জাতীয়তাবাদ আর ফ্যাসিবাদের মধ্যে যে চুল পরিমাণ ফারাক, সেটা ইদানিং বেশ ভাবিয়ে তুলছে৷ একইসঙ্গে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জাতীয়তাবাদ আসলে কী? এর আদৌ কোনো প্রয়োজন রয়েছে?
বিজ্ঞাপন
জাতীয়তাবাদের নামে আমাদের কিছু মানতে জোর করে বাধ্য করা হলে, সেটা ফ্যাসিবাদী আচরণ কেনো নয়?
ভারতের এক গানের প্রতিযোগিতায় ভালো পারফরম করে বেশ নাম কামিয়েছেন বাংলাদেশের ছেলে নোবেল৷ আড্ডার ছলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা'র চেয়ে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা' বাংলাদেশকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেশি ফুটিয়ে তোলে বলে মনে করেন৷
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...
দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত কোনো গানকে রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে জাতীয় সংগীত বলা হয়৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আছে সেই দেশের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর গৌরবগাঁথা৷ আমাদের জাতীয় সংগীতেরও আছে বর্ণাঢ্য অধ্যায়৷
ছবি: Reuters
ইতিহাসের পথ ধরে
এক ডাক হরকরার কণ্ঠে ‘আমি কোথায় পাবো তারে‘ গানটি শুনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ ফকির লালন সাঁইয়ের ভাবশিষ্য গগন হরকরার গানটি মনে ধরে তাঁর৷ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ‘আমার সোনার বাংলা‘সহ বাউল সুরে কিছু গান লেখেন কবি৷ সে বছর ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউনহলে গানটি প্রথম গাওয়া হয়৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের আদবকেতা
১৯৭৮ সালে জাতীয় সংগীত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালা মেনে সঠিক উচ্চারণে ও শুদ্ধ সুরে গাইতে হবে জাতীয় সংগীত৷ গাওয়ার সময় দেখাতে হবে যথাযথ সম্মান৷ জাতীয় সংগীত বাজানো ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময়, সমবেত সকলকে জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় সংগীত গাইতে হবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এর পুরোটা সব অনুষ্ঠানে গাওয়ার নিয়ম নেই। জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংগীত বাজাতে হবে।
ছবি: DW/M. Mamun
অবিনশ্বর কবিগুরু
বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একমাত্র কবি, যিনি বাংলাদেশ আর ভারত-দুটি দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন৷ ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘জনগণমন অধিনায়ক‘-গানটি মূলত ব্রহ্মসঙ্গীত৷ ১৯৩৭ সালের ২৮ অক্টোবর এটিকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস৷ স্বাধীনতার পর গানের প্রথম স্তবকটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সম্মাননা পায়। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতের সুর করেছেন রবীন্দ্রনাথ৷ তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি লিখেছেন আনন্দ সামারাকুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানব পতাকা
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে ২৭ হাজার ১১৭ জন। সবার হাতে একখণ্ড বাংলাদেশ। চারদিকে সবুজ আর মাঝে লাল। লাল-সবুজ মিলেমিশে রূপ নিল একটি জাতীয় পতাকায়। এদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করা হয়৷ ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি স্বীকৃতি দেয় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস৷ ঠিক পরের বছর ভারতের চেন্নাইতে ৪৩ হাজার ৮৩০ জন মিলে তৈরি করে মানব পতাকা৷
ছবি: Reuters
মুখে মুখে জাতীয় কবি
জাতীয় কবির নাম বললে, উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলাম৷ কিন্তু সরকারের দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তাঁর নাম কোথাও নেই। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে তাঁকেই জাতীয় কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়৷ তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কোথাও মেলেনি সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো দলিল৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
বিশ্বের প্রাচীন জাতীয় সংগীত
ইতিহাস বলছে, নেদারল্যান্ডের জাতীয় সংগীতই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাতীয় সংগীত৷ ‘ভিলহেলমাস ফান নাসাওয়ে’ শিরোনামের এই গানটি ‘ভিলহেলমাস’ নামেই বেশি পরিচিত৷ যার অর্থ ‘উইলিয়াম’৷ ১৫৭২ সাল থেকে ডাচদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এটি৷ ১৯৩২ সাল থেকে এই গানটিকে দেশটির জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়া হয়৷ এর আগে এটি ডাচ জাগরণের প্রতীক৷
ছবি: PATRIK STOLLARZ/AFP/Getty Images
বৈচিত্র্যময় জাতীয় সংগীত
উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ৷ এটিতে স্তবক সংখ্যা ১৫৮৷ কলম্বিয়া, সেনেগাল, বেলজিয়াম, ইকুয়েডর-এই দেশগুলোর জাতীয় সংগীত রচয়িতা তাঁদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতি৷ দুনিয়ার সবচেয়ে পুরনো শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় জাপানের জাতীয় সংগীতে৷ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের জাতীয় সংগীতে নেই কোনো শব্দ৷ শুধু আছে তূর্যনিনাদ৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
7 ছবি1 | 7
এটা তার ব্যক্তি মত৷ তিনি দেশের, রাষ্ট্রের, সরকারের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমনকি জাতীয় সঙ্গীতেরও কোনো অপমান করেননি৷ নিজেও আগে থেকেই বলে নিয়েছেন, এজন্য তাকে হয়তো কথাও শুনতে হতে পারে৷ কিন্তু সেটা যে এতো মারাত্মক আকার ধারণ করবে, তা হয়তো তিনিও ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি৷
একপক্ষ তাকে তুলোধুনা করলো জাতীয় সঙ্গীত ‘অপমানের' অভিযোগে৷ অন্যপক্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘হিন্দু' বলে এবং ‘বাংলাদেশের নাগরিক না' বলে তার পক্ষে নেমে গেলেন৷ অথচ, নোবেল এর কোনোটাই করেননি৷
পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে জাতীয় সঙ্গীত নানা কারণে পরিবর্তন হয়েছে৷ গত বছরই তো ক্যানাডার সিনেট লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে জাতীয় সঙ্গীতের একটা বাক্য পরিবর্তন অনুমোদন করে৷ ওদের জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় বাক্যে ছিল "in all thy sons command”৷ এটাকে পালটে করা হয়েছে "in all of us command”৷
জার্মানিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা-প্রতিবাদ চলছে Fatherland বদলে Homeland করার দাবিতে৷ অস্ট্রেলিয়ায় ‘We are young and free' পালটে 'Strong and free' করার দাবি জানাচ্ছেন আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা৷
জার্মানি, সাউথ আফ্রিকা, নেপালের মতো অনেক দেশ তাদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করেছে৷ এর বেশিরভাগই অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে৷ বাংলাদেশের এখন এমন কোনো কারণ তৈরি হয়নি৷ কিন্তু আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়?
শুধু জাতীয় সঙ্গীত কেনো, চলুন আলোচনা করি অন্য সব জাতীয় প্রতীক নিয়েও৷ ধরুন জাতীয় পতাকার কথাই৷ কয়েক বছর আগে হইহই রইরই করে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবপতাকা তৈরি করে গিনিজ বুকস অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখালাম৷ কদিন পরই ভারত সে রেকর্ড ভেঙে নিজেদের করে নিল৷
এখন ধরুন, চীন যদি এই রেকর্ড করতে চেয়ে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দিয়ে দেয়, সে রেকর্ড আর কখনও কারো পক্ষে ভাঙা সম্ভব হবে? চীনের জনসংখ্যা জানেন তো? কিন্তু এই যে আমাদের জাতীয় পতাকার রেকর্ড আরেক দেশ ভেঙে ফেললো, তাতে কী আমাদের সম্মান বাড়লো, নাকি কমলো? আমি মনে করি জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রতিযোগিতাটাই একটা সম্মানহীনতার কাজ৷
এবার আসুন জাতীয় পশুর প্রসঙ্গে৷ পাকিস্তানের জাতীয় পশু মারখোর নামের এক প্রজাতির ছাগল৷ এ নিয়ে আমাদের কতো হাসাহাসি৷ কিন্তু আমাদের জাতীয় পশু বেঙ্গল টাইগার নিয়ে আমরা এতো গর্বিত, জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতীক এবং খেলোয়াড়দেরও আমরা টাইগার বানিয়ে দিয়েছি৷
আমাদের জাতীয় খেলা কী জানেন তো? হাডুডু৷ অথচ, আমরা নিজেরাও সেই খেলা কখনও খেলি না, কোথাও খেলা আয়োজন করা হলেও তার খোঁজও রাখি না৷ অথচ, পাশের দেশ ভারতে দেখুন৷ কাবাডি ফেডারেশন কাবাডি লিগের আয়োজন করে খেলাটিকে কতো জনপ্রিয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে৷
টাইগার যদি জাতীয় পশু হয়, সে প্রতীক তো ক্রিকেটারদের নয় হাডুডু খেলোয়াড়দেরই হওয়া বেশি যুক্তিসঙ্গত, তাই না?
কিন্তু যাদের নিয়ে আমাদের গর্ব, সেই সত্যিকার বেঙ্গল টাইগারদের কী অবস্থা সে নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই৷ সংখ্যা কমতে কমতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে বেঙ্গল টাইগার৷ আমরা একদিকে তার বাসস্থান নষ্ট করি, অন্যদিকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করলে পিটিয়ে মারি৷ এখন যদি আমি জাতীয় পশু ‘গরু' করার প্রস্তাব করি, নিশ্চয়ই সবাই মারতে আসবে, কিন্তু তাতে টাইগারদের ভাগ্যের কোনো উন্নতি হবে না৷
জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা কয়েকটি দেশ
লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি পরিবর্তন – এ সব নানা কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে৷ সম্প্রতি জার্মানিতেও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে৷
ছবি: Reuters/D. Gray
অস্ট্রেলিয়া
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর ২০২১ এর ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা তাঁদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইবেন৷ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে অভিহিত করা হবে না৷ আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন৷
ছবি: Reuters/D. Gray
জার্মানি
দেশটির সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে আরও বেশি লিঙ্গ সমতা আনার প্রস্তাব করেছেন৷ তিনি গানের যে অংশে ‘ফাটারলান্ড’ অর্থাৎ ‘পিতৃভূমি’ বলা হচ্ছে, সেখানে ‘হাইমাট’ অর্থাৎ ‘জন্মভূমি’ লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে মনে করছেন, জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
অস্ট্রিয়া
২০১২ সালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’-র জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়৷ উদ্দেশ্য লিঙ্গ সমতা আনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D.l Karmann
ক্যানাডা
উত্তর অ্যামেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে৷ সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-র জায়গায় ‘আমরা সবাই’ লেখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/K. Djansezian
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়৷ তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল৷ তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়৷ তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না৷ তালেবানের পতনের পর ২০০২ সালে পুরনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটির কথা উঠলেই গণহত্যার কথা মনে পড়ে৷ ১৯৯৪ সালে মাত্র একশ দিনের মধ্যে সে দেশে পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত বেছে নেয়৷
ছবি: Carl Court/AFP/Getty Images
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দু’টি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে৷ আফ্রিকান্স ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত৷ তবে আফ্রিকান্স ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে৷ নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/Mike Theiler
রাশিয়া
ভ্লাদিমির পুটিন ২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন৷ তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷ ১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, কথাবিহীন গান তাঁদের নাকি উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/I. Naymuishin
9 ছবি1 | 9
চলুন কথা বলি জাতীয় ফল আর গাছ নিয়ে৷ কাঁঠাল কেনো হবে জাতীয় ফল? আকারে বড় বলে? তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী কেনো কাউকে রাষ্ট্রীয় উপহার পাঠালে কাঁঠাল না পাঠিয়ে আম পাঠান? এটা কি কাঁঠাল অবমাননার পর্যায়ে পড়ে, এটা কি দেশদ্রোহ? আমার কাছে কাঁঠালের চেয়ে আম বাংলাদেশকে বেশি রিপ্রেজেন্ট করে বলে মনে হয়৷ এর কারণে আমাকে শূলে চড়াবেন?
সাহিত্য পড়ে দেখুন৷ কতো যুগ যুগ ধরে পথিকদের ছায়া দিয়ে প্রশান্তি এনে দিয়েছে বটগাছ৷ আর আজ জাতীয় ফলের প্রতিযোগিতায় কাঠালের কাছে হেরে যাওয়ায় জাতীয় গাছের সান্ত্বনা পুরস্কার পাবে আম গাছ? এটা অন্যায়, এ অন্যায় মানি না৷
আবার ফিরে আসি জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে৷ ১৯৪৭ সালের তো আমাদের পূর্বপুরুষেরা ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ' জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন৷ এখন এই গান কেউ বাংলাদেশে কোনো অনুষ্ঠানে গাইলে তার তো বেঁচে থাকাই মুশকিল হবে৷ এক যুদ্ধে জাতীয়তাবাদ পরিবর্তন হয়ে গেলো, আর জাতীয় প্রতীক পারবে না? কোনো কিছুই চিরন্তন নয়, পরিবর্তনশীল৷
জাতীয় প্রতীককে যে যার মতো করে সম্মান দিক না৷ এতে প্রতীকের কী আসে যায়? জোর করে কাউকে যদি জাতীয়তায়অনুপ্রাণিত করতে চান, সেটা আপনাকে দেশপ্রেমিক হিসেবে না, বরং ফ্যাসিবাদি হিটলার হিসেবে উপস্থাপন করে৷
সিনেমা হলে কেনোই বা জাতীয় সঙ্গীত বাজাতে হবে? গিয়েছি হলিউডে তৈরি ‘স্পাইডারম্যান' দেখতে, এর শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দেশকে সম্মান জানানো প্রক্রিয়াটা আমার কাছে দেশের জন্য খুব একটা ‘সম্মানজনক' বলে মনে হয় না৷ এর চেয়ে বরং ঢালিউডে যদি আমরা সমমানের ‘ডেঙ্গুম্যান'ও বানাতে পারি, সেটাতে দেশ অনেক বেশি সম্মানিত হবে৷
যদি মানুষটাকে সম্মান দিতে না পারি, তার ছবি পকেটে থাকলো, না টেবিলে, নাকি দেয়ালে, তাতে কী আসে যায়? দেশটাকে, দেশের সম্পদকে, দেশের মানুষকে সম্মান দিন, জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা, পশু-পাখি তো কেবল প্রতীক৷ উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে ফ্যাসিবাদি হয়ে উঠবেন না, সম্মানটা মন থেকে আসতে দিন৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷