জামায়াতের তিন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি
৩১ মে ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁয় সাতজনকে হত্যার পাশাপাশি আরও অনেককে আটকে রেখে নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠণ ও অগ্নিসংযোগের মত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷
দণ্ডিত আসামিরা হলেন- নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টু, মো. নজরুল ইসলাম ও মো. শহিদ মণ্ডল৷ তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক; বাকি দুজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করে৷ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার এবং কে এম হাফিজুল আলম৷
১৪৪ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপে আদালত বলেছে, এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের যে তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল, তার সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে৷
আসামিদের মধ্যে রেজাউল করিম মন্টু ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলার আমির ছিলেন৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মন্টু তখন থেকেই জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন৷ বাকি দুই আসামি জামায়াতের সমর্থক৷
তাদের পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ৷ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, আবুল কালাম আজাদ ও তাপস কুমার বল৷
তিন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত
দল৷ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে৷
পরের বছর মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করে বিচার শুরু হয়৷ প্রসিকিউশনের ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে৷ সেই যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৬ মে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে৷
আসামিদের মধ্যে রেজাউল করিম মন্টুকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে জয়পুরহাট দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়৷ শহিদ মণ্ডল ও ইসহাক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয় একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি৷
আসামি রেজাউল করিম মন্টু সর্বশেষ জয়পুরহাট সদরে থাকতেন৷ জেলা শহরের প্রফেসর পাড়ায় যে বাসায় তিনি থাকতেন সেটি পিরিচিতি পেয়েছেরাজাকার বিল্ডিং নামে৷
আর পলাতক নজরুল ইসলাম থাকতেন ঢাকায় তেজগাঁওয়ে৷ শহীদ মণ্ডলের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী থানার চাঁপাডাল গ্রামে৷
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ
অভিযোগ ১
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর বিকাল আনুমানিক ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রানাহার গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব আলী, আকাম উদ্দিন, আজিম উদ্দিন মণ্ডল, মোজাফফর হোসেনকে হত্যাসহ ওই সময় ১০-১২টি বাড়ি লুট করে অগ্নিসংযোগ করে৷
অভিযোগ ২
১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র মো. নুরুল ইসলামকে হত্যা করে৷ এসময় তারা ১৫-২০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে৷
অভিযোগ ৩
১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিকাল আনুমানিক ৫টা থেকে এবং পরদিন ৯ অক্টোবর আনুমানিক বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়ে নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের মো. কেনার উদ্দিন এবং মো. আক্কাস আলীকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করে৷ পরে অপহরণ করে জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে হত্যা করে৷ ওই সময়ের মধ্যে আসামিরা ৪০ থেকে ৫০টি বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)