1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করায় ড. কামালের ধমক

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাঁকে ‘খামোশ' বলে ‘দেখে নেয়ার' হুমকিও দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন৷

Bangladesch Kamal Hossain and BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir
ছবি: bdnews24

ওই সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘জামায়াতকে নিয়ে আপনাদের সর্বশেষ অবস্থান কী?'' প্রশ্ন শুনেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন গণফোরামের সভাপতি৷

ড. কামাল হোসেনকে প্রশ্নটি করেছিলেন  বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ভাস্কর ভাদুরী৷ ঘটনাটি জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ড. কামাল হোসেন আগে বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে কোনো ‘বৃহত্তর ঐক্যে' তিনি যাবেন না৷ সেই প্রেক্ষাপটেই আমি তাঁকে প্রশ্নটি করেছিলাম৷ কিন্তু উনি জবাব না দিয়েই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন৷ উনি বলেন, প্রশ্নই ওঠে না৷ বেহুদা কথা বল৷ কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ?  তোমার নাম কী? জেনে রাখব তোমাকে৷ চিনে রাখব৷ পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা কর তোমরা৷ আশ্চর্য! উনি কয়েকবার বলেছেন, কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ, কত পয়সা পেয়েছ৷ আমি তোমাকে দেখে নেব৷ আমি আরেকটি প্রশ্ন করার চেষ্টা করছিলাম, সেই প্রশ্নটি করতেই পারিনি৷ তখন উনি বলেন, শহীদদের কথা চিন্তা কর৷ এটা কি হে হে করার জয়গা৷ তোমরা হে হে করছ! শহীদদের কথা চিন্তা কর৷ চুপ কর৷ চুপ কর৷ খামোশ৷ পরে তিনি বলেন, আশ্চর্য! তোমার নাম কী? কোন পত্রিকার? কোন টেলিভিশন, জেনে রাখলাম৷''

‘উনি জবাব না দিয়েই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন’

This browser does not support the audio element.

এ সময় পাশে থাকা দুই একজন নেতা কামাল হোসেনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু আরেকজন সাংবাদিক এ সময় প্রশ্ন চালিয়ে গেলে ধমকে ওঠেন ড. কামাল৷ কোন প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন করেছেন, জানতে চাইলে সাংবাদিক ভাস্কর ভাদুরী বলেন, ‘‘এর আগেও আমি কয়েকজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ কথা বলেছি, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে৷ তাঁরা আমাকে বলেছেন, তাঁরা আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধীদের দেখতে চান না৷ সে কারণেই আমি স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে ড. কামালকে প্রশ্ন করেছিলাম৷''

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷ তবে তাঁর দল গণফোরামের প্রশিক্ষন সম্পাদক ও লেখক রফিকুল ইসলাম পথিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে তো স্বাধীনতাবিরোধী কেউ নেই৷ জামায়াতকে নির্বাচন কমিশন থেকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ ফলে জামায়াত তো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না৷ তবে হ্যাঁ, যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারা কয়েকজন ব্যক্তি৷ তারা যদি এখন কোনো খারাপ কাজ করে, তখন ব্যবস্থা নেয়া যাবে৷ আর স্বাধীনতাবিরোধী কোথায় নেই? প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নেই, শেখ সেলিম সাহেব বিএনপি নেতার সঙ্গে আত্মীয়তা করেননি? তাহলে এখানে এসব নিয়ে কথা হচ্ছে কেন? আর ড. কামাল সাহেব তো জামায়াতের সঙ্গে যাননি৷ উনার সঙ্গে বিএনপি আছে৷ এখন বিএনপির সঙ্গে জামায়াত নেতাদের একটা সম্পর্ক আছে, সেটা যেভাবেই হোক, তার দায়-দায়িত্ব তো ড. কামাল হোসেন নেবেন না৷'' ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হিসেবে কী দায় ড. কামাল হোসেনের উপর বর্তায় না? এ প্রশ্নের জবাবে জনাব পথিক বলেন, ‘‘আমরা তো স্বীকারই করছি না৷ তাহলে আমাদের উপর কেন দায় বর্তাবে? এটা ঠিক নয়৷''

শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানান৷ জোটের নেতাদের মধ্যে জেএসডির আসম আবদুর রব, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক ও রেজা কিবরিয়া, বিএনপির আবদুস সালাম এবং গণস্বাস্থ্য  কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন৷ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, লোভ লালসা নিয়ে লুটপাট করছে, তাদের হাত থেকে এই দেশকে মুক্ত আমরা করবই৷ যত শক্তিধর হোক তারা, দেশের মালিক জনগণের কাছে তাদের নত হতে হবে, তাদের পরাজয় হবেই৷'' এরপরই প্রশ্ন করেন সাংবাদিক ভাস্কর ভাদুরী৷

‘এখানে এসব নিয়ে কথা হচ্ছে কেন?’

This browser does not support the audio element.

ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলা

এদিকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার সকালে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার সময় তাঁদের গাড়িবহরে হামলা হয়৷ জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিকের গাড়িসহ ৬/৭টি গাড়ির ভাংচুরের শিকার হয়৷ ঢাকা-১৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু ও আসম আবদুর রবের গাড়ি চালকসহ ১০/১২ জন নেতা-কর্মী হামলার এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা দাবি করেন৷ আহতদের কয়েকজনকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷

গণফোরামের প্রশিক্ষন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কামাল হোসেনসহ জোট নেতারা বেরিয়ে এসে মূল ফটকের সামনে গাড়িতে ওঠার পর হামলার ওই ঘটনা ঘটে৷ তিনি বলেন, ছাত্রলীগ- যুবলীগের একদল সন্ত্রাসী লাঠি-সোঁটা নিয়ে এই হামলা চালায়৷ তিনি বলেন, ‘‘এরপর এমন আর কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব৷ আমাদের প্রতিরোধ হবে, ৩০ ডিসেম্বর জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে ভোট দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে৷''

‘কেউ কোনো অভিযোগ করেনি’

This browser does not support the audio element.

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিমুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটা গন্ডগোলের কথা শুনে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু কাউকে পাইনি৷ আমাদের কাছেও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি৷ তবে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আমরা যেটা জেনেছি, কয়েকজন মানুষ ইটপাটকেল ছুঁড়েছে৷ কিছু ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি৷''

পরে বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটতে পারে এটা কল্পনা করা যায় না৷ আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে এটা নিয়ে চিন্তা করি না৷ তারা  সেখানে হামলা করে শহীদদের অবমাননা করেছে৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ আমরা তো সেখানে কোনো অন্যায় কাজ করি নাই৷ এই হামলাকারীরা কারা? কিছু ভাড়াটে ছোকড়া দুই পয়সার জন্য হামলা করেছে৷ এদের পয়সা দিয়ে কেনা যায়৷ আমি তোমাদের চার পয়সা দেবো সেখান থেকে সরে যাও৷ কয় পয়সা পেয়ে তোমরা এই হামলা করেছো?''

পুলিশের আইজিপি'র উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, ‘‘পুলিশদের ব্যাপারে যা শোনা যাচ্ছে তাতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ আইজিপি সাহেব, আপনার প্রতি আমার খুব ভালো ধারণা আছে৷ সেটা যেন থাকে৷ এসব ঘটনার বিষয়ে আপনাকে তথ্য দেওয়া হবে৷ বিশ্বস্ত লোকদের দিয়ে তদন্ত করাবেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ