গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে ২০১৪ সাল থেকে অনেক সিরীয় নাগরিক জার্মানিতে পালিয়ে এসেছেন৷ তাঁদের অনেকে ‘সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন’ নিয়ে জার্মানিতে বাস করছেন৷ অর্থাৎ, তাঁরা এখনো ‘শরণার্থী’ হিসেবে বিবেচিত হননি৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kappeler
বিজ্ঞাপন
জার্মানির আইন বলছে, যাঁরা বিভিন্ন রকমের রাজনৈতিক আশ্রয় বা সেই ধরনের সুরক্ষা নিয়ে জার্মানিতে আছেন, তাঁদের পাসপোর্টসহ পরিচিতিমূলক অন্যান্য নথিপত্র জোগাড় করে কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়৷
আর এসব নথিপত্রের জন্য সিরীয়দের জার্মানিতে অবস্থিত সিরিয়ার দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে যেতে হয়৷
শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরা জার্মানির এই নীতির সমালোচনা করেছেন৷ ‘‘এটা একটা কেলেঙ্কারি,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ জার্মান-সিরিয়ান অ্যাসিস্টেন্স গ্রুপস' এর ইয়েন্স-মার্টিন রোডে৷
তিনি বলেন, ‘ ‘জার্মানিতে প্রায় সাত লক্ষ সিরীয় আছেন, যাঁদের বেশিরভাগই সিরিয়ার সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার দূতাবাস থেকে তাঁদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আনতে বলা তাঁদের কাছে নানা কারণে অসহনীয় এক ব্যাপার৷''
এসব কারণের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যটি হচ্ছে, আসাদ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশঙ্কা৷ কারণ, জার্মানিতে পালিয়ে আসা সিরীয়দের অনেকআত্মীয়স্বজন সিরিয়ায় আছেন৷
পাসপোর্ট নিতে গিয়েসিরীয়দের তাঁদের ঠিকানা উল্লেখ করতে হওয়ায়আসাদ সরকার সহজেই তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের তথ্য পেয়ে যাচ্ছে৷ পরে তাঁদের গ্রেপ্তার, ব্ল্যাকমেল করা কিংবা মেরে ফেলা হচ্ছে বলে অনলাইন ম্যাগাজিন ‘ফান'-এ লিখেছেন এক সিরীয় নাগরিক আরেফ হামজা৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘যাঁদের পরিবার এখনো সিরিয়ায় আছেন এবং তাঁদের আবাসিক ঠিকানা যদি সিরিয়ার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অজানা থাকে, তাহলে তাঁদের সিরিয়ার দূতাবাসে যাওয়া বিপজ্জনক৷''
জীবনের জন্য শিক্ষা
পুরো ইউরোপে নতুন ক্লাসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা৷ শুরু হয়েছে নতুন বছর৷ লেবাননে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের কি অবস্থা? দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে কেউ স্কুলে পড়ালেখা করলেও, অনেকের জীবনেই নেমে এসেছে বিপর্যয়৷
ছবি: Amy Leang
থেরাপি
বৈরুতের এই স্কুলে যে শিক্ষার্থীদের দেখছেন তারা সিরিয়ার শরণার্থী৷ স্কুলে গান গাইছে তারা৷ এটা একটা থেরাপি যাতে যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এবং আতঙ্ক কাটাতে পারে তারা৷ এছাড়া এখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তারা৷
ছবি: Amy Leang
দ্বিতীয় জীবন
শিশুদের এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যেন তারা লেবাননের সরকারি স্কুলে পড়তে পারে৷ এদের মধ্যে একজন সুজানে৷ বড় হয়ে শিল্পী হতে চায় সে৷ স্কুলে পড়ালেখা ছাড়া এই স্বপ্ন পূরণ হবে না, তাই শিক্ষাগ্রহণকে সুজানে ‘দ্বিতীয় জীবন’ বলে মনে করছে৷
ছবি: Amy Leang
পরিবারের সহায়তা নেই
বৈরুতের ঐ স্কুলটিতে অঙ্কের ক্লাসে দেখা যাচ্ছে ডায়নাকে৷ ডায়নার মতো সিরিয়ার এই শরণার্থী শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবারের কোনো সহায়তা পায় না তারা, এমনকি বাড়িতে পড়ানোর মতো কেউ নেই৷ স্কুলই পড়ার একমাত্র জায়গা৷
ছবি: Amy Leang
চিন্তার শক্তি
শিশুরা এই স্কুলে একবেলা খেতে পায়৷ যে বেসরকারি সংস্থাটি স্কুলটি পরিচালনা করছে, তার এক কর্মকর্তা জানালেন, একটি গির্জার সহায়তায় এই শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই শিশুরা ঐ এলাকার আশপাশেই থাকে এবং সেখানকার বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার৷ ফলে পরিবারের উপার্জনের প্রায় পুরোটাই বাড়ি ভাড়ায় চলে যায়৷ খাবারের জন্য অর্থ থাকে না৷
ছবি: Amy Leang
বাড়ি থেকে বাড়ি
এই শরণার্থী পরিবারগুলো এমন অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, যেখানে হয়ত সিঁড়ির নীচে বা ছাদের চিলেকোঠায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে তারা৷
ছবি: Amy Leang
সৃজনশীলতা
১২ বছর বয়সি আশতাকে সৃজনশীল লেখা লিখতে বলা হয়েছে৷ তাই হয়ত জানলার বাইরে তাকিয়ে সে চিন্তা করছে কি লেখা যায়৷ এর মাধ্যমে নিজের মানসিক চাহিদাগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে তারা৷
ছবি: Amy Leang
হারিয়ে যাওয়ার পথে যে প্রজন্ম
নিজেদের ভাড়া বাড়িতে শিশুদের অঙ্ক বাড়ির কাজ নিয়ে বসেছেন বাবা-মা৷ সিরিয়ার কৃষক বাবা জানালেন, ‘‘আমি তাদের এখানে নিয়ে এসেছি৷ কারণ আমার ধারণা তারা সিরিয়ায় থাকলে অশিক্ষিতই থেকে যেত৷ এটা একটা বড় ধরনের ভুল৷ এর সমাধান করতে না পারলে একটা পুরো প্রজন্ম হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: Amy Leang
সময়ের অপচয়
লেবাননে থাকা যেসব শরণার্থী শিশুরা স্কুলে যায় না, তাদের পুরো সময়টা কাটে টিভি দেখে বা খেলাধুলা করে৷ এনজিওটি জানালো বর্তমানে ৪ লাখ শরণার্থী শিশু রয়েছে৷ কিন্তু মাত্র ৯০ হাজার স্কুলে যায়৷
ছবি: Amy Leang
পথেই জীবন
নারিমান, বয়স ৭৷ এত অল্প বয়সেই সে জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে৷ রাস্তায় রাস্তায় টিস্যু পেপার বিক্রি করে সে৷ তার চাচা তাকে এগুলো বিক্রি করতে দিয়েছে, তবে শর্ত হলো সন্ধ্যা ৬ টার আগে চাচার হাতে ১২,০০০ লেবানিজ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৮ ডলার তুলে দিতে হবে৷ তাই দিনের প্রায় পুরোটা সময় রাস্তাতেই কাটে তার৷
ছবি: Amy Leang
লক্ষ্যভ্রষ্ট
লেবানন-সিরিয়া সীমান্তের কাছে আরো একটি স্কুল খুলেছে বেসরকারি সংস্থা সাওয়া৷ সংস্থার এক কর্মী বললেন, ‘‘এই শিশুগুলো এমন আতঙ্ক ও ভয়াবহ একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, এখন কোনো কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসে না৷ পরোয়া করে না তারা৷
ছবি: Amy Leang
10 ছবি1 | 10
অ্যাক্টিভিস্ট ইয়েন্স-মার্টিন রোডে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, বার্লিনের সিরীয় দূতাবাস সিরিয়ার গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকে৷
বিপুল অর্থ আসাদের পকেটে?
জার্মানির সবুজ দলের শরণার্থী বিষয়ক মুখপাত্র লুইস আমট্সব্যার্গ ডয়চে ভেলেকে জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে সিরিয়ার দূতাবাস পাসপোর্ট ইস্যু করতে ২৫৫ ইউরো (মেয়াদ দুই কিংবা ছয় বছর যেটিই হোক না কেন) করে নিচ্ছে৷ ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় এটি অনেক বেশি বলে জানান তিনি৷
তবে অ্যাক্টিভিস্ট ইয়েন্স-মার্টিন রোডে বলছেন, একটি পাসপোর্টের জন্য সিরিয়ার দূতাবাস ৮০০ ইউরো পর্যন্ত নিচ্ছে৷ এছাড়া ঘুসও দিতে হয় বলে জানান তিনি৷ ‘‘আপনি যখন বিবেচনা করে দেখেন যে, জার্মানিতে সাত লক্ষ সিরীয় আছেন, যাঁদের মধ্যে চার লক্ষ জন আছেন সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন নিয়ে এবং তাঁদের প্রত্যেককে প্রতি দুই বছরের জন্য ২৫৫ ইউরো করে দিতে হচ্ছে, তাহলে আপনি হিসেব করে দেখুন, কী পরিমাণ টাকা নিয়ে আপনি কথা বলছেন৷''
তিনি বলেন, অনেক শরণার্থীর একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে সরকার থেকে পাওয়া অর্থ সহায়তা৷ অর্থাৎ ‘‘জার্মান করদাতাদের অর্থ সরাসরি আসাদের দূতাবাসগুলো পাচ্ছে,'' মনে করছেন অ্যাক্টিভিস্ট ইয়েন্স-মার্টিন রোডে৷
সবুজ দলের মুখপাত্র লুইস আমট্সব্যার্গ জার্মান এক সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই রীতিকে ‘‘একটি সন্ত্রাসবাদী সরকারকে অর্থায়ন'-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন৷