জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ‘ইসলামী' রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামছে। নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন যখন এগিয়ে আসছে, তখনই কেন দাবিদাওয়া, আন্দোলন?
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।এদিকে জাতীয় সংস্কার কমিশনের মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যুগপৎ আন্দোলনে যারা নামছেন, তারা মনে করে, সরকার ইচ্ছা করলে এই দাবি পুরণ করে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন করতে পারবে।ছবি: Privat/DW
বিজ্ঞাপন
তাদের পাঁচ দফার সাথে এ আন্দোলনে শরিক না হওয়া এনসিপির দাবির বেশ মিল।
জামায়তে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস গত সোমবার আলাদাভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তাদের দাবিগুলো একই। সবার পাঁচ দফা দাবিতে রয়েছে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালু, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও দুর্নীতির বিচার এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এই তিনটি দলের বাইরেও যারা যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে তারা হলো: নেজামে ইসলাভেমী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি(জাগপা)। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা এই যুগপৎ আন্দোলনের সাথে নেই। তবে অধিকাংশ দাবির সাথে তারা একমত। এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদও সেই পাঁচ দফা দাবির সাথে মোটামুটি একমত এবং এনসিপির মতো তারাও যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকছে না।
বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনেপিআর পদ্ধতি চালুর বিপক্ষে । জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি আদালতের বিচারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছে তারা।
বিএনপি মনে করে, জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল যেভাবে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মতো জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ চাইছে তা ঠিক নয়।
নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা-সংশয়
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েও মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সাথে কথা বলেছেন রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা।
জনমনে স্বস্তি ফেরেনি, নির্বাচন হবে কীভাবে?: রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার তিনটি কারণ আছে। প্রথমত, জনজীবনে স্বস্তি ফেরেনি, এর মধ্যে নির্বাচন হবে কীভাবে? দ্বিতীয়ত, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আরও কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার ছিল। যেমন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনি যাত্রায় শামিল করার দরকার ছিল, যেটা তারা করেনি। তৃতীয়ত, সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনবিরোধী অবস্থান নিয়েই কথা বলছে। ফলে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ছবি: DW
রাজনৈতিক অনৈক্য ও নিরাপত্তাহীনতা নির্বাচনে বাধা : মনিরা শারমিন, যুগ্ম আহবায়ক, এনসিপি
মানুষের মধ্যে শঙ্কার অনেক কারণ আছে। মূলত দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়নি। এটা নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এখন তো সবার মাঠে থাকার কথা। বিশেষ করে একটি দল যারা শুরু থেকেই নির্বাচনের কথা বলছে তারাও কিন্তু মাঠে নামেনি। তারাও জানে, রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না৷ মানুষ গত তিনটা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনহীনতার একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
ছবি: Privat
জামায়াত-এনসিপির শর্ত শঙ্কা তৈরি করেছে : ডা. জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কতগুলো যৌক্তিক কারণেই সংশয় তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। মূল দল জামায়াত ও এনসিপি নানা ধরনের শর্ত দিচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। যেগুলো দেখে মনে হতে পারে তারা নির্বাচন চায় না। এটাই মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি করেছে। এই মুহূর্তে সবার নির্বাচনের মাঠে থাকার কথা। কিন্তু জামায়াত-এনসিপি যেসব শর্ত দিচ্ছে সেগুলো পূরণ না হলে তারা নির্বাচন করবে না। ফলে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তো আছেই।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচন ছাড়া সরকারের বিকল্প নেই : রোকসানা খন্দকার, আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি দল শর্ত দিচ্ছে, এটা না হলে, ওটা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। এই শর্তের কারণে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে যতই শঙ্কা থাক, বর্তমান সরকার কিন্তু বুঝতে পেরেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এতে মানুষ দারুনভাবে ক্ষুব্ধ। ফলে যত শঙ্কাই থাক না কেন, নির্বাচন দেওয়া ছাড়া এই সরকারের কোন বিকল্প নেই।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আইন শৃঙ্খলা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ: মোস্তফা ফিরোজ, সিনিয়র সাংবাদিক
তিনটা দলকে গুরুত্ব দেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে জামায়াত ও এনসিপি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। তাদের এই দাবির কারণে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আর বিএনপিও অগোছালো। তারেক রহমান দেশে নেই, প্রার্থী বাছাই করে যে তারা মাঠে নামবে সেটাও দেখা যাচ্ছে না। এসব কারণে অনিশ্চয়তা। আর আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশ আসলে প্রস্তুত না। সেনাবাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণেও শঙ্কা বেড়েছে।
ছবি: Privat
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে : সাইদুর রহমান, রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক, ইত্তেফাক
ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আছে। ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরেকটি চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনকে কঠিন সংকটের মুখোমুখী ফেলতে পারে। সেটি হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিস-ইনফরমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দেয়া। ভোট না হওয়া পর্যন্ত শঙ্কা থাকবে। এখনো নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ চাই : অর্পিতা সাহা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে আমি চাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। এই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। যেখানে প্রতিটি দল সমান সুযোগ পাবে। আমার প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন সরকার নির্বাচিত হবে, যারা সত্যি জনগণের আশা ও কল্যাণ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি। তাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্ভয়ে ভোট দিতে চাই : রাতুল হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জনগণ ভেবেছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হবে পরিবর্তনের প্রতীক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, দুর্নীতি কমাবে, উন্নয়নের গতি বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ব্যর্থতাই বেশি। জনগণের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। একেবারেই স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক, যেখানে কোনো দল বিশেষ সুবিধা না পায়। জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে আমি নির্ভয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই।
জাতীয় নির্বাচনে একজন তরুণ ভোটার হিসাবে আমার প্রধান প্রত্যাশা হলো সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া। আমি চাই শিক্ষা, কর্মসংস্থান প্রযুক্তিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হোক। দুর্নীতি কমানোসহ নারী হিসাবে আমার সমান সুযোগ ও নিরাপদ পরিবেশ প্রত্যাশা করি। সবশেষে, আমি এমন নেতৃত্ব চাই যারা ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়বে।
ছবি: Privat
নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু হয় : আবু বকর অনিক, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আমি এখনও কোন নির্বাচনে ভোট দেইনি। জীবনে প্রথম ভোট দেবো রাকসু নির্বাচনে। আর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে চাই। সেই নির্বাচনটি যেন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারে এবং একজন প্রকৃত স্বদেশপ্রেমী প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
10 ছবি1 | 10
হঠাৎ আন্দোলন
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।এদিকে জাতীয় সংস্কার কমিশনের মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যুগপৎ আন্দোলনে যারা নামছেন, তারা মনে করে, সরকার ইচ্ছা করলে এই দাবি পুরণ করে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন করতে পারবে। তবে বিএনপি পুরো বিষয়টিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে৷ তারা মনে করে, এই দাবির নেপথ্যে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এসব আন্দোলনকে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করার পাঁয়তারা হিসেবে দেখার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করে দলটি।
যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসার আগের দিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, "জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।”
উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাবে সব দলই মোটামুটি একমত। তবে দুই কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নেই। যারা আন্দোলনে যাচ্ছেন, তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে চাচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, "পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির জবাব বিএনপি রাজপথেই দেবে।”
সংস্কার কমিশন ও সংস্কারের প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশের সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ছবিঘরে থাকছে সেসব সংস্কার প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ।
ছবি: bdnews24.com
নির্বাচন কমিশন সংস্কার
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রায় ১৫০টির কাছাকাছি সুপারিশ করেছে কমিশন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, উচ্চ কক্ষের জন্য নির্বাচন, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেয়া ও জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট হলে পুনরায় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সংবিধান সংস্কার
সংবিধান সংস্কার কমিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে প্রধান করা হয়। ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিশন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংসদের আসন বাড়ানো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Ponir Hossain
বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সচিবালয়, বিচারক নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন, হাই কোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চ, জেলা ও উপজেলা আদালত স্থাপনসহ নানা সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, বিচারকদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পুলিশ সংস্কার কমিশন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভ্যারিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Nazmul Hasan/DW
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয় এবং কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে ৪৭টির মতো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা শক্তিশালীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
জনপ্রশাসন সংস্কার
জনপ্রশাসন সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগকে আলাদা করা, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কারের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ছবি: bdnews24.com
6 ছবি1 | 6
তার কথা, "যে-কোনো রাজনৈতিক দল তার গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাঠে যেতে পারে, রাজপথে যেতে পারে, জনগণের সামনে যেতে পারে। আমাদের যে বক্তব্য আমরাও সেটা মাঠে দেবো, জনগণের সামনে দেবো৷ মাঠের জবাব আমরা মাঠেই দেবো-জনগণ যেটা গ্রহণ করবে সেটা দেখা যাবে।”
আর বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়স সহ-সম্পাদক এবং সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তিনটি কারণে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলন শুরু করছে। প্রথমত, তারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পেছাতে চায়৷ দ্বিতীয়ত, বিএনপি যাতে ক্ষমতায় না যেতে পারে তা ঠেকানো এবং তৃতীয়ত, মানুষের কাছে প্রমাণের চেষ্টা যে বিএনপি একঘরে।”
তার কথা, " তারা মনে করে, এখন নির্বাচন হলে তারা যদি ২০টি সিট পায়, নির্বাচন পিছিয়ে গেলে তাদের আরো কিছু সিট বাড়বে।”
"আসলে এখনো তো ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। আরো একমাস চলবে। তার আগেই এই ধরনের মাঠের কর্মসূচি তারা কার বিরুদ্ধে দিয়েছে, সেটাই তো আমরা বুঝতে পারছি না। তারা নিজেরাই তো স্ববিরোধিতার মধ্যে আছে। তারা তাদের কথা বলতেই পারে। তবে এটা নিয়ে যদি দেশে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার দায় জামায়াতে ইসলামী এবং তার সহযোগীদেরই নিতে হবে,” বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তার কথা, "অন্তর্বর্তী সরকারকেই বিষয়গুলো দেখতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে কেউ যদি বাধার সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা জনগণের কাছে যাবো। জনগণই জবাব দেবে।”
কেমন ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর?
13:05
This browser does not support the video element.
জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, " কোনো দলের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নয়। আমরা সরকারের কাছে আমাদের দাবি দিয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেটা সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ করার জন্যই আমাদের পাঁচ দফা দাবি। আরো অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের সাথে একমত। সামনে যেন ফ্যাসিবাদমুক্ত সরকার হয়, সেজন্যই নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার এবং যারা সংশ্লিষ্ট, তারা আন্তরিক হলে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন সম্ভব। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবো।”
তার কথা, "কোনো সংঘাত হবে কেন? আমরা তো কোনো সংঘাতের কর্মসূচি দেইনি। আমরা তো আমাদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি দিয়েছি। আর বিএনপি এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও মানতে চায়নি। বলেছিল, নিরপেক্ষ বলতে কেউ নাই। পরে কিন্তু তারাই দাবির মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছে।”
জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল আন্দোলন শুরু করছে কারণ তারা বিএনপিকে একঘরে করতে চায়: রুমিন ফারহানা
This browser does not support the audio element.
জামায়াতের সাথে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিক বলেন, "আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করে এখনই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের এজেন্ডাতে সেটা নাই৷ এই কারণে আমরা শঙ্কিত। ফলে আমরা সরকার, বিএনপি, সবার নজরে আনার জন্য, জনগণকে জানাতে আন্দোলনে যাচ্ছি। বিএনপি আমাদের দাবির বিরোধী। কিন্তু আমরা চাই বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের মতো কোনো দলে পরিণত না হয়, বিএনপির পরিণতি যেন আওয়ামী লীগের মতো না হয় আমরা সেটাই চেষ্টা করছি। আমরা বিএনপিকে সহযোগিতা করছি। তবে তারা যদি আমাদের দাবির সাথে একমত না হয়, তাহলে আশঙ্কা করছি- বিএনপির পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে।”
এই যুগপৎ আন্দোলনের আরেক শরিক নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মুসা বিন এজহার বলের, "ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা চলবে। আলোচনা আলোচনার জায়গায় থাকবে। আন্দোলনও চলবে। আমাদের দাবি যদি পুরণ হয়, তাহলে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো।”
তার কথা, "জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে নির্বাচন করতে হবে। আর জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে। তাই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের আগে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, "তাদের দাবির সাথে আমরা মোটামুটি একমত হলেও আমরা যুগপৎ আন্দোলনে থাকছি না। আমরা চাই, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হোক। এটা নিয়ে রাজপথে কোনো খারাপ পরিস্থিতি হোক তা আমরা চাই না।”
যে ছয়টি বিষয়ে পরিবর্তন চান সব শ্রেণি, পেশার মানুষ
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ দুর্নীতি, নারীবিদ্বেষ, চাঁদাবাজি, নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতা ও অনৈক্য - এই ছয়টি বিষয় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Arafatul Islam/DW
‘দুর্নীতি, বিচারহীনতা রয়ে গেছে, আমাদেরকে এসব সমস্যা দূর করতে হবে’: ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সংগীতশিল্পী
২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আগে যে সকল সমস্যা ছিল, যেমন, দুর্নীতি, বিচারহীনতা- তার সবই রয়ে গেছে৷ আমাদেরকে এসব সমস্যা দূর করতে হবে। নির্বাচনে ফিরতে হবে, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ফেরাতে হবে, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বৈরশাসকদের যেসকল অপরাধ ছিল তার বিচার করতে হবে।
ছবি: DW
‘যে মুক্তির স্বপ্ন দেখে নারীরাও পথে নেমেছিল, সেই মুক্তি আজ নারীবিদ্বেষী সামাজিকতার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে’: ড.নাভিন মুরশিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক
জুলাই অভ্যুত্থানের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এবং হতাশাজনক যে পরিবর্তনটি আমরা দেখছি, তা হলো, তীব্র নারীবিদ্বেষ। আমার কাছে সবচেয়ে দুঃখজনক এটাই যে, যে মুক্তির স্বপ্ন দেখে নারীরাও পথে নেমেছিল, সেই মুক্তি আজ নারীবিদ্বেষী সামাজিকতার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
ছবি: DW
‘নির্বাচিত সরকার আসলে দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে আশা করি’: আমিরুল ইসলাম, সিএন জি চালক
জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে দেশে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ আগে দেশে যে সকল সমস্যা ছিল তা এখনো রয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। দেশে একটি সুস্থ নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার আসলে দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে আশা করি৷
ছবি: DW
‘স্বপ্ন ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে’: মীর হুযাইফা আল মামদূহ, গবেষক
শেখ হাসিনার পতনের প্রক্রিয়াতে যেভাবে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাতে আমাদের সবার একটা আশা তৈরি হয়েছিল যে, আমরা হয়ত এমন একটা রাষ্ট্র পাবো, যেই রাষ্ট্র কল্যাণরাষ্ট্র হবে, যাতে কেউ কোনো পরিচয়, বিশ্বাস কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে বিচার্য হবে না, বরং সব ছাপিয়ে নাগরিক তার মর্যাদা পাবে। কিন্তু নানা কারণেই তা আর হয়নি, সেই স্বপ্ন ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে।
ছবি: DW
‘দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ও দলের স্বার্থের প্রাধান্য বেশি’: সৌমিক আহমেদ, অভিনেতা ও উদ্যোক্তা
জুলাই আন্দোলনের আশা-প্রত্যাশা একটাই ছিল - পরিবর্তন আর মুক্তি। কিন্তু সাধারণ মানুষের আর পরিবর্তন হয়নি, সে একই হানাহানি, রেষারেষি যেন আমাদের রক্তে মিশে গিয়েছে। বর্তমানেও দেশের স্বার্থ থেকে ব্যক্তি ও দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখা যাচ্ছে, যা মোটেও কাম্য ছিল না।
জুলাইয়ের গণভ্যুত্থান মানুষের ভেতরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু আজ বর্ষপূর্তির আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে—এই আশা কতটা পূরণ হয়েছে?বাস্তবতা বলছে, সেই প্রত্যাশার অনেকটাই অপূর্ণ। ‘জুলাই স্পিরিট’ আজ বিভক্তির রাজনীতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত। কার ভূমিকা কতটা ছিল—তা নিয়ে কৃতিত্বের লড়াই শুরু হয়েছে, যার ফলে বৈষম্যবিরোধী ঐক্যটিই ভেঙে পড়েছে।
ছবি: DW
‘চাঁদাবাজি, খুন, হত্যা বেড়েই চলেছে’: অদ্বিতীয়া, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত তে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, বিশেষ করে মানুষের নিরাপত্তার যে বিষয়টা, সেটা কোনোভাবেই এখন নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রায় রোজ অপরাধ হয়েই যাচ্ছে, আর অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। চাঁদাবাজি, খুন, হত্যা বেড়েই চলেছে। কোন সমাধান হচ্ছে না বা সমাধানের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
ছবি: DW
7 ছবি1 | 7
আর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "এখনো তো ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার জন্য আরো একমাস সময় আছে। কমিশনের সময় তো বাড়ানো হয়েছে। ফলে, আমরা মাঠের কোনো আন্দোলনে আপাতত যাচ্ছি না। আমাদের দাবি নিয়ে আমরা কথা বলছি। আমরা তো গণপরিষদ নির্বাচন চাই আগে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, সংবিধান সংস্কার এগুলো গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই করা সহজ। আর আমরা তো উভয় কক্ষে পিআর চাই না, আমরা চাই উচ্চ কক্ষে।”
তার কথা, "এইসব বিষয় নিয়ে মাঠের রাজনীতি উত্তপ্ত করে কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ হোক তা আমরা চাই না। আর শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের দাবি পুরণ না হয়, তাহলে তখন আমরা আন্দোলনের কথা চিন্তা করবো।”
এদিকে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, "এই সময়ে যেগুলা ইস্যু না কোনো রাজনৈতিক দল যদি সেগুলোকে সামনে আনে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু আমাদের কথা হলো, দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। তাই কোনো সময় নষ্ট না করে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মনযোগী হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে এক সঙ্গে নিয়ে সরকারকে নির্বাচনি যাত্রায় শামিল হতে হবে।”
"এটা যদি সরকার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। তখন দেশি-বিদেশি অপশক্তি সুযোগ নেবে,” মনে করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন," আসলে জামায়াতকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপিকে শক্তি দেখাতে চাইছে। সেই কারণেই তারা রাজধানী, জেলাসহ সারাদেশে ধারবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা এর মাধ্যমে নির্র্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে সুবিধা নিতে চাইছে। আরেকটা বিষয় হলো, এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনের আগে একটা রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করতে চাইছে। আসলে তারা কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাই পরিস্কার না। আবার সব ভোট একবাক্সে আনার কথাও বলছে তাদের কেউ কেউ।”
"এখানে যে ইস্যুগুলো সামনে আনা হচ্ছে, তার সবগুলোর ব্যাপারে কিন্তু এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ একমত নয়। আগে শোনা যাচ্ছিলো তারাও থাকবে। কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনে তারা নাই। আছে জামায়াতসহ কিছু ইসলামী দল। তারা চাইছে সবাইকে এক জোট করে বিএনপিকে চাপে ফেলতে। আর জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে বিএনপি আসলেই চাপে পড়বে। কারণ, বাকি সবাই নির্বাচন বর্জন করলে তখন নির্বাচনের জন্য বিএনপির সঙ্গে কেউ থাকবে না। ফলে জাতীয় পার্টির থাকা বিএনপির জন্য জরুরি,” বলেন তিনি।
নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে যারা নতুন নতুন দাবী তুলছেন তাদের মধ্যে সরকারের টিমও আছে: রোখসানা খন্দকার
This browser does not support the audio element.
তার কথা," আমি মনে করি না যে, এটা মাঠের সংঘাতে রূপ নেবে। তবে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা আমি দেখছি।”
আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকারের কথা হলো," জামায়াত এবং তার সঙ্গে যারা আছে, তারা মনে করছে সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় না। তারা নানা হিসাব করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তারা ভালো করায় তারা মনে করছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে তাদের রাজনীতির মাঠের অবস্থা আরো ভালো হবে। তাই তারা নির্বাচন পিছাতে চায়। তারা মনে করে, আরো পরে নির্বাচন হলে হয়তো তারা ক্ষমতায়ও যেতে পারে।”
সামনে যেন ফ্যাসিবাদমুক্ত সরকার হয় সেজন্যই নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে: এহসানুল মাহবুব জুবায়ের
This browser does not support the audio element.
"তারা একই সাথে নির্বাচন চাইছে আবার বলছে, ‘আমাদের দাবী না মানলে আমরা নির্বাচনে যাবো না।' শেষ সময়ে এসে তারা নতুন নতুন ইস্যু সামনে আনছে। এতেই তাদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়,” বলেন তিনি।
তার কথা, " নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে যারা নতুন নতুন দাবি তুলছেন, তাদের মধ্যে সরকারের টিমও আছে। তাহলে তো সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই সরকারকেই সব কিছু পরিস্কার করতে হবে। তা না হলে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”
জামায়াত ও তাদের সসমনা ইসলামি দলগুলো ১৮ (বৃহস্পতিবার) সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহর ও ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। এরপর আবার নতুন কর্মসূচি দেবে। পর্যায়ক্রমে তাদের আন্দোলন আরো কঠোর করবে তারা।