মঙ্গলবার রিয়াধগামী বিমান থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ওই ব্যক্তিকে। বুধবার তাকে আদালতে তোলার কথা।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি আরবের দূতাবাসে খুন হন সাংবাদিক এবং লেখক জামাল খাশগজি। সৌদির বিভিন্ন বিষয়ের কড়া সমালোচক ছিলেন তিনি। খাশগজি খুনের ঘটনায় বুধবার ফরাসি পুলিশ ৩৩ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। ফ্রান্স থেকে সৌদি আরবগামী একটি বিমানে উঠে পড়েছিল সে। ফরাসি পুলিশ বিমান থেকে তাকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করে। ২০১৯ সালে ওই যুবকের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করেছিল তুরস্ক।
তুরস্ক এবং ফরাসি পুলিশের অভিযোগ, ওই যুবক সৌদি আরবে রয়্যাল গার্ডের কাজ করতো। খাশগজি মামলার সঙ্গে সে সরাসরি যুক্ত এবং তার সূত্রে আরো অপরাধীদের নাম পাওয়া যাবে। বুধবার ফরাসি আদালত ঠিক করবে ওই ব্যক্তিকে তুরস্কের হাতে তুলে দেওয়া হবে, না কি ফ্রান্সেই তার বিচার হবে।
জামাল খাশগজি: রহস্যময় অন্তর্ধান ও মৃত্যু
সৌদি সাংবাদিক তিনি৷ ছিলেন সরকারের সমালোচক৷ ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাস থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেলেন৷ বারবার বদলেছে তাঁর নিখোঁজ হওয়া বা মৃত্যু নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য৷ ছবিঘরে দেখুন কী কী ঘটেছে এ পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Martin
যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন
তুর্কি বাগদত্তা হাতিজে জেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে যান সাংবাদিক জামাল খাশগজি৷ কিন্তু এরপর আর বের হননি৷ তাতেই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকা তাঁর বাগদত্তা হাতিজে উদ্বিগ্ন হয়ে খবরটি ছড়িয়ে দেন৷
ছবি: Reuters TV
সংশয়ের ডালপালা মেলা শুরু
৩ অক্টোবর: তুর্কি ও সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন খাশগজি সম্পর্কে৷ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দাবি করে, কাজ শেষে বেরিয়ে গেছেন খাশগজি৷ তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলে যে, দূতাবাস থেকে বেরই হননি তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Mayo
হত্যার অভিযোগ
৬ অক্টোবর: তুরস্কের প্রশাসন জানায়, সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাশগজিকে হত্যা করা হয়েছে৷ যে পত্রিকায় খাশগজি নিয়মিত লিখতেন, সেই মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁকে হত্যা করতে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল আসে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
আঙ্কারা চায় প্রমাণ
৮ অক্টোবর: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান সৌদি আরবের কাছে খাশগজি যে বেরিয়ে গেছেন সে প্রমাণ দেয়ার দাবি জানান৷ তুরস্ক দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশি করার অনুমতি চায়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Kovacs
অনুমতি দেয় রিয়াদ
৯ অক্টোবর: দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশির অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ২ অক্টোবর একটি ভ্যান দূতাবাসে প্রবেশ করে৷ এরপর সেটি সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাসায় যায়৷ এতে বিতর্ক আরো মাথাচাড়া দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Giannakouris
অর্থনীতিতে ধাক্কা
১২ অক্টোবর: খাশগজির ঘটনায় ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার রিচার্ড ব্রানসন তাঁর ভার্জিন গ্রুপের মহাকাশ প্রকল্পে সৌদি আরবের এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা থামিয়ে দেন৷ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন যোগ দেয়াও বাতিল করেন তিনি৷ উবার, জেপি মর্গানসহ বড় বড় কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাও একই সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
অনুসন্ধান বন্ধ নেই
১৫ অক্টোবর: তুর্কি তদন্তকারী দল দূতাবাসে তল্লাশি চালায়৷ প্রায় আট ঘন্টা ধরে এই তল্লাশি চলে এবং তদন্তকারীরা ভবন, বাগানের মাটি ও একটি ধাতব দরজা থেকে কিছু নমুনা নিয়ে আসেন৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
হাতাহাতি থেকে মৃত্যু
১৯ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার খাশগজির মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে৷ তারা বলে যে, হাতাহাতি করতে গিয়ে দূতাবাসে মারা যান খাশগজি৷ তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, ‘হত্যার কোনো আষাঢ়ে গল্প’ মেনে নেবে না আঙ্কারা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রিয়াদের ব্যাখ্যা ‘অপর্যাপ্ত’ বলে আখ্যা দেন৷
ছবি: Getty Images/C. McGrath
‘চরম ভুল’
২১ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার আবার কথা পাল্টায়৷ তারা বলে, ওই সাংবাদিকের মৃত্যু দুর্বৃত্তদের কারণে হয়৷ এটাকে ‘বিরাট ও চরম ভুল’ বলে আখ্যা দেয় তারা৷ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করে তারা৷ রিয়াদ বলে যে, সাংবাদিকদের লাশ কোথায় তা তাদের জানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Owen
অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জার্মানি
২১ অক্টোবর: আঙ্গেলা ম্যার্কেল ঘোষণা দেন যে, জামাল খাশগজির হত্যার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি করবে না জার্মানি৷ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পর সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
10 ছবি1 | 10
২০১৮ সালে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হয় খাশগজিকে। তাকে মেরে দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়, যাতে তাকে চেনা না যায়। ঘটনার পরে তুরস্ক ২০ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তুরস্কের আদালতে তাদের বিচার চলছে। তবে মূল হত্যাকারী এবং চক্রান্তকারীর বিষয়ে এখনো জানা যায়নি। মনে করা হচ্ছে, ফ্রান্সে আটক ব্যক্তি সে বিষয়ে আলোকপাত করতে পারবে।
সৌদি আরবের বক্তব্য
সৌদি আরব জানিয়েছে, খাশগজি হত্যার বিচার সম্পূর্ণ হয়েছে। সৌদির জেলে এই অপরাধে পাঁচজন আটক। প্রথমে তাদের ফাঁসি হয়েছিল, পরে ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়। ফলে ফ্রান্সের গ্রেপ্তার নিয়ে তারা আদৌ উৎসাহী নয়। তুরস্ক এবং ফ্রান্সের দাবিও তারা সমর্থন করছে না।
ফরাসি কূটনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং বিন সালমান। এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর ডিসেম্বরেই সৌদি সফরে যাওয়ার কথা। সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার তাতে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।