হাতসাফাই শুধু ম্যাজিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ রুবিক্স কিউব সমাধানের মতো ‘স্কিল স্পোর্টস'-এর ক্ষেত্রেও চোখ ধাঁধানো হাতসাফাই দেখান কেউ কেউ৷ জার্মানির এক তরুণ একাধিক ক্ষেত্রে এমন দক্ষতা দেখিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
পাট্রিক ক্যার্ন যাকে বলে স্কিল স্পোর্টস ক্রীড়াবিদ৷ আঙুলের ফাঁকে তিনি কিছু পেলে তা সহজে দেখাই যায় না৷ হাতই তাঁর মূলধন৷ দক্ষতার সঙ্গে নিখুঁত আঙুল সঞ্চালন তাঁর শক্তি৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা কিছুটা আমার স্বভাবের মধ্যেই পড়ে৷ যে ক্রীড়াই হোক না কেন, কিছু ছুঁলে বা নতুন কিছু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে আমি খুবই উচ্চাকাঙ্খী হয়ে উঠি৷ সঙ্গে সঙ্গে পরখ করে সবার সেরা হয়ে উঠতে চাই৷''
তাঁর অন্যতম প্রিয় কাজ হলো রুবিক্স কিউব সমাধান করা৷ ৬টি রং, ৫৪টি অংশ এবং প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটিভাবে ঘোরানোর সুযোগ৷ পাট্রিক মাত্র ১৩ সেকেন্ডে রং মেলাতে পারেন৷ চোখ বাঁধা থাকলে আড়াই মিনিট সময় লাগে৷
২০১৭ সালে তিনি পানির নীচে রুবিক্স কিউব সমাধানের রেকর্ড ভেঙেছেন৷ দু'মিনিটে ৬টি কিউবের রং মিলিয়েছেন৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘আমি ধাপে ধাপে রুবিক্স কিউব মেলাই৷ সবার আগে নীচের স্তর, তারপর মাঝের ও শেষে উপরের স্তর৷ প্রত্যেকটি পদক্ষেপের পরিণতি রয়েছে৷ সেগুলি মুখস্থ করা যায় অথবা ইন্টারনেটে দেখে নেওয়া যায়৷ এক ঘণ্টার মধ্যেই সত্যি এই কায়দা শেখা সম্ভব৷''
ম্যাজিক মানে ম্যাজিক
সুন্দরীদের করাত দিয়ে কেটে দু’টুকরো করা কিংবা বাতাসে মানুষ ভাসানো, এ সব কী করে করা হয়, তা জানতে হলে বন শহরের ‘ম্যাজিক উইক্স’-এ চলে আসুন৷ এপ্রিল মাস অবধি এখানে সারা ইউরোপ থেকে আসা ম্যাজিশিয়ানদের দেখতে ও শুনতে পাবেন৷
ছবি: Syda Productions/Fotolia.com
টুপি থেকে খরগোশ...
...বার না করতে পারলে আবার ম্যাজিশিয়ান কিসের? জার্মানে তো এই ম্যাজিকটা ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে: ‘আউস ডেম হুট গেৎসাউব্যার্ট’ মানে ‘টুপির ভেতর থেকে ম্যাজিক করে বার করা’৷ যেমন আইডিয়াটা কোথায় পেলেন, তা না জানিয়ে হঠাৎ একটা বুদ্ধি দেওয়া৷
ছবি: Kitty/Fotolia.com
দ্য ম্যাজিক সার্কেল
জার্মানির জাদুকর সমিতির সদস্যসংখ্যা ২,৮০০-র বেশি৷ সমিতির নানা নিয়মকানুন আছে৷ সদস্য হতে গেলে সমিতির ৮০টি স্থানীয় সার্কেল-এর কোনো একটিতে পরীক্ষা পাস করতে হয়৷ ম্যাজিক সার্কেল থেকে প্রতি তিন বছর অন্তর জার্মান চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হয়, এছাড়া প্রতিবছর একজন ‘ম্যাজিশিয়ান অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করা হয়৷
ছবি: Syda Productions/Fotolia.com
গোপনীয়
বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না – এই হলো ম্যাজিকের জীয়নকাঠি মরণকাঠি৷ চুরিবিদ্যার মতো জাদুবিদ্যাও মহাবিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা৷ কাজেই কোনো ম্যাজিশিয়ান যদি ম্যাজিকের রহস্য ফাঁস করে দেন, তাহলে সেখানেই ম্যাজিকের ইতি৷ তাই ম্যাজিক সার্কেল-এর সদস্যরা সেই অপকর্মটি না করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lander
লাগ লাগ লাগ ভেলকি লাগ
অথবা ইংরেজিতে আব্রাকাডাব্রা – এ সবই হলো ম্যাজিকের ফর্মুলা বা জাদুমন্তর৷ সত্যিই এ ধরনের জাদুমন্তর আছে এবং বহু যুগ ধরে চলে আসছে৷ জার্মানির মের্জেবুর্গের জাদুমন্তরগুলি সম্ভবত সংকলিত হয় অষ্টম শতাব্দীতে৷ জার্মানে ‘আব্রাকাডাব্রা’ মন্তরটির চল তৃতীয় শতাব্দী থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যাজিক শো
জার্মান জাদুকর মহলের পপস্টার বলা চলে আন্ড্রেয়াস ও ক্রিস্টিয়ান রাইনেল্ট, এই ম্যাজিসিয়ান ভ্রাতৃদ্বয়কে৷ ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে তাঁরা ফ্রাংকফুর্টের ফুটবল স্টেডিয়ামে যে ম্যাজিক শো করেন, তাতে দর্শক এসেছিলেন ৩৮,৫০৩ – যা কিনা একটা বিশ্বরেকর্ড৷ রাইনেল্ট ভাইরা তিনবার জার্মানির ম্যাজিসিয়ান অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler-Fotopress
করাত দিয়ে কাটা
এই ‘জাদু’-টি সারা দুনিয়ার বড় বড় জাদুকর ও ম্যাজিক শো-র পেটোয়া৷ ১৯২১ সালে প্রথমবার দেখানো হয় মার্কিন মুলুকে: এক মহিলাকে বাক্সের মধ্যে পুরে, সেই বাক্স – মহিলা সুদ্ধু! – করাত দিয়ে কেটে দু’টুকরো করে ফেলা হয়৷ তা সত্ত্বেও মহিলাটি শেষমেষ অক্ষত অবস্থাতেই বাক্স থেকে বেরিয়ে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
সবচেয়ে নামকরা জার্মান ম্যাজিসিয়ান
‘সিগফ্রিড অ্যান্ড রয়’ – আদতে জিগফ্রিড ফিশবাখার এবং রয় হর্ন-এর নাম নব্বইয়ের দশকে সবাই চিনতো – বিশেষ করে তাঁদের ম্যাজিক শো-তে একাধিক সিংহ ও সাদাবাঘ থাকার কারণে৷ লাস ভেগাসে সিগফ্রিড আর রয়ের শো নাকি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ও মহার্ঘ স্টেজ শো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাতাসে ভাসা(নো)
এই ‘ট্রিক’ বা ‘চালাকি’-র পিছনে আছে মানুষের সেই চিরকালের স্বপ্ন, মাধ্যাকর্ষণের বাঁধন ছিঁড়ে মেঘ হয়ে উড়ে যাওয়া, ভেলার মতো ভেসে বেড়ানো৷ ভেলা তো নয়, ভেলকি৷ কিন্তু সেই ভেলকি যে কীভাবে হয়, সেটা জানতে পারলেই তো মজাটা মাটি, নয় কি?
ছবি: Aarrttuurr/Fotolia.com
বিশ্ব সমিতি
বিশ্বের সর্বত্র ম্যাজিশিয়ানদের পাওয়া যাবে৷ ‘ফেদারাসিওঁ অ্যাঁতারনাসিওনালে দে সোসিয়েতে মাজিক’ বা এফআইএসএম-এ ৫৫টি দেশের মোট ৬০,০০০ জাদুকর সংঘবদ্ধ৷ সংগঠনটি প্রতি তিন বছর অন্তর একটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যবস্থা করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Chunyang
শিক্ষানবীশ
জাদুবিদ্যার কোনো সরকারি বিধিবদ্ধ শিক্ষানবিশী নেই৷ ম্যাজিক শেখার স্কুলে বুনিয়াদী কিছু পাঠ নেওয়া যায়, প্রবীণ জাদুকররা মাঝেমধ্যে সেমিনার করে কিছু কিছু ‘ভেলকি’ শেখান৷ অনেক জাদুকর আবার নতুন ‘ট্রিক’ আবিষ্কার করে তা ম্যাজিকের দোকানদারদের কাছে বেচে দেন৷ বাকিটা কিন্তু হবু ম্যাজিশিয়ানদের নিজেদেরই পড়াশুনা করে শিখে নিতে হয়৷ এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Denouk Images
10 ছবি1 | 10
রুবিক্স কিউব সমাধানের রেকর্ড করেই তিনি ক্ষান্ত হন নি৷ তিনি স্পোর্টস স্ট্যাকিং-এর ক্ষেত্রে ৪ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন৷ কারণ তিনি শুধু কাপ নয়, ছক্কারও স্তূপ তৈরি করেন৷ এই প্রক্রিয়ার নাম ‘ডাইস স্ট্যাকিং'৷ এর পেছনে কোনো জাদু নেই, চাই পদার্থবিদ্যার জ্ঞান৷ পাট্রিক ক্যার্ন বলেন, ‘‘কাপের মধ্যে ছক্কা ঢোকাতে অথবা উপরে আনতে আমাদের অপকেন্দ্র সৃষ্টি করতে হবে৷ বাঁকানো কাপ কিউবের উপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ছক্কা দিয়ে তা করার সময় বর্ণচ্ছটা সৃষ্টি হয়৷ ঠিকমতো সাজাতে পারলে আমি এক টাওয়ার তৈরি করতে পারি৷''
তিনি নিত্যনতুন কৌশল সৃষ্টি করে চলেছেন৷ কঠোর অনুশীলন করতে হয়৷ হাতে চারটি টাওয়ার, মাঝে শুধু তাস৷ কিন্তু আঙুলের ধাক্কায় তাস ছিটকে ফেলার প্রক্রিয়া কাজ করছে না৷ অনেক অনুশীলনের পর শেষ পর্যন্ত সাফল্য এলো৷