাকা৷
ছবি: Reuters
মুখে মুখে জাতীয় কবি
জাতীয় কবির নাম বললে, উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলাম৷ কিন্তু সরকারের দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তাঁর নাম কোথাও নেই। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে তাঁকেই জাতীয় কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়৷ তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কোথাও মেলেনি সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো দলিল৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
বিশ্বের প্রাচীন জাতীয় সংগীত
ইতিহাস বলছে, নেদারল্যান্ডের জাতীয় সংগীতই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাতীয় সংগীত৷ ‘ভিলহেলমাস ফান নাসাওয়ে’ শিরোনামের এই গানটি ‘ভিলহেলমাস’ নামেই বেশি পরিচিত৷ যার অর্থ ‘উইলিয়াম’৷ ১৫৭২ সাল থেকে ডাচদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এটি৷ ১৯৩২ সাল থেকে এই গানটিকে দেশটির জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়া হয়৷ এর আগে এটি ডাচ জাগরণের প্রতীক৷
ছবি: PATRIK STOLLARZ/AFP/Getty Images
বৈচিত্র্যময় জাতীয় সংগীত
উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ৷ এটিতে স্তবক সংখ্যা ১৫৮৷ কলম্বিয়া, সেনেগাল, বেলজিয়াম, ইকুয়েডর-এই দেশগুলোর জাতীয় সংগীত রচয়িতা তাঁদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতি৷ দুনিয়ার সবচেয়ে পুরনো শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় জাপানের জাতীয় সংগীতে৷ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের জাতীয় সংগীতে নেই কোনো শব্দ৷ শুধু আছে তূর্যনিনাদ৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
7 ছবি1 | 7
একটি সাক্ষাৎকার চলাকালীন নোবেল প্রিন্স মাহমুদের ‘আমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা' গানটি করেন৷ সেই গান বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রিন্স মাহমুদ স্যারের গানটা নিয়ে আমি একটা কথা বলবো। তা নিয়ে হয়তো অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। হয়তো খারাপ মনে করতে পারে। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মত একদমই। আমি মনে করি যে, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা' আমাদের দেশটাকে যতটা বুঝিয়ে উঠতে পারে, তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি সফলভাবে সেটা করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের এই গানটা। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যেটা আছে সেটা হয়তো রূপক অর্থে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু এটা একদম সোজাসুজিভাবে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আবেগের জায়গাটি তুলে ধরে৷''
নোবেলের বক্তব্যকে দুই বাংলার অনেকেই মনে করেন ‘আমার সোনার বাংলা'র রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সরাসরি অপমান হিসাবে৷ ভারতের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী কন্ঠশিল্পী ইমন চক্রবর্তী এবিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‘‘বলতে খারাপ লাগছে, এনাকে সামনে পেলে চাবকাতাম৷''
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ ২৪-এ প্রকাশিত হয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফের একটি মতামত৷ সেখানে প্রত্যক্ষভাবে নোবেলের মন্তব্যের কথা তিনি না তুললেও বিস্তারিত বর্ণনা করে তুলে ধরেন কেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ‘আমার সোনার বাংলা' গানটি অতুলনীয়৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রেম ভালবাসার অসাধারণ সাবলাইম-টি এই গানটিকে পৃথিবীর অন্য সব দেশের জাতীয় সঙ্গীত থেকে আলাদা করেছে। এটি তুলনাহীন একটি জাতীয় সঙ্গীত। এই গানটি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সত্যিকার স্পিরিট ধারণ করে।''
এখানে লক্ষণীয়, দুই দেশে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ার মূলে দু'টি ভিন্ন আবেগ৷ একদিকে রয়েছে নোবেলের বক্তব্যে নিপাট রবীন্দ্রনাথ-বিরোধিতা খুঁজে পাওয়া৷ অন্যদিকে রয়েছে একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি অশ্রদ্ধার উদাহরণ৷ এই চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে দুই জায়গার সংবাদমাধ্যমে বিষয়টির উপস্থাপনের ধারাও৷
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘এই সময়' এই বিতর্ক ঘিরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘রবীন্দ্রনাথকে চূড়ান্ত অপমান, নোবেলের ঔদ্ধত্যে চাবকাতে চান ইমন!' আনন্দবাজার পত্রিকায় সহজ শিরোনাম ‘বিতর্কে নোবেল', অন্যদিকে নিউজ১৮ এর শিরোনাম, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে অপমান'৷
বাংলাদেশের সংবাদপত্র যুগান্তর খবরটি প্রকাশ করে ‘জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে মন্তব্য করে নতুন বিতর্কে নোবেল' শিরোনামে৷ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও দেখা যায় এই ধারা৷
জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা কয়েকটি দেশ
লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি পরিবর্তন – এ সব নানা কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে৷ সম্প্রতি জার্মানিতেও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে৷
ছবি: Reuters/D. Gray
অস্ট্রেলিয়া
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর ২০২১ এর ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা তাঁদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইবেন৷ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে অভিহিত করা হবে না৷ আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন৷
ছবি: Reuters/D. Gray
জার্মানি
দেশটির সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে আরও বেশি লিঙ্গ সমতা আনার প্রস্তাব করেছেন৷ তিনি গানের যে অংশে ‘ফাটারলান্ড’ অর্থাৎ ‘পিতৃভূমি’ বলা হচ্ছে, সেখানে ‘হাইমাট’ অর্থাৎ ‘জন্মভূমি’ লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে মনে করছেন, জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
অস্ট্রিয়া
২০১২ সালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’-র জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়৷ উদ্দেশ্য লিঙ্গ সমতা আনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D.l Karmann
ক্যানাডা
উত্তর অ্যামেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে৷ সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-র জায়গায় ‘আমরা সবাই’ লেখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/K. Djansezian
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়৷ তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল৷ তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়৷ তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না৷ তালেবানের পতনের পর ২০০২ সালে পুরনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটির কথা উঠলেই গণহত্যার কথা মনে পড়ে৷ ১৯৯৪ সালে মাত্র একশ দিনের মধ্যে সে দেশে পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত বেছে নেয়৷
ছবি: Carl Court/AFP/Getty Images
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দু’টি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে৷ আফ্রিকান্স ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত৷ তবে আফ্রিকান্স ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে৷ নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/Mike Theiler
রাশিয়া
ভ্লাদিমির পুটিন ২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন৷ তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷ ১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, কথাবিহীন গান তাঁদের নাকি উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/I. Naymuishin
9 ছবি1 | 9
কিন্তু দুই দেশের সাধারণ জনতার সোশাল মিডিয়ার আচরণ খেয়াল করলে দেখা যাবে একই ধারা৷ রবীন্দ্রনাথ না জাতীয় সঙ্গীত- কার অপমান কাকে বেশি আহত করেছে, তর্কে মেতেছেন তারা৷
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ফেসবুক মন্তব্যের বক্তব্যও বিভক্ত৷ কেউ কেউ নোবেলের বক্তব্যের প্রতি সহমত পোষণ করে দাবি জানান জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করার৷ অন্যদিকে, ‘আমার সোনার বাংলা' গানটিকে বাংলাদেশের জাতিসত্ত্বার অবিভেদ্য অঙ্গ মনে করেন বেশ কিছু তরুণ৷
আইনকীবলছে?
নোবেল ও জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরে পক্ষ-বিপক্ষ সব রকম মতামতই উঠে আসছে৷ কিন্তু কোথাও আলোচিত হচ্ছে না জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা আসলে কী, এবং কোনো ব্যক্তি এই দায়ে অভিযুক্ত হলে ঠিক কী করণীয় রাষ্ট্র বা একজন সাধারণ নাগরিকের৷ কেউ আলোচনা করছেন না, আসলেই কোনো নাগরিকের বা রাষ্ট্রের অধিকার আছে কি না অপমানকারীকে ‘চাবকানোর', বা জাতীয় সঙ্গীতকে অসম্মান করার দায়ে অভিযুক্ত করার৷
বাংলাদেশের সংবিধানের ‘জাতীয় সঙ্গীত নিয়মাবলী, ১৯৭৮' অনুচ্ছেদে এবিষয়ে বিস্তারিত বলা রয়েছে৷ জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননাকে সংবিধানে দেখা হয় শুধু তা গাওয়ার সময়ে মানুষের ব্যবহারের বিচারে৷ যখন তা গাওয়া হচ্ছে না, তখন পরোক্ষভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার দায়ে কাউকে অভিযুক্ত করতে পারেন কি না, তা নিয়ে কিছু বলা নেই৷ জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনেরও কোনো বিধান সেখানে নেই৷ ভারতের সংবিধানেও রয়েছে একই নিয়মাবলী৷
তাই এটা পরিষ্কার যে, ভারতের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ বা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা'র অবমাননার ব্যাপ্তিকে আইনের নিক্তিতে মাপা যাবেনা৷ ফলে, গোটা বিষয়টাই বর্তমানে সোশাল মিডিয়ায় মতামতের লড়াইতেই রয়েছে সীমাবদ্ধ, যাকে গণমাধ্যমের ভাষায় অনেকে বলেন ‘মিডিয়া ট্রায়াল' বা গণমাধ্যমে বিচার হিসাবে৷
নানা রকমের গুজব, ‘মিম' ইত্যাদিতে সোশাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যম ছেয়ে গেলেও পুরো আলোচনা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে দুই বাংলাতেই জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় কবিকে অপমান করার আইনি বিধানের অভাবের প্রাসঙ্গিকতা৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷