জার্মানদের ভাগ্যান্বেষণের ইতিহাস জীবন্ত করে তুলছে মিউজিয়াম
১৯ অক্টোবর ২০২৪ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে জার্মানির ব্রেমারহাফেন ইউরোপের অন্যতম বড় ‘ইমিগ্রেশন' বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল৷ সেখান থেকে ৭২ লাখেরও বেশি মানুষ আরো ভালো জীবনের আশায় জাহাজে চড়ে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড'-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন৷ উত্তর সাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর হয়ে তাঁরা অ্যামেরিকায় পৌঁছেছিলেন৷
ডিডাব্লিউ রিপোর্টার গিলেরমে বেকারের পারিবারিক ইতিহাসও এই জায়গাটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত৷ তাঁর জার্মান পিতামহী ইডা তাঁর পালক পিতামাতার সঙ্গে জাহাজে উঠেছিলেন৷ তাঁর ভাইবোনেরা তাদের আসল বাবার সঙ্গে জার্মানিতেই থেকে গিয়েছিলেন৷
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে তাঁর সেই যাত্রা সম্পর্কে গিলেরমে আরো জানতে চান৷‘জার্মান এমিগ্রেশন সেন্টার' নামের এক মিউজিয়ামে ইডার মতো মানুষের কাহিনি সংগ্রহ করে জীবন্ত করে তোলা হয়৷ সেখানে দর্শকদের এমন এক যাত্রায় শামিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ সে যুগের পরিবেশের সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়৷
দর্শকরা অনলাইন তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে কোনো নির্দিষ্ট মানুষের সন্ধান করতে পারেন৷ গিলেরমে ব্রেমেনের যাত্রী তালিকায় নিজের পিতামহীর নাম খুঁজে পেলেন – ইডা টেপে৷
১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৭৫,০০০ জার্মান ব্রাজিলে বসবাস করার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন৷ জার্মান ইমিগ্রেশন সেন্টারের সিমোনে ব্লাশকা বলেন, ‘‘বেশিরভাগ মানুষই মূলত অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছিলেন৷ ১৮২৩ সালের অর্থনৈতিক সংকটে মধ্যবিত্তরা তাদের বিষয়-সম্পত্তি হারিয়েছিলেন৷ তরুণ প্রজন্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ভাইমার প্রজাতন্ত্রে কোনো আশার আলো দেখেননি৷ অনেক পরিবারই চাষবাস করতো৷ অনেকেরই দক্ষিণ অ্যামেরিকায় চাষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ ছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বিনামূল্যে জমি দিচ্ছিলোনা৷ সেখানে জমির দাম খুবই বেশি ছিলো৷ অন্যদিকে ব্রাজিলে তখনো সেই সুযোগ ছিল৷''
গিলেরমের পিতামহী এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে ছিলেন৷ সে যুগে অ্যাটলান্টিক পেরোতে এতটাই সময় লাগতো৷ তাঁর জাহাজের কেবিন দেখতে ভালোই ছিলো৷ দেখে বেশ আরামদায়ক মনে হয়৷ একশো বছর আগে জার্মানি থেকে প্রথম যে দল ব্রাজিলে বসতি স্থাপন করতে গিয়েছিলো, তাদের মালবাহী জাহাজের সঙ্গে এটির কোনো তুলনাই চলে না৷ কয়েক মাস ধরে ছোট জায়গায় তাদের কোনোরকমে টিকে থাকতে হতো৷ এমনকি গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই কখনো খাদ্য ফুরিয়ে যেতো৷
বিংশ শতাব্দীর বাষ্পচালিত জাহাজে যাত্রী ও শিপিং কোম্পানিগুলির জন্য খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল৷ সিমোনে ব্লাশকা জানালেন, ‘‘মানুষ বাসায় যা খেতে অভ্যস্ত ছিলেন, সেই তুলনায় সেখানে প্রায়ই বিশেষ ধরনের খাদ্য পেতেন৷ শিপিং কোম্পানিগুলি খাদ্য তালিকা দেখিয়ে যাত্রীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করতো৷ খাদ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো৷ দিনে তিন বার খাবার পরিবেশন করা হতো৷ তার মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য থাকতো৷''
গন্তব্যের বন্দরের অ্যারাইভাল হলের ছবিও মিউজায়ামে শোভা পাচ্ছে৷ যাত্রার শেষে সবার স্বপ্ন পূরণ হতো না৷ এমন কাহিনিও সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে৷ ব্লাশকা বলেন, ‘‘জার্মানির এক ব্যক্তির চিঠি রয়েছে, যিনি ব্রাজিলে এক খামার চালু করার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু পঙ্গপাল তাঁর গোটা ফসল নষ্ট করে দেয়৷ বিশেষ করে রাতে এক ধরনের বালুর মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ফিরে আসেন৷''
বিগত ২০০ বছরে বিভিন্ন জার্মানভাষী অঞ্চল থেকে প্রায় তিন লাখ মানুষ ব্রাজিলে নতুন জীবন শুরু করেছেন৷ গিলেরমের পিতামহী ইডা কখনো আর জার্মানিতে ফেরেননি৷ তিনি নিজের ভাইবোনদেরও আর দেখতে পাননি৷ ব্রেমারহাফেনে তাঁর নাতি আবার তাঁর কাহিনি জীবন্ত করে তুলেছেন৷
উলরিকে সমার/এসবি