জাপানের দুইটি এলাকায় অ্যালার্ম বাজানো হয়েছে। স্থানীয় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার একটি মাঝারি মাপের মিসাইল পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। ব্যালেস্টিক মিসাইলটি তারা জাপানের উপর দিয়ে ছুঁড়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মিসাইলটি জাপান অতিক্রম করে আরো প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছে। ২০১৭ সালের পর উত্তর কোরিয়া ফের জাপানের উপর দিয়ে ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুঁড়লো।
মিসাইল পরীক্ষা নিয়ে উত্তর কোরিয়া কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান এর তীব্র নিন্দা করেছে। জাপান বিষয়টিকে বর্বরোচিত বলে দাবি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়াও এর তীব্র নিন্দা করেছে। বস্তুত, গত ১০ দিনে এই নিয়ে পঞ্চমবার ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করল উত্তর কোরিয়া। তবে এর আগে জাপানের উপর দিয়ে মিসাইল ছোঁড়ার চেষ্টা করেনি তারা।
উত্তর কোরিয়ায় অনাড়ম্বর প্যারেডের কারণ
উত্তর কোরিয়ার ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার মাঝরাতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে কিম জং উন উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি৷ এছাড়া এবার প্যারেডে কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইলও ছিল না৷
ছবি: KCNA/REUTERS
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্যারেড
উত্তর কোরিয়ার ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার মাঝরাতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে কিম জং উন উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি৷
ছবি: KCNA/REUTERS
করোনার চিহ্ন
আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়া করোনা শনাক্তের কোনো তথ্য দেয়নি৷ তবে সংক্রমণ রোধে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়াসহ কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল৷ প্যারেডে যারা অংশ নিয়েছেন তারা হ্যাজম্যাট স্যুট (হ্যাজার্ডাস ম্যাটেরিয়ালস স্যুট) পরেছিলেন৷ মুখে ছিল মেডিকেল-গ্রেড মাস্ক৷
ছবি: KCNA via REUTERS
তবে দর্শকরা মাস্ক পরেননি
প্যারেডে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের অনেকে মাস্ক পরলেও প্যারেডের দর্শকরা মাস্ক পরেননি৷ এমনকি কিম জং উনের খুব কাছে অনেককে মাস্কহীন অবস্থায় দেখা গেছে৷ মাস্ক ছাড়াই তাদের উনকে ছুঁতে এবং হাত মেলাতে দেখা গেছে৷
ছবি: KCNA/REUTERS
ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল না
এবারের প্যারেডে কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল না৷ যদিও গত অক্টোবরে এক প্যারাডে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখানো হয়েছিল৷ এছাড়া সেসময় কিম জং উন তার বক্তব্যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ক্ষমতা সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছিলেন৷
ছবি: KCNA/REUTERS
অনেকদিন পর ‘রেড গার্ডসের’ উপস্থিতি
১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর চীনা বাহিনী উত্তর কোরিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর ‘ওয়ার্কার-পিজেন্ট রেড গার্ডস’ নামে একটি জননিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল৷ ২০১৩ সালের পর এবার আবার তারা প্যারেডে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: KCNA/REUTERS
অনাড়ম্বর প্যারেডের কারণ
সৌলের নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন বলছেন, প্যারেডে ব্যালিস্টিক মিসাইল না থাকা এবং রেড গার্ডসের উপস্থিতির অর্থ হচ্ছে কিম জং উন অভ্যন্তরীণ ইস্যু যেমন করোনা, অর্থনীতি, জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বিষয় দেখাতে চেয়েছেন৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনায় ভালো অবস্থানে থাকতে চাওয়ার লক্ষ্যে হয়ত ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখানো হয়নি৷
ছবি: KCNA/REUTERS
আলোচনা বন্ধ আছে
উত্তর কোরিয়া যেন পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করে সেই লক্ষ্যে আলোচনা ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন কূটনীতির মাধ্যমে এ ব্যাপারে সফলতা পেতে চান৷ গত জুলাই মাসে আন্তঃকোরীয় হটলাইন চালু হওয়ার পর আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল৷ তবে গতমাসে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ মহড়া শুরুর পর উত্তর কোরিয়া আর ফোন ধরছে না৷
ছবি: KCNA/REUTERS
7 ছবি1 | 7
মিসাইলটি ছোঁড়ার পরেই জাপানের হোক্কাইডো এবং আওমোরি এলাকার মানুষকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বাঙ্কার, মাটির নীচের কেলারে আশ্রয় নিতে বলা হয়। তবে শেষপর্যন্ত দেখা যায়, মিসাইলটি জাপানের উপর দিয়ে গিয়ে আরো তিনহাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া এবং অ্যামেরিকা যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। উত্তর কোরিয়া তার বিরোধিতা করে বলেছে, বিষয়টিকে তারা আগ্রাসন হিসেবে দেখছে। এরপরেই উত্তর কোরিয়া মিসাইল পরীক্ষার গতি বাড়িয়ে দেয়। যদিও জাতিসংঘ জানিয়ে রেখেছে, উত্তর কোরিয়া আর একটিও মিসাইল পরীক্ষা করতে পারবে না। এর জন্য তাদের উপর একাধিক কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া নিষেধাজ্ঞায় আমল দিচ্ছে না।
তবে মঙ্গলবার জাপানের উপর দিয়ে মিসাইল পরীক্ষা পরিস্থিতি আরো সংকটজনক করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, জাপানের উপর দিয়ে মিসাইল ছোঁড়ার বিষয়টিও টেকনিকালি বলা যায় না। কারণ, মিসাইলটি বায়ুমণ্ডলের উপর দিয়ে গেছে। ফলে তা জাপানের আকাশসীমার উপর দিয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে তা জাপানের উপর দিয়ে গেছে বলেই ধরা হবে বলে জানিয়েছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।