ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের জামিন আবেদন বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আদেশ দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ডেসটিনির দুই কর্ণধার রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেন জামিন পাননি৷ এর ফলে জেলেই থাকতে হবে তাদেরকে৷ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছে৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়ান্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জামিনের জন্য ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর তাদেরকে দুইটি শর্ত দিয়েছিল আপিল বিভাগ৷ ডেসটিনির ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে অথবা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ২৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয় তাদেরকে৷
২০১৭ সালে তারা এই শর্ত পরিবর্তনের জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন যা আদালত খারিজ করে দেয়৷ শর্ত পূরণ না করেই আবারও তারা জামিন আবেদন করেছিলেন৷ দুদকের পক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘‘শর্ত পূরণ না করে এখন তারা আবার জামিন চাইলেন৷ আমরা তার বিরোধিতা করেছি৷ আদালত জামিন আবেদন খারিজ করেছে৷’’
উল্লেখ্য ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করে দুদক৷ ২০১৪ সালের ৫ মে দেয়া হয় অভিযোগপত্র৷ দুইটি মামলায় মোট ৬৫ জনকে আসামি করা হয়৷ আসামিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. রফিকুল আমীন, ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. দিদারুল আলম ও মো. জিয়াউল হক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে৷ এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়৷ যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী৷
অন্যদিকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রকল্পের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল, যার ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকাই আত্মসাৎ করা হয়৷ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী৷
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রকল্পের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করে পরে তা বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করতেন৷ ৩৪ টি ব্যাংকে এমন ৭২২ টি হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুদক৷
উল্লেখ্য ২০০০ সালে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির৷ সেসময় তাদের ব্যবসা ছিল মাল্টিলেভেল মার্কেটিং৷ এক দশকের মধ্যে গ্রুপটি বিমান পরিবহন, আবাসন, কোল্ডস্টোরেজ, জুট মিল, মিডিয়া, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানি খোলে৷ বান্দরবানে ৮৩৫ একর জমিতে তাদের ৩৪টি বাগান রয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে৷
এফএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ব্যাংক খাতের নানা কেলেঙ্কারি
রাজনীতি, অর্থ, পেশি শক্তি, অপকৌশল, দুর্নীতি – এ সব নানা কারণে বারবারই বিপদের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত৷ ব্যাংক খাতে নানা সময়ে সংঘটিত কেলেঙ্কারির খবর দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance / Klaus Ohlenschläger
রিজার্ভের অর্থ উধাও
২০১৬ সালে ঘটে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা৷ অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় পাচার করে দেয়৷ ফিলিপিন্সে পাচার করা ৮.১ কোটি ডলারের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি৷ এ ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
জালিয়াতের খপ্পরে এটিএম কার্ড
‘স্কিমিং ডিভাইস’ নামের বিশেষ এক যন্ত্র বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে৷ চুরি করে তারা এর সঙ্গে এক জার্মান নাগরিক জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ প্রতারকদের আটক করা হলেও তারা বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে দুই দিনেই অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়৷
ছবি: bdnews24.com
হলমার্ক কেলেঙ্কারি
২০১২ সালে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হয়৷ সে সময় কেবল সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে ২০১০-২০১২ সময়ে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়৷ এর মধ্যে অখ্যাত হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা৷ তখন তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়নি৷
ছবি: DW
বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতি
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আব্দুল হাই বাচ্চু পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার পর ব্যাংকটি অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়৷ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ব্যাংকটিতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম পায় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ ব্যাংকের টাকা মেরে দিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়৷ এসব ঋণের বেশিরভাগই আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি৷
ছবি: bdnews24.com
ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে লুটপাট
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে ঘটে এই ঘটনা৷ ব্যাংকটির তৎকালীন উদ্যোক্তারা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় ৬০০ কোটি টাকা৷ লুটপাটের কারণে ২০০৬ সালে ব্যাংকটি অতিরুগ্ন হয়ে পড়ে৷ মালিকপক্ষের হাতে থাকা ব্যাংকের ৮৬ শতাংশ শেয়ারও বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ তা কিনে নেয় আইসিবি গ্রুপ৷ তারপর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তিত হয়ে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক হয়, তবে এখনো পুরো টাকা ফেরত পাননি গ্রাহকেরা৷
ছবি: imago/Milestone Media
ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়ম
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন দেয়া একটি ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংক৷ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীর, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দীকী নাজমুলের মালিকানাধীন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের ছয়টি শাখায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম পাওয়া যায়৷ এতে জনগণের সংরক্ষিত আমানত ফেরত দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে ব্যাংকটি৷
ছবি: bdnews24.com
লুটপাটের অন্ত নেই
নতুন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৭৪১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়৷ ২০১০-২০১৫ সালে আইন লঙ্ঘন করে অ্যাননটেক্স নামে একটি গ্রুপকে ৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার ফান্ডেড, নন-ফান্ডেড ঋণ প্রদান করে জনতা ব্যাংক৷ বিসমিল্লাহ গ্রুপ ২০১১ ও ২০১২ সালে দেশের পাঁচটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়৷
ছবি: DW
আরো আছে অনেক
এখানেই শেষ নয়৷ সময়ে সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে নানান অভিনব কৌশলে ভূয়া চুক্তিপত্র দেখিয়ে, কিংবা এক কাজে ঋণ নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করার অসংখ্য নজির আছে দেশে৷ তাই নানা সময়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক খাত৷ শুধু তাই নয়, শেয়ার বাজারকে নানা সময়ে অতিমূল্যায়িত করে ব্যাংক খাতের ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি করা হয়েছে৷