অবশেষে তদন্ত কমিটি গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ায় জড়িত পুলিশদের পরিচয় পেয়েছে৷ এর আগে গাইবান্ধার সাবেক পুলিশ সুপারের কারণে ওই পুলিশদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না৷
বিজ্ঞাপন
অবশেষে চিহ্নিত হয়েছেন দুই পুলিশ সদস্য, তারা্ হলেন গাইবান্ধা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুর রহমান ও গাইবান্ধা পুলিশ লাইনসের কনস্টেবল মো. সাজ্জাদ হোসেন৷
গত বছরের নভেম্বরে গাইবন্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের আখ কাটাকে কেন্দ্র করে সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়া হয়৷ তারপর থেকে এই ঘটনায় মোট আটটি মামলা হয়৷ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় তিনটি৷ তার মধ্যে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সাঁওতাল পল্লীতে আগুনের ঘটনায় জড়িত দুই পুলিশ সদস্যের নাম- পরিচয় জানা গেল৷
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু৷
‘পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়া-না-পাওয়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে’
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির দেয়া প্রতিবেদনে আগুন দেয়ার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য এসআই মাহবুবুর রহমান ও কনস্টেবল মো. সাজ্জাদ হোসেনের নাম রয়েছে৷ তাদের দুজনকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷’’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘‘ঘটনার দিন ওই এলাকায় মোট ৮৫ জন পুলিশ ছিল৷ তাদের মধ্যে ৫৪ জন জেলা পুলিশ, চার জন সুন্দরগঞ্জ থানার পুলিশ এবং ১৪ জন স্পেশাল ফোর্সের পুলিশ৷ এদের সবাইকে নানা জায়গায় বদলি করা হয়েছে৷ গাইবান্ধার তখনকার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলামকেও খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়েছে৷’’
শুরুতেই অভিযোগ থাকলেও পুলিশ সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ার কথা অস্বীকার করে আসছিল৷ তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার হয়৷ সেখানে দেখা যায় দু'জন পুলিশ সদস্য সরাসরি সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দিচ্ছেন৷ এরপরও গাইবান্ধা জেলা পুলিশ কোনো পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল৷
ওই ভিডিও ফুটেজ ধরে হাইকোর্ট এক রিটের বিপরীতে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ তদন্তে দুই পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে৷ কিন্তু তখনকার গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো.আশরাফুল ইসলাম তদন্ত কমিটিকে তাদের নাম ঠিকানা দেননি৷ এ কারণে হাইকোর্ট পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন৷ পরে তাকে খাগড়াছড়ি বদলি করা হয়৷
৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়৷ তখন সাঁওতাল পল্লীর দুই শতাধিক ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে৷ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত ও তিন জন সাঁওতাল নিহত হন৷ ঘটনার পর সাঁওতালদের নিরাপত্তা ও ঘটনার তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে কয়েকটি সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে৷
রিটকারীদের একজন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশের একটি প্রবণতা হলো শুরুতেই তারা কোনো ঘটনায় তাদের দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে৷ তাদের কেউ জড়িত থাকলে তারা তাদের আড়াল করার চেষ্টা করে৷ এটা যেমন গাইবন্ধায় হয়েছে, তেমনি রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনায়ও ঘটেছে৷’’
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
বাংলাদেশে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে প্রত্যেকের জীবনযাপন ও ধর্মীয় উৎসবে রয়েছে ভিন্নতা৷ ছবিঘরে রয়েছে আদিবাসী বিভিন্ন গোষ্ঠীর জীবনযাপন ও তাদের উপর নির্যাতনের কথা৷ অধিকাংশ ছবি পাঠিয়েছেন সঞ্চয় চাকমা৷
ছবি: Sanchay Chakma
ধান চাষ
চাকমাদের জীবিকা প্রধানত কৃষি কাজ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমতল অংশে স্বাভাবিক সেচ পদ্ধতিতে মৌসুমী কৃষি কাজ, এবং পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের মাধ্যমে চাকমা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও রবিশস্য উৎপাদন করে থাকে৷
ছবি: Sanchay Chakma
পুরুষ-নারী সমানে সমান
আদিবাসী নারীরা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নারী পুরুষ একসাথে ধানের জমিতে কাজ করছে৷
ছবি: Sanchay Chakma
বাঁশের অঙ্কুর সংগ্রহ
তিন চাকমা নারী বাঁশের অঙ্কুর নিয়ে নৌকায় করে যাচ্ছেন৷
ছবি: Sanchay Chakma
হলুদ সংগ্রহ
এক চাকমা পুরুষ হলুদ সংগ্রহ করে ঝর্ণার পানিতে সেগুলো ধুয়ে নিচ্ছেন৷
ছবি: Sanchay Chakma
স্কুলে যাওয়া
একটি আদিবাসী কিশোরী স্কুলে যাচ্ছে৷
ছবি: Sanchay Chakma
চিংড়ি মাছ সংগ্রহ
দুইটি আদিবাসী বালক-বালিকা ঝিরি (ছোট ঝর্ণা) থেকে চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করছে৷
ছবি: Sanchay Chakma
ঐতিহ্যবাহী কম্বল বোনা
এক চাকমা নারী তাদের ঐতিহ্যবাহী কম্বল বুনছেন৷
ছবি: Sanchay Chakma
জাল দিয়ে মাছ ধরা
জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন আদিবাসী নারী-পুরুষ৷
ছবি: Sanchay Chakma
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বৈসাবি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনা৷
ছবি: Sanchay Chakma
ধর্ষণের শিকার
২১ আগস্ট ২০১২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সি এই ত্রিপুরা মেয়েটি খাগড়াছড়িতে এক পুলিশ কনস্টেবলের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল৷ (ছবি: সুমিত চাকমা)
ছবি: Sumit Chakma
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বাঙালিদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ৷ (ছবি: পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ)
ছবি: Sumaiya Sayed
ধর্ষণের প্রতিবাদ
২০১২ সালে রাঙামাটির সুজাতা নামে এক ১২ বছরের চাকমা কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিল আদিবাসী শিক্ষার্থীরা৷ (ছবি: সুমাইয়া সাঈদ)
ছবি: PCP
কল্পনা চাকমা
১৯৯৬ সালের ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ তার খোঁজ আজও মেলেনি৷ এই ছবিটি এঁকেছেন প্রজ্ঞান চাকমা৷
ছবি: Pragyan Chakma
চাকমাদের উপর বাঙালিদের হামলা
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাঙামাটির বোগাচারিতে তিনটি আদিবাসী গ্রামে হামলা চালায় বাঙালিরা৷ (ছবি: হিমেল চাকমা)
ছবি: Himel Chakma
৫৭ টি বাড়ি পোড়ানো হয়
চাকমাদের ৫৭টি বাড়ি পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়৷ নিঃস্ব হয়ে যায় অনেক পরিবার৷
ছবি: Himel Chakma
খাসিয়া উচ্ছেদ
২০১৬ সালের জুন মাসে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের নাহার পুঞ্জিবাসী খাসিয়াদের উচ্ছেদের নোটিশ জারি করে জেলা প্রশাসন৷ (ছবি: খোকন সিং)
ছবি: DW/K. Singha
৭০০ মানুষ বাস্তুহারার আশঙ্কা
উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রাম নাহার-১ পান পুঞ্জির ৭০০ মানুষকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে৷ বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নোটিশ পাওয়া মানুষদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধই বেশি৷
ছবি: Khukon Singha
সাঁওতালদের উপর হামলা
২০১৬ সালে ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ৷ এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে৷
ছবি: bdnews24.com
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিরোধ
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল৷ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে৷ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে৷
ছবি: DW/K. Singha
19 ছবি1 | 19
তিনি আরো বলেন, পুলিশ যদি দায়িত্ব পালনের নামে অপরাধ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে আইনে কোনো বাধা নেই৷ কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পায়না সাধারণ মানুষ৷ তাছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা থানাও নেয় না৷ আদালতে করলেও তার তদন্ত আসে পুলিশের কাছে, ফলে কোনো লাভ হয় না৷’’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করতে পারার কারণ জানাতে গিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘গাইবান্ধার ঘটনায়ও মামলা হতোনা বা পুলিশকে চিহ্নিত করা হতো না, যদি বিষয়টি নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা না হতো৷ বাংলাদেশে পুলিশের অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিকার পাওয়া যায়না- এটাই প্রচলিত ধারনা৷ তাই মামলাও হয় না৷’’
অন্যদিকে ২০১৩ সালে একটি আইন করা হয়েছে৷ সেই আইন অনুযায়ী পুলিশ হেফাযতে কেউ নির্যাতন বা হত্যার শিকার হলে মামলা করা যায়। কিন্তু ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়া-না-পাওয়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে৷ আইনের ওপর তেমন নয়৷’’
প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার মতামত জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...
এই বিষয়ে আমাদের গত নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন..
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ৷ এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে৷ সেখানে গিয়ে ছবি তুলে এনেছেন খোকন সিং৷
ছবি: bdnews24.com
ঘটনার সূত্রপাত
৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ৷ এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে৷ নিহতরা হলেন শ্যামল হেমব্রম, মংগল মান্ডি, রমেশ টুডু৷
ছবি: bdnews24.com
ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি
সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের উপর গুলির নির্দেশ কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটরা দিয়েছিলেন বলে স্থানীয় থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন৷ সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়৷ তাদের ঘরে আগুন দেয়া হয় পুলিশের উপস্থিতিতেই৷
ছবি: bdnews24.com
উচ্ছেদ অভিযান
পরে পুলিশ-র্যাব ঐ দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এক অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে৷
ছবি: DW/K. Singha
বিক্ষোভের ঝড়
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে৷ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে৷
ছবি: DW/K. Singha
ট্র্যাক্টর দিয়ে চিহ্ন মুছে দেয়া
একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্র্যাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দিয়েছে৷ নির্যাতিত শালনি মুর্ম ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন পুড়ে যাওয়া ভিটা, মসজিদ, গির্জাঘর, মন্দির, ভূমি রক্ষা কমিটির অফিস ঘর৷ যেগুলোর চিহ্ন ট্র্যাক্টর চালিয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: DW/K. Singha
ইতিহাস
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল৷ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে৷ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে৷
ছবি: DW/K. Singha
খোলা আকাশের নীচে কয়েকশ’ পরিবার
চোখে মুখে অজানা আতঙ্ক নিয়ে এখনও খোলা আকাশের নীচে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ ক্যাথলিক মিশন ভিত্তিক সংগঠন ‘মাদার টেরেসা’ তিন কেজি করে চাল, আধা কেজি ভোজ্য তেল, এক কেজি করে আলু সরবরাহ করেছেন ক্ষুদ্র পরিসরে৷ প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল৷
ছবি: DW/K. Singha
ত্রাণ নিতে অস্বীকৃতি
উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য দেওয়া সরকারি ত্রাণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মাদারপুর ও জয়পুর পল্লীর সাঁওতালরা৷
ছবি: DW/K. Singha
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ১৩ নভেম্বর সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শন করে ৬ নভেম্বরের ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে৷ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের উপর হামলায় ইন্ধন দেওয়ার জন্য স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদ ও সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
চার সাঁওতাল গ্রেপ্তার
সংঘর্ষের পর গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ এ ঘটনায় দু’টি মামলা করে৷ গ্রেপ্তার করা হয় চার সাঁওতালকে৷ রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের কোমরে দড়ি ও হাতকড়া পরানো নিয়ে গণমাধ্যমে খবর আসার পর হাইকোর্টে রিট আবেদনটি হয়৷ হাইকোর্টের নির্দেশের পর পুলিশ সাংবাদিকদের দেখলে হাতকড়া খুলে দেয়, সাংবাদিকরা চলে গেলে ফের হাতকড়া লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা৷
ছবি: DW/K. Singha
সাঁওতালদের দাবি
সাঁওতালরা উচ্ছেদকৃত জমিতেই পুনর্বাসন, জমির চার পাশ থেকে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাঁটাতারের বেড়া অপসারণ, আখ চাষ বন্ধ ও তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে৷ এছাড়াও এমপি আজাদ ও ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুলসহ তাদের উচ্ছেদ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে সহযোগিতাকারীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে সাঁওতালরা৷