রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট৷ এই রায়কে ব্লগাররা স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এক ধরণের শঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন৷ কেউ বলছেন, বিষয়টা হয়ত আওয়ামী লীগের জন্য শুভ হলো না৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে ইশতিয়াক ইসলাম খান লিখেছেন, ‘‘আমি জানি না, হাইকোর্টের এ আদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো কিনা, আমি বুঝি না, এই আদেশের ফলে জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না, আমি শুধু এতটুকু জানি, জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে আমার দেশের হাইকোর্ট একটি মতামত দিয়েছে, আমি বুঝি, আমার দেশের সরকার এই সংগঠনের প্রতি তাদের অনমনীয়তার একটি চিত্র দেখিয়েছে, আমি শুধু অনুভব করি, শুধু যাতে আমি নিশ্বাস নিতে পারি সেজন্য প্রাণ দেয়া ৩০ লক্ষ রাম-রহিমের নিশ্বাস আজ একটু কম ভারী হবে, আমি জানি, আজ বেঁচে থাকা কোনো বীরাঙ্গনার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা হলেও সুখের অশ্রু ঝরবে, আমি শুধু এটুকু বিশ্বাস করতে চাই মনে প্রাণে এই দেশে কখনো কোনোদিন এমন কোনো সংগঠন আর থাকবে না, যারা এদেশের জন্মই চায়নি৷''
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়েত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ জামায়াত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে৷ এদিকে দাবি উঠেছে, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
‘‘জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল’’
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (০১.০৮.১৩) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ইনায়েতুর রহিম এবং কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন৷ রায়ে বলা হয়, ‘‘জামায়াতের গঠনতন্ত্র শুধু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
২০০৯ সালের রিটের রায়
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হাইকোর্টে রিট করেন ২০০৯ সালে৷ রিটে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়, জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর৷ সেই রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করলেন আদালত৷
ছবি: Reuters
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
আদালতের রায়ের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জানান, রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ সেজন্য ইতিমধ্যে রায়ের কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ‘‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেদলের কিছু নেতার হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জামায়াত৷’’
ছবি: AP
ট্রাইব্যুনালে বিচার
জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায় অস্বীকার করলেও ২০১০ সালে গঠিত ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে৷ এই ছবিঘর তৈরির দিন (০১.০৮.১৩) অবধি ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল৷ সর্বশেষ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
এদিকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পর দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হয়েছে৷ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও সরকার এতটা সাহসী হবে বলে আশা করেন না৷ মুনতাসির মামুনের কথায়, ‘‘জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল৷ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে তা বলাও হয়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্লগারদের সতর্ক প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণার আগেই ফেসবুকে আরিফ জিবতেক লিখেছেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়টা কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়া মামলা না৷ মামলাটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে জামায়াত আইনসিদ্ধভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে বিবেচনা৷’’ এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার চাই, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়া আমার মাথাব্যথা নাই৷’’
ছবি: privat
এই দাবি নতুন নয়
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর মোট তিনবার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ১৯৫৯ এবং ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ ১৯৭৯ সালের ২৫শে মে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়৷
তবে সামহয়্যার ইন ব্লগে হাসান নাঈম লিখেছেন, ‘‘প্রাথমিক সংবাদে যা বুঝা গেল তার সারমর্ম হচ্ছে পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে সংবিধানে যখন ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' উপস্থিত ছিল তখন জামায়াতের নিবন্ধন ঠিক ছিল৷ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিষয়টি তুলে দিয়ে সেক্যুলারিজম (ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা) সংবিধানে সংযোজনের ফলেই জামায়াতের নিবন্ধন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে বিধায়, তা বাতিল করা হলো৷ মূল সমস্যাটা হয়েছে জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ‘সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ' এই বিশ্বাসটি – যা নতুন সেক্যুলার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক৷ অর্থাৎ এই নিবন্ধন বাতিল জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার জন্য নয় বরং আওয়ামী লীগের করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য৷''
একই ব্লগে রেজা সিদ্দিক লিখেছেন, ‘‘জামায়াত নিষিদ্ধ হলে কি হবে? জামায়াতের লোকগুলো তো হাওয়া হয়ে যাবে না? এরা আশ্রয় নেবে বিভিন্ন দলের মাঝে৷ তবে বড় কথা হলো এরা যেখানেই থাকুক জামাতের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করবে৷....সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো কি নিজেদের মুক্ত রাখতে পারবে জামায়াতের অদৃশ্য প্রভাব থেকে?''