জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে৷ ভারত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন পরিস্থিতি৷ জামায়াতের প্রার্থীদের দিকে বিশেষ নজর রাখছে দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ভারত সরকার৷ দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে অধিকাংশ জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে৷ প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঞ্চলের একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত নেতাদের সমর্থন দিয়ে আসছে বলে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে৷ এ কারণে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াত প্রাথীদের মনোয়ন দেয়ার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়েই পর্যবেক্ষণ করছে দেশটির সরকার৷
ভোটারদের যা যা জানতে হবে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন বাকি৷ ভোট দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার৷ কিন্তু এই অধিকার প্রয়োগের সময় একজন ভোটারকে কী কী নিয়ম মানতে হবে সেই বিষয়ে ধারণা আছে কি? জেনে নিন আপনার করণীয়:
ছবি: bdnews24.com
ভোট স্লিপ আবশ্যক
ভোটকেন্দ্রে আপনার সঙ্গে ভোট স্লিপ অবশ্যই থাকতে হবে৷ ওয়ার্ড কাউন্সিল থেকে আপনার বাড়িতে সেই স্লিপ পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যে৷ অনেক এলাকায় প্রার্থীরা স্ব-উদ্যোগে তা সরবরাহ করেছেন৷ যদি না পেয়ে থাকেন, তবে নিজ এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলে গিয়ে খোঁজ করুন৷ অথবা ইউনিয়ন পরিষদ ও চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আছে আপনার ভোট স্লিপ৷ সংগ্রহ করে নিন৷
ছবি: bdnews24.com
জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে না
অনেক ভোটার মনে করেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট দেওয়া যাবে না৷ এটি একদমই ভুল ধারণা৷ তাই ভোটার আইডি বা স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেছে বলে ভোট দিতে যাবেন না, এমন ভাবনা থেকে বের হয়ে আসুন৷ তবে ইভিএম এ ভোট দিতে গেলে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যাওয়া উত্তম নতুবা আঙুলের ছাপ দিয়ে আপনাকে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট দিতে হবে৷
ছবি: bdnews24
ভোট যখন যন্ত্রে
৯০০ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে৷ ইভিএমে স্মার্ট কার্ড বা আঙ্গুলের ছাপ বা ভোটার নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে একজন ভোটারকে সনাক্ত করা হবে৷ বামপাশে প্রার্থীদের প্রতীক ও ডানপাশে নাম থাকবে৷ ভোট দানের জন্য পছন্দের প্রতীকের বামপাশে কালো বোতামে চাপ দিতে হবে৷ এতে পছন্দের প্রতীকের পাশের সাংকেতিক বাতি জ্বলে উঠবে৷ এর পর ডানপাশের সবুজ বোতামে চাপ দিয়ে ভোট নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: bdnews24.com
যা কিছু নিষিদ্ধ
ভোটকেন্দ্রে ভোট স্লিপ ছাড়আ আর কিছুই নেওয়া যাবে না৷ কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ, ম্যাচ, লাইটার, ধারালো বস্তু এমন সব কিছুই নিষিদ্ধ৷ ব্যাগ বহনেও নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এমনকি মোবাইল ফোনও নিতে পারবেন না৷ ফোন যদি নিতেই হয়, তবে সেটি বন্ধ রাখতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেলফি চেক-ইনে মানা!
যে-কোনো উৎসব আয়োজনে এখন সেলফি বা চেক-ইন না দিলে আনন্দটাই যেন মাটি৷ কিন্তু এই সেলফি বা চেক-ইনে রয়েছে কঠোর মানা৷ ভোটকেন্দ্রে ঢোকার পর আপনি আপনার মোবাইল চালু রাখতে পারবেন না৷ কেন্দ্রের ভেতরের কোনো ছবি বা ব্যলটের ছবি অথবা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে চেক-ইন দেওয়া একদমই নিষেধ৷ ভোট কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে নিশ্চিন্তে চেক-ইন দিতে ও সেলফি তুলতে পারবেন৷
ছবি: Getty Images/T. Ohsumi
পোশাকে নেই বাধা, তবে...
ভোট দিতে আপনি যে-কোনো পোশাক পরে যেতে পারেন৷ তবে যদি আপনি নেকাব পরে থাকেন, তবে পোলিং এজেন্টের অনুরোধে একবারের জন্য সেটি খুলে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হতে পারে৷
ছবি: DW
ব্যালট পেপার ভাঁজ করুন
ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর মার্কায় সিল দেওয়ার পর এমনভাবে ভাঁজ করে ব্যালট বাক্সে ফেলতে হবে যাতে সিলের কালি অন্য মার্কায় না ছড়ায়৷ নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে ব্যালট ভাঁজ পদ্ধতি দেখিয়ে পরমর্শমূলক বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে৷ সেটি দেখে নিন৷ ব্যালটের ভাঁজ ঠিক না হলে আপনার ভোট বাতিল হতে পারে৷
ছবি: DW
সঙ্গে থাকবে একজন
কোনো ভোটার বৃদ্ধ, অসুস্থ বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলে সঙ্গে একজন সহায়তাকারী নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে সহায়তাকারীর সঙ্গে ভোটার আইডি থাকতে হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
টেন্ডার ভোট!
ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যদি দেখেন আপনার ভোট আগেই দিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে, তাহলে হতাশ না হয়ে ভোটার স্লিপ, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারলেই নিজের ভোটটা দিতে পারবেন৷ প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর সই করা ব্যালটে আপনার সিল গ্রহণ করবেন এবং সেটি তাঁর কাছে রেখে দেবেন এবং গণনার সময় এটি যুক্ত করবেন৷ এই ভোটকে বলা হয় ‘টেন্ডার ভোট’৷
ছবি: Mustafiz Mamun
9 ছবি1 | 9
বাংলদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে৷ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে জামায়তে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২০ জনের নির্বাচনি এলাকাই পশ্চিমবঙ্গের খুব কাছাকাছি৷ বাকি ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে দু'জন সিলেট থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন৷ সিলেট ভারতের আসামের কাছের একটি বিভাগ৷ জামায়াতের আর দু'জন প্রার্থী বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ কুমিল্লা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সংলগ্ন৷ যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামায়েতের কেন্দ্রীয় নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ পিরোজপুর ভারতের কলকাতা থেকে ১৬০ কিলোমিটারের মধ্যে৷ সীমান্তের কাছাকাছি জামায়াত প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারটিকে ভারত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বলে বিবেচনা করে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়৷
এদিকে‘কেন বাংলাদেশের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ'এই শিরোনামে গত ২২ ডিসেম্বর একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের দৈনিক দ্য হিন্দু৷সেখানে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে এসেছিল উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় ভারত৷ দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অতটা সহজ হতো না৷