পুরুষপ্রধান পেশায় নারীদের প্রবেশ চিরকালই কঠিন ছিল৷ তবে সেই প্রতিরোধ উপেক্ষা করে নারীরা বারবার নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন৷ জাপানে জেলেদের জগতেও নারীরা সেই অধিকার আদায় করে নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ইয়ুমি স্বপ্নেও ভাবেননি যে তাঁকে এক সপ্তাহান্তেরও বেশি সময় এই প্রত্যন্ত উপকূলবর্তী শহরে কাটাতে হবে৷ কারণ, কিছুকাল আগে পর্যন্তও তিনি প্রায় ৫ ঘণ্টা দূরে টোকিও শহরে তথ্যপ্রযুক্তি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ ইয়ুমি বলেন, ‘‘প্রথমবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখন গ্রামগুলি দেখে ভয়ানক লেগেছিল৷ চারিদিকে অন্ধকার, বৃষ্টি হচ্ছিল, বেশিরভাগ বাড়িই খালি ছিল৷''
জেলের পেশায় নারীদের প্রবেশ
তাঁর প্রকল্প সত্যি বিশাল চ্যালেঞ্জে ভরা৷ তিনি প্রায় মৃত এইসব গ্রামকে আবার সতেজ করে তুলতে চান৷ বিশেষ করে জেলেদের জীবনযাত্রাকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে চান৷ কারণ, জাপানে তরুণ প্রজন্ম আরো বেশি করে শহরাঞ্চলে চলে যাচ্ছে৷ ফলে এইসব জায়গায় জন্মের হার কমে চলেছে৷ ইয়ুমি ভাবলেন, যেখানে পুরুষের সংখ্যা কম, সেখানে নারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সমুদ্রে পাঠালে কেমন হয়? কিন্তু সেই আইডিয়া এখানকার মানুষের মোটেই পছন্দ হয়নি৷ অনেকে মনে করেন, মাছ ধরা পুরুষদের কাজ৷ এর জন্য শক্তি লাগে, তাছাড়া এটাই ঐতিহ্য৷ আরো অনেক রীতিনীতির ক্ষেত্রেও নারীদের অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ৷
জাপানে পাখি দিয়ে মাছ ধরা!
জাপানের ‘গিফু’ অঞ্চলে এখনো ১৩০০ বছর আগের মতো পাখি দিয়ে মাছ ধরা হয়৷ পানকৌড়ি দিয়ে মাছ ধরার এই রীতি সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
১৩০০ বছর আগের রীতি...
‘উকাই’ নামের এই বিশেষ মাছ ধরার রীতিতে জাপানের গিফু অঞ্চলের নাগারা নদীতে নামানো হয় পানকৌড়িদের৷ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, মশাল জ্বেলে যখন সেখানের জেলে বা ‘উশো’রা মাছ ধরতে নামেন, সেটা দেখলে মনে হয় সময় এতটুকুও এগোয়নি৷ কিন্তু বাস্তব কিছুটা ভিন্ন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
হারাতে বসা ইতিহাস...
উশোদের ধৈর্য ছাড়া এই ‘উকাই’ সম্পন্ন করা অসম্ভব৷ সূর্য ডোবার পর বিশাল আকারের মশাল জ্বেলে ছোট ছোট ট্রাউট মাছ ধরার এই রীতি অতীতে ইউরোপে প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে তা কেবল চীন বা জাপানেই দেখা যায়৷ এক সময় পৃথিবীর একাধিক দেশে এভাবে মাছ ধরার চল ছিল৷ কিন্তু এখন হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও সেভাবে চোখে পড়ে না ‘উকাই’-এর আয়োজন৷ তবুও জাপানে এই শিল্পকে ঘিরে আস্তে আস্তে বাড়ছে পর্যটন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
পানকৌড়ির প্রশিক্ষণ!
‘উকাই’-এর জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রজাতির পানকৌড়ি, যাদের জাপানের ইবারাকি প্রান্ত থেকে এই অঞ্চলে আসার পর ধরে ফেলেন উশোরা৷ এরপর তিন বছর ধরে চলে তাদের প্রশিক্ষন দেওয়ার পালা৷ প্রশিক্ষণ শেষে প্রতি বছরের মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে এই মাছ ধরা৷ কিন্তু বছরের বাকি সময়েও নিয়মিত অনুশীলন করাতে হয় এই পাখিদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
পোষ মানা পানকৌড়ি
দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় একসাথে বেশ কয়েকটি পানকৌড়িকে৷ উশোর হাতে ধরা দড়ির অন্য অংশ আলগা করে বাঁধা থাকে পানকৌড়ির গলায়৷ লম্বা সময় ধরে প্রশিক্ষণের ফলে পাখিরা মাছ খায় না৷ বরং মাছগুলি ধরে উশোর কাছে এনে দিয়েই আবার লেগে পড়ে মাছ ধরায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
পাঁচ প্রজন্ম ধরে উশো
৪৬ বছরের শুজি সুগিয়ামা তাঁর বাবার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন উশো হবার প্রশিক্ষণ৷ পাঁচ প্রজন্ম ধরে তাঁর পরিবার এই অভিনব ধারায় জীবিকা অর্জন করে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
রাজকীয় ছাড়পত্র...
মাছ ধরার এই রীতি কয়েকশ’ বছর পুরোনো হলেও ১৮৯০ সালে রাজপরিবারের পক্ষে বিশেষ লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়৷ হারিয়ে যেতে বসা এই শিল্পের জন্য রাজকীয় লাইসেন্স পেয়েছেন এমন মাত্র নয়জন উশো বর্তমানে এই কাজের সাথে যুক্ত৷ বছরে আটবার তাঁরা রাজপরিবারের হয়ে মাছ ধরতে নামেন৷ এই কাজের জন্য তাঁদের ৮,০০০ ইয়েন অর্থাৎ ৭১ মার্কিন ডলার বেতন দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
ইউনেস্কোর আশায় উশোরা...
মাছ ধরার এই পদ্ধতি এখন আর বাণিজ্যিকভাবে আগের মতো সফল নয়৷ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন ভর্তুকির উপর নির্ভর করেই চলে বেশির ভাগ উশোর জীবন৷ তবে আজকাল এই অভিনব মাছ ধরা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেক পর্যটক৷ সে কারণেই ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার স্বপ্ন দেখেন জাপানের উশোরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
7 ছবি1 | 7
জাপানে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা৷ ইউমি দ্রুত তার কারণ জানতে পেরেছিলেন৷ ইয়ুমি বলেন, ‘‘আমরা বয়স্ক মানুষ ও তাঁদের মূল্যবোধকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি৷ কিন্তু অন্য জায়গার মতো এখানেও তাঁদের চিন্তাভাবনা বেশিদিন খাটবে না৷ তাঁরা নারীদের সরাসরি হেয় না করলেও পুরুষরা বেশি শক্তিশালী – এমন বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে৷''
পুরুষতান্ত্রিকসমাজে সমস্যা
ইয়ুমি কিন্তু হাল ছাড়েননি৷ এখন এমনকি বয়স্কজেলেরাও তাঁর সঙ্গে কথা বলেন৷ প্রথম শিক্ষানবিশও পাওয়া গেছে৷ তাঁর নাম রিমি৷ এখানেই তাঁর জন্ম৷ শিশু বয়স থেকেই তিনি জেলে হতে চেয়েছিলেন৷ গ্রামে এই ব্যবসা পুরুষতান্ত্রিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো দমে যাননি৷ শিক্ষানবিশ জেলে হিসেবে রিমি বলেন, ‘‘সমুদ্র ও মাছ খুব ভালোবাসি৷ মেয়েদের জন্য বরাদ্দ কাজের বদলে সারা জীবন শারীরিক কসরত করেছি, সক্রিয় থেকেছি৷''
এমনকি যেসব নারী মাছের দামের উপর নজর রাখেন, তাঁরাও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাঁর বিরোধিতা করেছেন৷ তাঁদের মতে, নারীরা শুদ্ধ নয়, প্রতি মাসে তাদের ঋতুস্রাব হয়৷ তারা পানিতে গেলে সমুদ্রের দেবী বেন্টেন রুষ্ট হন৷ পুরানের কাহিনি অনুযায়ী, সেই দেবী শুধু পুরুষদের পানির উপর দেখতে চান৷ ফলে স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, মাছ আসলে পবিত্র এবং মাছ ধরা বিপজ্জনক কাজ৷ তাছাড়া নারীরা সমুদ্রে গেলে সমুদ্রের দেবী অত্যন্ত খামখেয়ালী ও ঈর্ষাপ্রবণ হয়ে ওঠেন৷ তাই মানুষ তাঁকে নৌকায় তুলতে পারে না৷
মাছের মূল্য শরীর!
কেনিয়ায় ভিক্টোরিয়া লেকের আশেপাশের নারীরা মাছ বিক্রি করেই জীবিকা উপার্জন করেন৷ কিন্তু জেলেদের কাছ থেকে মাছ পেতে তাঁদেরকে ভিন্ন রকম এক মূল্য দিতে হয়, আর তা হচ্ছে সেক্স৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
যৌনকর্মের বিনিময়ে মাছ
কেনিয়ার নারীরা ভিক্টোরিয়া লেকের মাছ এনে বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন৷ কয়েক দশক ধরে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন তাঁরা৷ কিন্তু মাছের বিক্রয়মূল্য হিসেবে জেলেরা তাঁদের সাথে যৌনকর্ম করে থাকেন৷ জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ এ নিয়ে কথা বলেছে এই নারীদের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
‘জাবোয়া’ ব্যবসা
তরুণী বয়স থেকেই মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত পেরেজ আনজাঙ্গো৷ ১৪ বছর ধরে আনজাঙ্গো এই ব্যবসায় আছেন৷ ব্যবসার অংশ হিসেবে তাঁকেও জেলেদের সাথে সেক্স করতে হয়৷ স্থানীয়রা এই ব্যবসাকে ‘জাবোয়া’ বলে ডাকেন৷ তবে এখন ওয়ার্ল্ড ভিশনের মতো কিছু সংস্থা তাঁদেরকে ‘জাবোয়া’ থেকে বের হয়ে আসার পথ দেখাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
ভিক্টোরিয়া লেকে লিঙ্গবৈষম্য
ভোরের আলো ফোটার আগেই নৌকা নিয়ে বের হয়ে পড়েন জেলেরা৷ তবে এ কাজে শুধু পুরুষদেরই অধিকার রয়েছে৷ নারীদের কখনই নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যেতে দেয়া হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
বিক্রির পালা
সকালে যখন জেলেরা মাছ ধরে ফেরত আসেন, তখন মাছ নেয়ার জন্য অনেকেই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী৷ বাজারে চাহিদা সবচেয়ে বেশি ‘ওমেনা’ নামের এক ধরনের মাছের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
‘সঠিক’ জেলে
জেলেরা যখন ফেরত আসেন, মাছের পরিমাণ দেখেই নারীরা বুঝে নেন, কোন জেলের কাছে গেলে তাঁর চাহিদামতো মাছ পাওয়া যাবে৷ এক ঝুড়িতে ৩৫ কেজি ওমেনা জায়গা হয়, আর এর দাম হচ্ছে প্রায় ১০০০ কেনিয়ান শিলিং (৮.৫০ ইউরো/৮৫০ টাকা)৷ দাম চুকানোর পর বাড়তি মূল্য হিসেবে করতে হয় সেক্স৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
চাহিদা বনাম যোগান
কিন্তু নারীরা কেনো এই পদ্ধতি মেনে নিচ্ছেন? উত্তর খুব সহজ৷ কারণ মাছের চাহিদার তুলনায় যোগান একেবারেই কম৷ ফলে জেলেরা এর বিনিময়ে যে কোনো কিছুই আদায় করে নেয়৷ ভিক্টোরিয়া লেকের পাড়ে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু দূষণ এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে মাছের সংখ্যা কমছে দ্রুতই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
ভালো সম্পর্ক গড়তে গিয়ে
সবার আগে সবচেয়ে ভালো মাছ পেতে তাই জেলেদের সাথে একটু অন্যরকম ‘বন্ধুত্ব’ করতে হয় নারীদের৷ হয় মাছ ধরতে যাওয়ার আগে অথবা পরে, সেক্স করতে হয় জেলেদের সাথে৷ একটু ভালো খাতিরের ফলে হয়ত কখনো কখনো অন্যদের তুলনায় ভালো এবং বেশি মাছও মিলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্যা
‘জাবোয়া’ এখন কেনিয়া ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী উগান্ডা এবং তানজানিয়াতেও৷ এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
উপায় কি?
আয়ের নতুন উৎস খুঁজে নেয়াই ‘জাবোয়া’ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায়৷ বিভিন্ন সংস্থা এই নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে৷ সিন্ডো শহরের এই নারী আগে জাবোয়া-র ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকলেও, এখন বানান কাদামাটির চুলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
নিজেদের মাছ
মাছের জন্য জেলেদের ওপর নির্ভর না করে নিজেরাই মাছ চাষ করা শুরু করেছেন অনেকে৷ টেনিস কোর্টের অর্ধেক সাইজের এক পুকুরে মাছ চাষ করছেন আনজাঙ্গো ও তাঁর পরিবার৷ আনজাঙ্গোর এক মেয়ে এখন বাজারে মাছ বিক্রি করতে যায়, কিন্তু তাঁদের আর কখনই যেতে হয় না ভিক্টোরিয়ার পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Forster
10 ছবি1 | 10
রিমির বাবাও একেবারেই চাননি যে মেয়ে সমুদ্রে পাড়ি দিক৷ তিনি জাপানি ভাষায় ‘আকানে' বলে দিয়েছিলেন৷ অর্থাৎ ‘ব্যস, কোনো তর্ক নয়'৷ তা-ও পানির কাছে থাকতে রিমি বছরের পর বছর ধরে বন্দরে এসে ছিপ দিয়ে মাছ ধরেছেন৷ রিমি বলেন, ‘‘প্রতিদিন চিৎকার শুনতে পেতাম, এত অহংকারী হয়ো না৷ ভেবো না নারী বলে আমরা তোমার প্রতি ভালো আচরণ করছি৷ আমাদের অবহেলা করো না৷ সেটা আমার জন্য কঠিন ছিল৷''
ধৈর্য্যের সুফল
অনেক বছর এমনভাবে কেটে গেল৷ প্রতিদিন সকালে পুরুষরা সমুদ্রে পাড়ি দিতো, তিনি একা পেছনে থেকে যেতেন৷ তারপর টোকিও থেকে ইয়ুমি সেখানে এলেন৷ তিনি রিমিকে জেলে হিসেবে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিলেন৷ রিমি ‘হ্যাঁ' বলতে দেরি করেননি৷ তখন থেকে তিনি নিজের পূর্বপুরুষদের পেশা গ্রহণ করে ইয়ুমির পাশে থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ বিশাল জাল থেকে হাতে করে মাছ বেছে নিচ্ছেন৷
মাছ ধরার কাজ শুরু করতে ইয়ুমির বেশ সময় লেগেছে৷ তাঁর তো কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ ছিল না৷ তদিন পর্যন্ত শেখার স্বার্থে সবকিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ ইয়ুমি বলেন, ‘‘নৌকায় কী ঘটছে, প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে আমাকে তা জানতে হয়৷ আমাকে সেই জায়গার বাস্তব সম্পর্কে জেনে তবেই গ্রামাঞ্চলে মৎসশিল্পের উন্নতি ও তাকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে তোলার কথা ভাবতে হয়৷''
জেলেরাও দ্রুত বুঝে গেলেন যে,নারীরা সত্যি তাঁদের সাহায্য করতে পারেন৷ তখন থেকে ক্যাপ্টেন সমুদ্রের দেবীর কাহিনির ভিন্ন ব্যাখ্যা শুরু করলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই দেবী নিজেও তো নারী৷ তাহলে কেন অন্য নারীদের বিরোধিতা করতে যাবেন?''
অবশেষে তিনি সেই অনুমতি দিলেন, যাকে স্থানীয় জেলেরা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করেন৷ তিনি নারীদের সঙ্গে মিলে সমুদ্রের দেবীর বন্দনা শুরু করেছেন৷ সেই দেবীরও তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে৷ সকালে অনেক মাছ ধরা পড়েছে, সমুদ্রও শান্ত ছিল৷
জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের মাছ
মাছে-ভাতে বাঙালি বলে কথা৷ হ্যাঁ, বাঙালির সেই রসনা মেটাতেই রুই, কাতলা, ইলিশসহ বাংলাদেশের প্রায় সব মাছই আজকাল পাওয়া যায় জার্মানিতে৷ সে গল্পই থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাংলাদেশি মাছের বাজার
বাঙালি যে দেশেই বসবাস করুক না কেন, তাদের মাছ চাই৷ আর দেশীয় মাছ হলে তো কথাই নেই৷ জার্মানির বেশ কিছু শহরে তাই বাংলাদেশি পণ্যের দোকান রয়েছে, যেখানে মাছ ছাড়াও পাওয়া যায় অন্যান্য অনেকরকম খাবার৷
ছবি: DW/N. Sattar
বন শহরে বাংলাদেশি মাছের বাজার
এ দোকানে ইলিশ, রুই, কাতলা, চিংড়ি, পাবদা, কাজলি, পুটি, কেচকি, রূপচাঁদা ছাড়াও নানারকমের ছোট ও বড় মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/N. Sattar
বিশাল আকারের হিমায়িত রুই
কোলন শহরে রয়েছে বাংলাদেশি খাবারের দোকান৷ বড় বড় আস্ত রুই মাছগুলো এভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসে৷ ক্রেতারা যে যেভাবে যতটুকু চান, তাঁকে সেভাবে দোকান থেকেই ইলেকট্রনিক ছুড়ি দিয়ে মাছ কেটে দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
স্বাদ করে সাধের ইলিশ খাওয়া
সারা বছরই অনেক বাঙালি নানাভাবে ইলিশ খান৷ তবে ১লা বৈশাখে ইলিশ চাই-ই চাই৷ যে কারণে অনেকে আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে ইলিশ কিনে ফ্রিজে রেখে দেন তাঁরা, পাছে ফুরিয়ে যায়৷ ইলিশ ছাড়া কি বাঙালির ১লা বৈশাখ জমে!
ছবি: Eesha Kheny
সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি মাছের দোকান ফ্রাংকফু্র্টে
জার্মানির বাণিজ্য নগরী ফ্রাংকফুর্ট৷ সেখানে সরাসরি বাংলাদেশ বা লন্ডন থেকে মাছা আনা হয়৷ আর কোলন, বন বা অন্যান্য শহরের ব্যবসায়ীরা মাসে এক বা দু’বার মাছসহ অন্যান্য বাংলাদেশি পণ্য আনতে ফ্রাংকফুর্টে যান৷ মাঝে মাঝে অবশ্য তাঁরা লন্ডন থেকেও এ সব পণ্য নিয়ে আসেন৷ জানালেন বনের বাংলা শপের মালিক রিপন সাহেব৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাঙালির আবেগ
জার্মানিতে এমন বাঙালিও আছেন, যাঁরা নিজের দেশের ফ্রোজেন মাছ ছাড়া তৃপ্তি করে ভাতই খেতে পারেন না৷ জার্মানির স্বাস্থ্যকর তাজা মাছে তাঁদের পেট ভরলেও মন যে ভরে না!
ছবি: DW/N. Sattar
ছোট মাছ
ছোট মাছের চচ্চরি! আহারে কি দারুণ স্বাদ! তা হোক না ফ্রোজেন, তাতে কি?
ছবি: DW/N. Sattar
শুটকি মাছ
শুধু ফ্রোজেন মাছ নয়, জার্মানির বাজারে ভোজন রসিক বাঙালির প্রিয় শুটকি মাছও রয়েছে৷
ছবি: DW/N. Sattar
মাছের মূল্য
রুই মাছ প্রতি কেজি পাঁচ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ’শ টাকা৷ আর এক কেজি ইলিশ মাছের দাম এক হাজার তিন’শো টাকা৷ অনেকেরই প্রিয় দেশি চিংড়ি মাছ৷ যার মূল্যও ইলিশের মতোই৷ বাংলাদেশি ৮০০ টাকা প্রতি কেজি পাবদা মাছের দাম৷