বেলজিয়ামে গিয়েও রেহাই পেলেন না কাটালুনিয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কার্লেস পুজদেমন৷ স্পেনের আদালত সমন জারি করার পর তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন৷ আপাতত জামিনে মুক্তি পেলেও প্রত্যর্পণ এড়ানো কঠিন হবে৷
বিজ্ঞাপন
প্রথমে ইউরোপীয়, তারপর আন্তর্জাতিক সমন জারি হবার পর কাটালুনিয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কার্লেস পুজদেমন আর ঝুঁকি নেননি৷ রবিবার মন্ত্রিসভার চার প্রাক্তন সদস্যের সঙ্গে তিনি বেলজিয়ামের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন৷ তবে সে দিনই তাঁরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ জামিনের সঙ্গে বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ নিজেদের ঠিকানা জানানোর পাশাপাশি তাঁরা আপাত বেলজিয়াম ছেড়ে চলে যেতে পারবেন না৷ ১৫ দিন পর পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত তাঁরা মুক্ত থাকবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষকে ৬০ দিনের মধ্যে তাঁদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রত্যর্পণের এমন অনুরোধ সাধারণত প্রত্যাখ্যান করা হয় না৷
স্পেনের আদালতে পুজদেমন-সহ কাটালুনিয়ার প্রাক্তন প্রশাসনের শীর্ষ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, দেশদ্রোহ, তহবিল তছরুপসহ একাধিক মামলা চলছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷ স্পেনের আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গত সোমবার পুজদেমন ও তাঁর প্রাক্তন মন্ত্রিসভার চার সদস্য বেলজিয়ামে পালিয়ে যান৷ প্রবল রাজনৈতিক চাপের কারণে স্পেনে তাঁদের ন্যায়বিচার সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করছেন৷
শনিবার এক টুইট বার্তায় তিনি বেলজিয়ামের পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷ রবিবার কাটালুনিয়ার একাধিক শহরে প্রতিবাদকারীরা আঞ্চলিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন৷ তবে বার্সেলোনায় মাত্র ৩৫০ বিক্ষোভকারী উপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ সারা শহরে নেতাদের মুক্তির দাবিতে পোস্টার ছেয়ে গেছে৷
আগামী ২১শে ডিসেম্বর কাটালুনিয়ার আগাম নির্বাচনে নিজের কর্তৃত্ব আবার ফিরে পেতে চান পুজদেমন৷ তিনি এই নির্বাচনে অংশ নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷ উল্লেখ্য, কাটালুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ফেডারেল সরকারের হাতে তুলে নেবার সময় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই এই নির্বাচনের ঘোষণাও করেছিলেন৷ স্বাধীনতাকামী দলগুলি এই নির্বাচনে একজোট জোট হয়ে লড়তে পারে বলে পুজেমনের দল ইঙ্গিত দিয়েছে৷ তবে জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী এই জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷