প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন নিয়ে সমঝোতায় আসতে বিএনপির প্রতি সম্প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার শর্ত দিয়েছেন৷ এ নিয়ে ফেসবুক এবং ব্লগে চলছে নানা আলোচনা৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে, সামহয়্যার ইন ব্লগে মোরতাজা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘...মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে কথা আপনি দিনের পর দিন বলে আসছেন এবার তার বাস্তবায়ন করুন এবং সেটি অতি দ্রুততার সাথে৷ এটা করার জন্য আপনি ম্যানডেট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷ সুতরাং এ কাজে আপনার দেরি, আপনার আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে৷''
এ প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যের উল্লেখ করে সে ব্যাপারে তাঁর নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন৷ জামায়াতকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আদালতে মামলা আছে৷ তাই এখনই তাঁরা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছেন না৷ এ ব্যাপারে মোরতাজার প্রতিক্রিয়া এরকম, ‘‘আমরা প্রায় সবাই জানি আইন, আদালত এসব ক্ষমতার পদতলে লুটিয়ে পড়ে থাকে সবসময়, সারা বিশ্বজুড়ে... বাংলাদেশের আদালত তো স্বাধীন, কিন্তু পাখনাটা অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা৷ জুয়েল আইচের জাদুর মতন৷ পুরাই পাঙ্খা৷ সে যা-ই হোক, সরকার চাইবে আর হবে না, এমন সাধ্য কার! আদালতে এখন তো মানিক সাহেব, সিনহা বাবুরা আছেন৷ এরপরেও সরকারের সমস্যা হলে, এটাকে বলতে হবে দুর্ভাগ্য৷''
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
নির্বাচন নিয়ে ব্লগ আর ফেসবুকে আলোচনা এখনো চলছে৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে কয়েছ আহমদ বকুল ‘ব্যর্থ সরকারের চেয়ে ব্যর্থ বিরোধী দল মারাত্মক' শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘দশম জাতীয় সংসদে এক অর্থে কোনো বিরোধী দল নেই... একটি সরকার বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়, হতে পারে৷ কিন্তু বিরোধী দল ব্যর্থ হয় একটিমাত্র কারণে, আর তা হচ্ছে জনসাধারণের অসম্পৃক্ততা৷ সরকার ব্যর্থ হলে কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থতার গ্লানি থেকে উত্তোরণ হওয়া যায়৷ কিন্তু ভুল পথে সরকার পরিচালিত হওয়ার প্রাক্কালে, বা সরকার দুর্নীতিগ্রস্থ হলে, অগণতান্ত্রিক বা জনবিরোধী কাজে সরকার লিপ্ত হওয়ার পর সরকারকে সঠিক পথে ফেরাতে বিরোধী দল ব্যর্থ হলে তা হয় খুবই দুঃখজনক ও মারাত্মক৷''
একই ব্লগে আব্দুল হালিম মিয়া বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দীন প্রামাণিককে নিয়ে তাঁর নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন৷ তিনি লিখেছেন ১৯৯০ সালে তৎকালীন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ইমাজউদ্দীন প্রামানিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল৷ পরিচয় পর্বের বর্ণনাটা তিনি দিয়েছেন এভাবে, ‘‘...আশেপাশের সবার সাথে পরিচয় পর্বের সময় শুরু হলো গল্প-গুজব৷ আমার পাশেই একজন কাঁচাপাকা চুল, কিছুটা জীর্ণ শীর্ণ মুখাবয়ব, হালকা পাতলা গড়নের এক ভদ্রলোক৷ নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন৷ আমাদের কার নির্বাচনে কত টাকা খরচ হয়েছে গল্প শুনে তিনি বললেন তাঁর নিজের কোনো টাকা পয়সা তো খরচ হয়ই নি, বরং তার পকেটে উল্টো চল্লিশ হাজার টাকা জমা পড়েছে৷ অর্থাৎ মান্দা উপজেলার জনগণ চাঁদা তুলে তার নির্বাচনি খরচ জুগিয়েছেন এবং সব খরচের পর আরো টাকা বেঁচে গিয়েছে৷''
ব্যক্তি ইমাজউদ্দীন প্রামাণিককে ব্লগার আব্দুল হালিম মিয়া উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘‘...একজন পোড় খাওয়া, মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, যাকে বলে সত্যিকার তৃণমূলের নেতা, সততার আলোকে উজ্জ্বল একজন মানুষ৷''