লাখো কণ্ঠে গাওয়া জাতীয় সংগীতের রেকর্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ৷ বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে এই স্বীকৃতির কথা জানানো হয়৷ গত ২৬শে মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় সংগীতটি গাওয়া হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
মহান বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর৷ আর ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস৷ বিজয় দিবসে বিশ্বের সর্ববৃহত্ মানব পতাকা – জাতীয় পতাকা তৈরি করে একবার, আর স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...' গানটি গেয়ে আরেকবার বিশ্ব রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ৷
২৬শে মার্চ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহায়তায় লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাওয়ার ১৩ দিন পর এই স্বীকৃতি পাওয়া গেল৷ ঐ দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢোকার সময় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক গণনা অনুসারে লোক হয়েছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন৷ এতেই গত বছরের ৬ই মে ভারতে সাহারা গ্রুপের আয়োজনে এক লাখ ২২ হাজার লোকের একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার রেকর্ডটি ভেঙে নতুন বিশ্বরেকর্ড হয়৷
লাখো কণ্ঠে ‘সোনার বাংলা’
বুধবার স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার প্যারেড ময়দানে লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘সোনার বাংলা’৷ আড়াই লাখের বেশি মানুষ সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ সম্পন্ন করেন৷ বিশাল এই আয়োজনের কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘আমার সোনার বাংলা’
স্বাধীনতা দিবসে প্যারেড ময়দানে আড়াই লাখের বেশি মানুষ একত্রে গেয়ে ওঠেন ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি৷’’ জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, ২৫৪,৬৮১ জন সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ভোর থেকেই প্যারেড ময়দানে হাজির হতে থাকেন অগুনতি মানুষ৷ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন এই আয়োজনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘বাঙালি ইতিহাস সৃষ্টি করে’
জাতীয় সংগীতের রেকর্ড গড়ার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘বাঙালি সবসময় ইতিহাস সৃষ্টি করে৷ বাঙালি আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহায়তা
‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ কর্মসূচি নিয়ে কর্মতৎপরতা শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে৷ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ৷ ছবিতে প্যারেড ময়দানে জাতীয় সংগীত গাইছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘খুব ভালো লাগছে’
জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী রাজীব রুদ্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ক্লাসের বন্ধুরা একসঙ্গে এখানে এসেছি৷ খুব ভালো লাগছে, আমরাও সবার সঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়েছি৷ বিশ্ব রেকর্ডের অংশ হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Reuters
‘স্কুলের ছাত্র মনে হচ্ছে’
অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় উত্তরার ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ্ব হাজী মতিন বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ জাতীয় সংগীত গাইলাম৷ নিজেকে আজ স্কুলের ছাত্র মনে হচ্ছে৷ ভালো লাগছে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
অনলাইন আয়োজন
শুধু ঢাকার প্যারেড ময়দান নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনে অংশ নেন৷ আলাদা ওয়েবসাইট, ফেসবুকে ইভেন্ট এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়৷
ছবি: facebook.com
দ্বিতীয় উদ্যোগ
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ডিসেম্বরে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটা ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়নি৷ এবার সরকারই উদ্যোগ নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর আয়োজন করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
রেকর্ড গড়ার জন্য যথেষ্ট
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ২০১৩ সালে রেকর্ড গড়ে ভারতের সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার৷ গিনেস বুকে স্থান করে নেয়া সেই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল সোয়া লাখের মতো মানুষ৷ সেই তুলনায় ঢাকায় বুধবারের আয়োজনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দ্বিগুনের বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
সিদ্ধান্ত জানাবে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ
লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাওয়ার এই আয়োজন রেকর্ড গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণে সক্ষম হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেছে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ৷ তাদের স্বীকৃতির পর এই আয়োজন আন্তর্জাতিক রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
কিন্তু গণনার বাইরেও আরো অনেক মানুষ এই জাতীয় সংগীত গাওয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেন সেদিন৷ প্যারেড গ্রাউন্ড এবং আশপাশ এলাকায় ৩ লাখ লোক সমবেত হয়েছিলেন বলে জানান আয়োজকরা৷ এছাড়া প্যারেড গ্রাউন্ডে গিয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সুর মেলান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও৷
এই লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের জন্য চালানো হয় ব্যাপক প্রচারণা৷ শিরোনাম ছিল ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা'৷ এর জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে অর্থ নেয়ায় বিতর্কও দেখা দেয়৷ পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেয়া হয়৷ এই অনুষ্ঠানে অর্থ খরচের স্বচ্ছতা নিয়েও চলছে বিতর্ক৷ অভিযোগ আছে আয়োজক সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাঁর নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই অধিকাংশ কাজ করে ব্যবসা নিয়েছেন৷ এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালেখিও হচ্ছে৷
৪৪তম স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা শুধু রেকর্ডের জন্য নয়, স্বাধীনতার চেতনাকে উজ্জ্বীবীত এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করাও ছিল উদ্দেশ্য৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘এই আয়োজনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য জাতীয় ঐক্য৷'
এদিকে এই অনুষ্ঠানে যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজন ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এটা বাংলাদেশের আরেকটি অর্জন৷ লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বাংলাদেশ যে রেকর্ড গড়লো, তা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করবে৷''