1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর : ৭০ অনুচ্ছেদে বলীয়ান ‘এক দলের শাসন’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ এপ্রিল ২০২৩

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল৷ তাই এই ৭ এপ্রিলে পূর্ণ হলো সংসদের ৫০ বছর ৷

Bangladesch | Große Gebäude in Dhaka | Parlamentsgebäude
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ৷ ছবি: Mortuza Rashed/DW

সংসদ সদস্য এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, জাতীয় সংসদ এখন আর রাজনীতিকদের হাতে নেই, ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে৷ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা খর্ব করেছে, যা একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷

জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন

জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীতে  বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার৷ শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন৷

রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, ‘‘ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন৷ আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ-সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না৷ সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত করা উচিত৷''

‘‘গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা নয়৷ গণতন্ত্রহীন অবস্থায় যে উন্নয়ন হয় তা কখনো সার্বজনীন হতে পারে না৷ চর্চার মধ্য দিয়ে  গণতন্ত্র বিকশিত ও শক্তিশালী হয়,'' বলেন রাষ্ট্রপতি৷ তার কথা, ‘‘দেশের উন্নয়ন স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত করতে হবে৷''

যতদিন ৭০ অনুচ্ছেদ থাকবে, ততদিন সংসদ সদস্যরা স্বাধীন নন: শামীম হায়দার পাটোয়ারী

This browser does not support the audio element.

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেছেন,  ‘‘সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে৷’’

তিনি সংসদে তার উত্থাপিত প্রস্তাবে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা-আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভুমিকা রাখবে৷ গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে৷’’

সংসদ নিয়ে দুই দলের ভাবনা

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এবং নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মাথায় সংবিধান হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে- যে সংসদে ১৫৬টি আইন পাস হয়েছে৷ তারপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তো দীর্ঘদিন সংসদীয় রাজনীতি আলোর মুখ দেখেছি৷ দীর্ঘদিন স্বৈরাচার, সামরিক স্বৈরাচার ছিল৷ ৯০-এর গণ অভ্যুত্থানের পর আমরা সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে আসি৷ তারপরও সংসদ বাধাগ্রস্ত হয়েছে; কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিকে হত্যা করতে পারে নাই৷’’

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো স্বাধীনতা৷ আর গত ১৫ বছর সংসদীয় রাজনীতির নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে গেছে৷ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এর কৃতিত্ব শেখ হাসিনার৷’’

তবে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকারী এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘‘সংসদের ৫০ বছর পূর্তিতে সংসদে কেন বিরোধী দল নাই৷ এটা খুবই দুঃখের বিষয়৷ এটা একটি এক দলীয় সংসদ৷ সংসদকে কার্যকর করতে হলে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকতে হবে৷ যারা নির্বাচিত. তারাই সংসদে থাকবেন, অনির্বাচিতরা নয়৷’’

কেমন আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র?

59:30

This browser does not support the video element.

তার কথা, ‘‘সংসদে দয়িত্বশীল যারা ৫০ বছর পূর্তিতে বক্তৃতা দিয়েছেন, তারা বাস্তবতার ধারেকাছে নাই৷ তারা সত্য বলছেন না৷ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সংসদকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে বাকশালকে বিদায় করেছি তেমনি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো, সংসদকে কার্যকর করবো৷’’

৭০ অনুচ্ছেদের ভূমিকা

জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মনে করেন, ‘‘সংবিধানে যতদিন ৭০ অনুচ্ছেদ থাকবে, ততদিন সংসদ সদস্যরা স্বাধীন নন৷ তাদের কোনো বাকস্বাধীনতা নাই৷ কারণ সংসদ সদস্যরা এই বিধির কারণে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না, গেলে সংসদ সদস্য পদ বতিল হয়ে যায়৷ ফলে কোনো আইন খারাপ হলেও সমর্থন দিতে হয়৷'' তার কথা, ‘‘এই অনুচ্ছেদের কারণে সংসদীয় ব্যবস্থা একদলীয় শাসনের দিকে চলে যাচ্ছে৷ একদলীয় আবার একজনের শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘সংসদে জবাবহিতার জায়গা তৈরি হয়নি৷ মন্ত্রী এমনকি প্রধান মন্ত্রীও সংসদে জবাবদিহি করবেন৷ কিন্তু তা হয়নি৷ সংসদীয় কমিটিগুলো কাউকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে না৷ আর দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র হয় না৷’’

সংসদে দয়িত্বশীল যারা ৫০ বছর পূর্তিতে বক্তৃতা দিয়েছেন, তারা বাস্তবতার ধারেকাছে নাই: হারুনুর রশিদ

This browser does not support the audio element.

ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘জাতীয় সংসদ এখন ব্যাবসায়ীদের দখলে চলে গেছে৷ ৯০-এর পর থেকে এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে৷ ৬৫-৭০ ভাগ এমপি এখন ব্যবসায়ী৷ আগে সংসদে প্রাধান্য থাকতো আইনজীবী ও রাজনীতিবিদদের৷ ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য ছিল৷’’

তার কথা, ‘‘ব্যবসায়ীরা শুধু বাংলাদেশে নয়, সব দেশেই সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য কাজ করেন৷ তাই এখনকার সংসদ সদস্যরা জনগণের জন্য নয়, মুনাফার জন্য কাজ করেন৷ এর পরিণতি শেষ পর্যন্ত ভালো হয় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সংসদ সদস্যদের মূল কাজ আইন প্রণয়ন করা৷ কিন্তু এখন তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা নিয়ে কাজ করেন৷ ফলে এটা ব্যবসায়ী-বান্ধব সংসদে পরিণত হয়েছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ভোটের অধিকার সংকুচিত হয়েছে৷ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়ায়নি৷ গণতান্ত্রিক মানসিককতার পরিবর্তে ফিউডাল মানসিকতা প্রাধান্য বিস্তার করছে৷ তাই সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর যেতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ