জোলিঙেনের ঘটনার পর চ্যান্সেলর শলৎস রাজ্য সরকার, বিরোধী দল ও ফেডারেল মন্ত্রণালয়গুলির মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ প্রত্যর্পণ, উগ্র ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদ ও অস্ত্র আইন নিয়ে কথা বলতে চান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জোলিঙেনের ঘটনার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ বিরোধী নেতা ফ্রিডরিশ ম্যারৎস সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথ উদ্যোগে সংসদে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়ার পর শলৎস বুধবার শরণার্থী নীতির প্রশ্নে বিরোধী দলগুলি এবং ১৬টি রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংলাপের ঘোষণা করেছেন৷ অবৈধ শরণার্থীদের প্রত্যর্পণ, উগ্র ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা ও অস্ত্র সংক্রান্ত আইনের সংস্কারের বিষয়ে তিনি ঐকমত্য অর্জন করতে চান বলে জানিয়েছেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার রাজ্য সরকার, বিরোধী দল ও ফেডারেল মন্ত্রণালয়গুলির প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন৷ তবে আলোচনার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷
গত শুক্রবার জার্মানির পশ্চিমে জোলিঙেনে এক অবৈধ সিরীয় শরণার্থীর ছুরি হামলায় তিন জন নিহত ও আট জন আহত হওয়ার পর গোটা জার্মানিজুড়ে অভিবাসন নীতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি যেভাবে বুলগেরিয়ায় প্রত্যর্পণ এড়িয়ে জার্মানিতে থেকে যেতে পেরেছিলেন, সেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে৷ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি থেকে প্রত্যর্পণের হার কিছুটা বাড়লেও চ্যান্সেলর শলৎসের মতে, সেই নীতি কার্যকর করতে আরো পদক্ষেপের অবকাশ রয়েছে৷ তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশ সীমিত রাখতে আরো উদ্যোগের অঙ্গীকার করেছেন৷ শলৎস বলেন আইনি পথে অভিবাসন চাইলে বেআনি অনুপ্রবেশ সীমিত করতেই হবে, যাতে দেশের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি না হয়৷ আন্তর্জাতিক, ইউরোপীয় ও জার্মান আইন লঙ্ঘন না করেই সেটা করা সম্ভব হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
জোলিঙেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জার্মানির দলীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে৷ জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর ও সবুজ দলের নেতা রোব্যার্ট হাবেক বিরোধী নেতা ম্যারৎসের সমালোচনা করেছেন৷ রক্ষণশীল সিডিইউ দলের নেতা যেভাবে শলৎসকে প্রয়োজনে জোট সরকারের শরিক সবুজ দল ও এফডিপি দলের সম্মতি ছাড়াই আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই মনোভাবকে ‘বিভাজনমূলক’ বুলি হিসেবে বর্ণনা করেন হাবেক৷ তিনি মনে করিয়ে দেন যে, জোলিঙেন নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের এক শহর, যে রাজ্যে সিডিইউ ও সবুজ দলের জোট সরকার ক্ষমতায় আছে৷ তাছাড়া ম্যারৎস যেভাবে জাতীয় স্তরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ইইউ অভিবাসন আইন উপেক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই মনোভাবেরও সমালোচনা করেন হাবেক৷ তাঁর মতে, ইউরোপ মোটেই সেভাবে চলে না৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানিতে পুলিশ কেন, কখন গুলি করে
জার্মানিতে পুলিশে গুলি করার প্রবণতা বাড়ছে৷ তাতে আহত এবং নিহত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে৷কেন বাড়ছে? পুলিশ কোন কোন পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারে? বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/F. Bensch
পুলিশের গুলি করার প্রবণতা বাড়ছে
জার্মানির বিল্ড পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে পুলিশের মাঝে গুলি করার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে সারা দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল মোট ৫৬টি ঘটনায়, ২০১৯ সালে এমন ঘটনা ৬৭টিতে গিয়ে ঠেকে৷ ওই ৬৭টি ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়৷ পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২০১৯ সালে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Scholz
সম্প্রতি ব্রেমেনে যা ঘটেছে
গত ৩ জুলাই জার্মানির ব্রেমেন শহরে পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি আহত হন৷ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়৷ বলা হচ্ছে, ছুরি হাতে ওই ব্যক্তি এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালালে বাধ্য হয়েই তাকে গুলি করা হয়৷ ঘটনার তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
গেলজেনকির্শেনের ঘটনা
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গেলজেনকির্শনেও পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়৷ পুলিশের ভাষ্য, ৩৭ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির সম্ভবত মানসিক সমস্যা ছিল, ছুরি হাতে তিনিও পুলিশের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হলে তাকে চারবার গুলি করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IDA NewsMedia/R. Werner
পুলিশের অস্ত্র
স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব পালনের সময় সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পিস্তল থাকে৷ তবে কখনো কখনো রিভলভার এবং রাইফেলও সঙ্গে নিতে পারেন তারা৷ এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে লাঠি এবং পিপার স্প্রে, এমনকি কোনো কোনো রাজ্যে সঙ্গে স্টানগানও রাখতে পারেন৷ তবে সব পরিস্থিতিতে যখন-তখন গুলি করা আইনসম্মত নয়৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
কখন গুলি করতে পারে পুলিশ?
সন্দেহভাজনকে বাগে আনার বা শান্ত করার বাকি সব চেষ্ট ব্যর্থ হলেই কেবল গুলি করতে পারে পুলিশ৷ ভিড়ের মধ্যে গুলি করার আগে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হয়৷ কোনো ব্যক্তির গায়ে সরাসরি গুলি চালানোর আগে তাকে সতর্ক করতে অন্য কোনো বস্তুর ওপর গুলি চালানোর নিয়মও আছে কোনো কোনো রাজ্যে৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
বিশেষ প্রশিক্ষণ
আইন অনুযায়ী কখন গুলি করা যাবে তা বোঝাতে পুলিশকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ কোনো পুলিশ গুলি চালালে ঘটনার পর তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ অনেক সময় গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে৷ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি নিহত না হলেও এমন হয়ে থাকে৷ এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে মনরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়৷