প্রযুক্তি নির্ভর বিনোদন, খরচ বৃদ্ধির মতো নানা কারণে জাপানের চিড়িয়াখানাগুলোতে ভিড় কমছে৷ এক সময়ের বনের রাজা খ্যাত সিংহের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
জাপানে বন্যপ্রাণীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে সিংহ কেনা সম্ভব নয়৷ তবে জাপানের ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়াম' বা যাজা-র প্রায় ৩০০ সদস্য রয়েছে, যারা এসব প্রাণী বিক্রি করতে পারে৷ মেরু ভাল্লুক, জনপ্রিয় হাতি আর পান্ডা শাবকের মতো কিছু প্রজাতির চাহিদা সবসময়ই রয়েছে, যেগুলো দর্শনার্থীদের সবসময়ই কাছে টানে৷
বুনো প্রাণী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেপ জাপান-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণী ব্যবসায়ী স্যুওশি শিরাওয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জাপানে এখন সিংহ খুবই সস্তায় পাওয়া যায়, প্রতিটি চিড়িয়াখানা এবং বন্যপ্রাণী পার্কগুলোতে সিংহের চাহিদা আগে অনেক বেশি ছিলো এবং সিংহকে সবচেয়ে বড় শিকারী হিসাবে দেখা হতো৷ এখন সিংহের জনপ্রিয়তা কমে গেছে৷ প্রাণীগুলো শিশু অবস্থায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সমস্যা শুরু হয় বড় হলে৷'' একটি সিংহের মূল্য ১০০,০০০ ইয়েন অর্থাৎ ৮১২ ইউরো বা ৯৬৬ ইউএস ডলারের কমও হতে পারে৷ তবে বিনামূল্যে সিংহ দিয়ে দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে বলে তিনি জানান৷
অন্যদিকে পোষা প্রাণীর দোকানে একটি বিড়াল ছানার মূল্য সিংহের দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪০০,০০০ ইয়েন বা ৩,২৪৮ ইউরো৷ টোকিও ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কেভিন শর্ট বলেন, ‘‘সিংহ লালনপালন ব্যয়বহুল, সিংহের খিদে বেশি পায়, তাছাড়া জাপানে মাংসের মূল্যও অনেক বেশি৷ সিংহের জন্য খাঁচার প্রয়োজন, বেবি বা সিংহ শাবকরা দর্শকদের কাছে টানতে পারে, তবে প্রাপ্তবয়স্ক সিংহদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেক কম৷''
চিড়িয়াখানার প্রধান লক্ষ্য দর্শনার্থী এবং জাপানের জনসংখ্যা কমার ফলে স্বাভাবিকভাবেই দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে৷ জনসংখ্যা কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ আরো ৫০ মিলিয়ন মানুষ কমে যাবে৷ শিশুদের নিয়ে তাদের তরুণ মা-বাবারাও আর চিড়িয়াখানায় যাবেনা৷
সিংহের প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিনোদন৷ এযুগের শিশু, তরুণদের চিড়িয়াখানা বা বন্যপ্রাণীর প্রতি আগ্রহের পরিবর্তে অনলাইন গেমস বা প্রযুক্তি নির্ভর বিনোদনে বেশি আগ্রহ৷
এনএস/জুলিয়ান রিয়াল
পরিযায়ী প্রাণীরা যেভাবে দেশ থেকে দেশান্তরে যায়
প্রতি বছর সুমেরু থেকে আফ্রিকা হয়ে পৃথিবীর দূরদূরান্তে পাড়ি দেয় পরিযায়ী প্রাণীরা৷ ছবিঘরে দেখুন এমনই কিছু পরিযায়ী প্রাণীদের যাত্রার গল্প...
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO/E. u. H. Pum
এক মেরু থেকে আরেক মেরুতে
সুমেরুনিবাসী টার্ন পাখি প্রতি বছরই প্রবল শীতের হাত থেকে বাঁচতে উড়াল দেয়৷ কুমেরু পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে কেটে যায় পৃথিবীর উত্তরার্ধ্ব ও দক্ষিণার্ধের দুটি গ্রীষ্মকাল৷ সেকারণেই এই ছোট পাখিটি অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো পায়৷ ৩৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথ পেরোনো এই পাখি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পরিযায়ী যাত্রায় সফল প্রাণী৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO/E. u. H. Pum
চেষ্টায় অনড় স্যামন মাছ
টার্ন পাখির সাফল্য যেমন দীর্ঘ পথ উড়ে যাওয়ায়, সেভাবেই স্যামন মাছের বৈশিষ্ট্য নিঃসন্দেহে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে আসায়৷ নদীপথ বেয়ে স্রোতের সাথেই এই মাছ সমুদ্রে পৌঁছায়৷ কিন্তু শীতকালে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে ঘরে ফেরা খুব কঠিন৷ তা করতে মাঝে মাঝে স্যামন মাছকে ঝর্ণাও পেরোতে হয়৷ কিন্তু ঘরে ফিরেও শান্তি নেই৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ফিরতি পথে ক্লান্ত মাছের অপেক্ষায় রয়েছে ক্ষুধার্ত ভালুক, ঈগল বা মানুষ৷
ছবি: Imago/ZUMA Press/J. Mather
মধ্যরাতের যাত্রী
আফ্রিকার খড়রঙা ফ্রুট ব্যাট বা বাদুড় গোটা দিন কাটায় গাছের ডালে ঝুলে৷ কিন্তু সূর্যাস্তের পর থেকে গোটা রাত ধরে এই বিশেষ প্রজাতির বাদুড়গুলি প্রায় ১৮০ কিলোমিটারের দূরত্ব উড়ে যায়৷ যেতে যেতে বিভিন্ন গাছের বীজ, ফুলের পরাগ ছড়াতে থাকে৷ কোনো কোনো বিশেষ সময়ে এরচেয়েও লম্বা পথ পাড়ি দিতে পারে আফ্রিকার জাম্বিয়া অঞ্চলের এই ‘মেগাব্যাট’৷
ছবি: imageBROKER/picture-alliance
ত্বকের যত্ন নিচ্ছে তিমিরাও!
মেরু অঞ্চল থেকে উষ্ণতর অঞ্চলে আসতে প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম তিমি৷ বিজ্ঞানীরা এক সময় ধারণা করেছিলেন যে, সন্তানের জন্ম দিতেই গরম অঞ্চলে আসে তারা৷ কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, তা ঠিক নয়৷ বরং নিজেদের ত্বকের যত্ন নিতেই এমনটা করে থাকে তিমি৷ বরফজমা পানিতে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে তিমির ত্বকে রক্ত চলাচল থেমে যায়, ত্বকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও থাকে৷ গরম পানিতে সেই সমস্যা সমাধান হয়৷
প্রজাপতির মতো একটি ছোট ও ঠুনকো প্রাণীও যে লম্বা পথ পার করতে পারে, তা কল্পনা করা কঠিন হলেও বাস্তব৷ মনার্ক প্রজাতির প্রজাপতি তিন হাজার কিলোমিটার উড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণের ক্যালিফোর্নিয়া বা মেক্সিকো পর্যন্ত অনায়াসে যায়৷ ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়া এই প্রজাপতিদের শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে৷
ছবি: M. Watson/picture-alliance/Mary Evans Picture Library
তৃতীয় চোখ যে কচ্ছপের
লেদারব্যাক প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায় ক্যানাডা, ক্যারিবিয়ান সাগরের উপকূলে, আলাস্কায় ও ইন্দোনেশিয়াতেও৷ কিন্তু দশ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয় কিভাবে এই প্রাণীটি? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই কচ্ছপের মাথার ওপরে, দুই চোখের মাঝে একটি ছিদ্র থাকতে পারে, যা সরাসরি পিনিয়াল গ্ল্যান্ডের সাথে যুক্ত৷ এর ফলে, এই ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে কচ্ছপকে বোঝায় যে, এখনই পথে নামার সময়৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
খাবারের খোঁজে দলে দলে...
আফ্রিকার সেরেংগেটি-মারা অঞ্চলে প্রতি বছরই দেখতে পাওয়া যায় পরিযায়ী প্রাণীদের অদ্ভূত দৃশ্য৷ বৃত্তাকার একটি পথে একসাথে ঘুরতে থাকে প্রায় ১৫ লাখ বন্য হরিণ, জেব্রা ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের ঝাঁক৷ পথে সাবধান থাকতে হয়, কারণ তাজা খাবার ও পানির পাশাপাশি এই পথে রয়েছে মাংসাশী কুমির, সিংহ ও নেকড়েও৷
ছবি: S. Meyers/picture-alliance/blickwinkel
খাবার বয়ে আনে যারা...
পেঙ্গুইনের ধীরগতিতে চলার কথা আমরা জানি৷ এই ধীরগতিতেই নিজেদের বাসস্থানের ১০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ডিম পাড়ে তারা৷ কখনো মা, কখনো বাবা এই দীর্ঘপথ পেরিয়ে শিশুদের জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ ধীরগতিতে চলার কারণে এই যাত্রায় অনেক সময় লাগে৷ তাই খিদে পেলেও সেই খাবার খায় না বাবা বা মা পেঙ্গুইন৷ কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে থেকে সেই খাবার শিশুর জন্য সংরক্ষণ করে৷