1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবিতে অস্বস্তিতে বিজেপি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৭ ডিসেম্বর ২০২০

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’ বদলে দিতে হবে৷ দলের প্রবীণ নেতার এমন প্রস্তাবে অস্বস্তিতে বঙ্গ জয়ে মরিয়া বিজেপি৷ এই বিতর্ককে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন' বদলে দিতে হবে৷ দলের প্রবীণ নেতার এমন প্রস্তাবে অস্বস্তিতে বঙ্গ জয়ে মরিয়া বিজেপি৷ এই বিতর্ককে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷
ছবি: Ashish Vaishnav/Zuma/imago images

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপি নেতৃত্বের মুখে ইদানীং ঘনঘন শোনা যাচ্ছে বাংলার মনীষীদের নাম৷ শুধু স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নন, শোনা গিয়েছে ঋষি অরবিন্দ ঘোষ থেকে বিস্মৃতপ্রায় কবি মনোমোহন বসুর নাম৷ এর মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতিতে ‘বহিরাগত’ তকমা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে বিজেপি, এমনই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷ এরই মধ্যে দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন সুব্রমনিয়ম স্বামী৷ তিনি বলেছেন, জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’ বদলে ফেলা হোক৷ তার বদলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গীতকে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷

এই গান নিয়ে ঠিক কোথায় আপত্তি স্বামীর? প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত সিন্ধু শব্দটির কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই৷ এ ছাড়া এই গানে এমন কয়েকটি শব্দ আছে যা আজকের পরিপ্রেক্ষিতে যার কোনো অর্থ নেই৷ গানটি কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, সেটাও স্পষ্ট নয়৷'' এর পরিবর্তে স্বামী ১৯৪৩ সালে নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের গাওয়া ‘শুভ সুখ চ্যায়েন' গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ করেছেন৷ স্বামীর পাঠানো চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এরপরই শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক৷ তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী সত্যিই এই প্রস্তাব বিবেচনা করছেন?

দ্রুত এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তারা প্রচার করছে, বিজেপির কাছে যে বাঙালি ভাবাবেগের কোনো মূল্য নেই, তা এই প্রস্তাব থেকেই প্রমাণিত৷ এর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় জাতীয় সঙ্গীত বদলের ভাবনা-চিন্তার তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, ‘‘ওরা একবার জাতীয় সঙ্গীত বদলে দেখুক না, ওদেরই উল্টে দেব৷’’ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মুখ খুলেছেন বিদ্বজ্জনেরা৷ চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বরাবরই বিজেপির সমালোচক৷ তিনি বলেছেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীত না বদলে কেন্দ্রীয় সরকার বদলে ফেলা হোক৷ রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি ঠিক থাকে, তবে সংস্কৃতির রাজনীতিও যথাযথ থাকবে৷’’

‘সিন্ধু’ শব্দটি নিয়ে বিজেপি নেতার আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক মননকুমার মণ্ডল৷ তার বক্তব্য, ‘‘সিন্ধু প্রদেশ ভারতীয় ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত৷ গানে তার প্রতিফলন রয়েছে৷ সেই ইতিহাস মুছে ফেলা যায় নাকি? সংস্কৃত এখন আর ব্যবহারিক জীবনে প্রাসঙ্গিক নয়, তা হলে সেই ভাষার গুরুত্ব অস্বীকার করতে হয়৷ তাই কয়েকটি শব্দ তুলে ধরে গান বদলের দাবি অর্থহীন৷’’

তাঁরা ভারতীয় বহুত্ববাদের বিরোধী

This browser does not support the audio element.

পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য বিজেপি এই প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে৷ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক উত্তাপ যখন তুঙ্গে, যখন ‘বহিরাগত’ তকমা ঝেড়ে ফেলতে বাংলার মনীষীদের কথা বারবার বলছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব, তখন স্বামীর এই প্রস্তাব অস্বস্তিকর বটে৷ বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘কোনো বিষয়ে যে কেউ প্রস্তাব পাঠাতে পারেন৷ তার মানে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত নয়৷ তৃণমূল এটা নিয়ে অকারণ হইচই করছে৷’’ বরং বিজেপি নির্বাচনের আগে আরো বেশি করে বাঙালির ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছে৷

বাঙালির আবেগকে উস্কে দিতে কোনো চেষ্টার কসুর করছে না কেন্দ্রীয় সরকার৷ তারা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন সাড়ম্বরে পালনের উদ্যোগ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে৷ ২০২২ সালে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী৷ সেই অনুষ্ঠান আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে শুরু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র৷  তারা ইতিমধ্যেই সরকারি উদযাপনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷

কিন্তু স্বামীর প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের মূল আদর্শকে জুড়ে দেখছেন মননকুমার মণ্ডল৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা জনগণমন  পরিবর্তনের দাবি তুলছেন, তাঁরা ভারতীয় বহুত্ববাদের বিরোধী৷ জাতীয় সঙ্গীতে বিবিধের মাঝে মিলনের যে ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়েছে, আদর্শগতভাবে তার বিরোধী৷ রবীন্দ্রনাথ উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করেছিলেন৷ সেই ভাবনা মুছে দিতে চাইছে রাজনীতিকদের একটা অংশ৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ