আগামী জানুয়ারি মাসেই অস্ট্রেলিয়ার হাতে আসতে পারে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক, জানালেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট ও প্রধানমন্ত্রী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে, আগামী জানুয়ারিতে করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ব্যাচ পেতে পারে অস্ট্রেলিয়া৷ বর্তমানে এই প্রতিষেধকের বাস্তবায়নে অস্ট্রেলিয়া সরকার দু'টি গবেষণা দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ৷
এরমধ্যে আছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও আস্ট্রাজেনেকা প্রতিষ্ঠানের দল আর অন্যদিকে, সিএসএল সংস্থার একটি দল, যারা কুইনসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত৷
এই দু'টি দলই বর্তমানে করোনা প্রতিষেধকের কাজে উঠে-পড়ে লেগেছে এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হান্টের মতে, এই দুই প্রতিষেধকই করোনা সংক্রমণের হাত থেকে প্রতিষেধকপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বেশ কয়েক বছরের জন্য নিরাপদ রাখতে সক্ষম হবে, এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷
প্রতিষেধকের দৌড় কদ্দূর?
দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সাফল্যের সাথে পেরোলে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এই প্রতিষেধকের প্রায় ৪০ লাখ ডোজ এসে পৌঁছাবে অস্ট্রেলিয়ায়৷ এই মুহূর্তে, এই প্রতিষেধকের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায়৷
টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে কে কত এগিয়ে
করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অন্তত দশটি দেশে চলছে ১৭০টিরও বেশি প্রচেষ্টা৷ তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি পৌঁছাতে পেরেছে পরীক্ষার শেষ ধাপে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
পৌনে দুইশ’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০ টির বেশি উদ্যোগ৷ একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে৷ তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/B. Guan
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই এখনো প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে৷ এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন৷ সেটি অন্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা৷ ১৩৯ টি প্রচেষ্টা এখনো এই ধাপে আটকে আছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
প্রথম ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়৷ দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা৷ বর্তমানে ২৫টি টিকা রয়েছে এই ধাপে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে আছে ১৫টি ভ্যাকসিন৷ সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য কয়েকশ’ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/University of Oxford
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ৷ কার্যকরীতা, শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনযোগ দেন৷ এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pochard-Casabianca
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ৷ গত জুনে ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স এর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী৷ অন্যদিকে পরীক্ষায় সফল হয়েছে দাবি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের অনুমোদন করেছে রাশিয়া৷ যদিও তাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো সাতটি ভ্যাকসিনের তিনটি চীনের৷ এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সাইনোভেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সাইনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি৷ শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও৷
ছবি: Reuters/J. Akena
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা৷ পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে তার ট্রায়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Sibeko
8 ছবি1 | 8
আস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘এজেড১২২২’ প্রতিষেধকটি বর্তমানে বিশ্বের করোনা প্রতিষেধক প্রস্তুতের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে৷
একদিকে আস্ট্রাজেনেকা ও অন্যদিকে সিএসএল, দুটি প্রতিষেধক সাফল্যের মুখ দেখলে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে আনতে সরকারের মোট খরচ হবে এক দশমিক ২৪ বিলিয়ন, অর্থাৎ ১২৪ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কোটি বাংলাদেশি টাকা)৷
অস্ট্রেলিয়ায় করোনার গতি
সোমবার পর্যন্ত, অস্ট্রেলিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৩২০জন, প্রাণ হারিয়েছেন ৭৬২জন৷
২৬ জুনের পর থেকে সোমবারই সবচেয়ে কম দৈনিক সংক্রমণ (২৪ ঘণ্টায় ৪৫টি নতুন সংক্রমণ) দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায়৷ এর মধ্যে, ৪১টি নতুন সংক্রমণই ছিল ভিক্টোরিয়া রাজ্যে৷
ভিক্টোরিয়ার রাজধানী মেলবোর্নে কড়া লকডাউন ধীরগতিতে নতুন সংক্রমণ কমালেও সেখানে কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন অনেকে৷
এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন সেখানে৷ কড়া লকডাউন এই সংখ্যা আরো বাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে৷