শুধু ছোট বয়সে নয়, আবালবৃদ্ধবনিতা ম্যাজিক দেখে আমোদ পায়৷ জাদুকর আমাদের বোকা বানালেও রাগের বদলে মজা লাগে৷ ফ্রান্সে আধুনিক জাদুবিদ্যার জনকের জন্মস্থানে এক মিউজিয়ামে তার স্বাদ পাওয়া যায়৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের ব্লোয়া শহরে ‘হাউস অফ ম্যাজিক’-এ ছয় মাথার ড্র্যাগন দর্শকদের স্বাগত জানায়৷ জাদুর জাদুঘর বলে কথা, তাই বিস্ময়ের অভাব নেই৷ ডিডাব্লিউর সাংবাদিক মেগিন লেই সেই মিউজিয়ামে গিয়ে বলেন, ‘‘যারা জাদু ও হাতসাফাই দেখে আমোদ পান, তাদের অবশ্যই এখানে আসা উচিত৷ ড্র্যাগন, তাসের ম্যাজিক, ম্যাজিক শো থেকে শুরু করে বিভ্রমের আলাদা একটা কামরাও রয়েছে৷ এই মিউজিয়ামকে জাদুবিদ্যার মন্দির বলা চলে৷ গিয়ে দেখি, কথাটা ঠিক কিনা৷’’
জাদুকরের মতো ভেলকি দেখাতে পারেন এই শিল্পীরা!
সত্যি না মিথ্যে? কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে? যা দেখছি, তা কি শিল্প, না স্বপ্ন, না জাদু কিংবা মায়া? অতিবাস্তব অঙ্কণ বা ত্রিমাত্রিক স্ট্রিট আর্ট কাকে বলে, জানেন? আসুন তাহলে আমাদের ছবিঘরে৷
ছবি: Mirjana Kika Milosevic
হাওয়ার্ড লি’র অতিবাস্তব চিত্রাঙ্কণ
বলুন দেখি, ছবিতে দু’টি ‘হট ডগ’-এর মধ্যে কোনটি বাস্তব আর কোনটি মায়া? হাওয়ার্ড লি এমন নিখুঁতভাবে ছবি আঁকেন যে, বস্তু আর তার প্রতিমূর্তির মধ্যে ফারাকটা ধরার উপায় নেই, যদি না লি-র নিজের আপলোড করা ইউটিউব ভিডিওগুলো দেখেন৷ লি-র প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার নিয়মিত ফলোয়ার৷ তাহলে বলেই দেওয়া যাক– সত্যিকারের হট ডগটা বাঁদিকে৷
ছবি: DW
সিলভিয়া ভাল্ডের কৃত্রিম সসেজ
নিজে নিরামিষাশী হয়েও কিন্তু সিলভিয়া যে খেলনা বা বালিশগুলো তৈরি করেন, সেগুলো সসেজ, বেকন অথবা কিমার রূপ নেয়৷ বার্লিনে সিলভিয়ার ‘মাংসের দোকানে’ ৪০টি এ ধরনের শিল্পকলা দেখতে পাওয়া যাবে৷ তবে সসেজের আকারের বালিশ বা মুরগির ঠ্যাংয়ের আকারের কোল-বালিশ দেখে আশ্চর্য হবেন না কিন্তু!
ছবি: DW
অ্যালেক্স চিনেকের মায়াবি স্থাপত্য
লন্ডনের কোভেন্ট গার্ডেন শপিং স্কোয়ারের প্রবেশপথে এই বাড়িটিকে দেখতে পাবেন – যেন মাঝখান থেকে কে বা কারা ভেঙে দিয়েছে৷ ব্রিটিশ শিল্পী অ্যালেক্স চিনেক ২০১৪ সালে এই ইনস্টলেশনটি সৃষ্টি করেন, যার রহস্য হলো একটি অদৃশ্য ইস্পাতের কাঠামো৷ চিনেক বলেন, যাঁরা সাধারণত মিউজিয়ামে যান না, তাঁদের জন্যই তাঁর শিল্পকলা৷
ছবি: Rob Stothard/Getty Images
লেয়ন কিয়ারের ত্রিমাত্রিক স্ট্রিট আর্ট
ওলন্দাজ শিল্পী লেয়ন কিয়ার পথেঘাটে তাঁর ত্রিমাত্রিক ছবিগুলি প্রদর্শন করেন৷ কম্পিউটারে ছবিগুলির নকশা করে, পরে অকুস্থলে সেগুলিকে ‘প্রোজেক্ট’ করেন কিয়ার৷ ত্রিমাত্রিক অনুভূতি পাবার জন্য ছবিটিকে একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে৷
ছবি: DW
মিরিয়ানা মিলোসেভিচের ‘মায়ার’ শরীর
বডি পেইন্টিং মানে নিজের বা অপরের শরীরকে চিত্রপট হিসেবে ব্যবহার করে ছবি আঁকা৷ ‘কিকি’ নামের সার্বিয়ান শিল্পী মিরিয়ানা মিলোসেভিচ বডি পেইন্টিংকে বডি ইলিউশন বা বিদেহী মায়া করে তোলেন কালো পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে৷ মেক-আপ শিল্পী মিলোসেভিচ তখন নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারেন না, কেননা, তাহলে ইলিউশন বা মায়াটি ভঙ্গ হবে৷ নিজের বাস্তব থেকে মায়ায় উত্তরণের ভিডিও ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে থাকেন ‘কিকি’৷
ছবি: Mirjana Kika Milosevic
5 ছবি1 | 5
মিউজিয়ামের ভেতরে জাদুর জগত৷ প্রথম দর্শনে যা মনে হয়, বাস্তবে তা একেবারেই ভিন্ন৷ সেখানে মাটিও মালের মতো জাদুকরও আছেন৷ তাসের ম্যাজিক দেখিয়ে তিনি আমাদের সহকর্মীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন৷ এই ধরনের ম্যাজিকের জন্য চাই ছলচাতুরি, দ্রুততা ও নিখুঁত হাতসাফাইয়ের ক্ষমতা৷ মাটিও সেই কাজে অত্যন্ত দক্ষ৷
গভীর মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে থেকেও মেগিন জাদুর কৌশল ধরতে পারলেন না৷ মাটিও মালে বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে সব কিছু অত্যন্ত যুক্তিনির্ভর৷ জাদুই একমাত্র ক্ষেত্র, যার মধ্যে গোপনীয়তা, রহস্যের অস্তিত্ব রয়েছে৷ এটাই মানুষকে গোপন, জাদুময় জগত আঁকড়ে ধরার সুযোগ দেয়, সমাজে যার আর কোনো জায়গা নেই৷’’
আধুনিক জাদুবিদ্যার জনক বলে পরিচিত জন-উজেন রোবের-উদ্যাঁ-কে উৎসর্গ করেই মিউজিয়ামটি তৈরি হয়েছে৷ ১৮০৫ সালে তিনি ব্লোয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ কাকতালীয়ভাবে তিনি প্যারিসে জাদুচর্চা শুরু করেন এবং নিজেই একটি থিয়েটার পত্তন করেন৷ তাঁর জাদুর কৌশল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল৷
‘হাউস অফ ম্যাজিক’ অবশ্য সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না৷ কারণ এখানকার মূলমন্ত্রই হলো, ‘জাদুকর কখনো তাঁর সেরা কৌশলগুলি ফাঁস করেন না'৷ মেগিন বলেন, ‘‘হাউস অফ ম্যাজিক-এ আমার সময় শেষ হচ্ছে এবং স্বীকার করতে হচ্ছে, যে কোনো কৌশল ধরতে পারলাম না৷ তবে জাদু সম্পর্কে আমার আগ্রহ বেড়েছে৷ ব্লোয়া থেকে বিদায় জানাচ্ছি৷’’