জার্মানদের মধ্যে বন্দুকের লাইসেন্স নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে
১৬ জানুয়ারি ২০১৯
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, ২০১৮ সালে আগের বছরের তুলনায় বেশি সংখ্যক জার্মানকে বন্দুকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে৷ তবে এই প্রবণতা নিরাপত্তা ঝুঁকি আরো বাড়াতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, গতবছর প্রায় ছয় লক্ষ দশ হাজার ৯৩৭ জন জার্মান নাগরিককে বন্দুক রাখার অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ ২০১৭ সালের তুলনায় এই হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি৷ সংখ্যার হিসেবে ৫৩ হাজার ৩৭৭টি বেশি অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷
বন্দুক বলতে গ্যাস পিস্তল, ফ্লেয়ার গান, পেপার স্প্রেসহ প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র বোঝানো হয়েছে৷
পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার আশঙ্কা থেকে আত্মরক্ষার জন্য মানুষ লাইসেন্স নিচ্ছে৷
তবে বাম দলের অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উলা ইয়েল্পকে মনে করছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার ও অভিবাসনবিরোধী দল এএফডির বিভিন্নমন্তব্যের কারণে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে লাইসেন্স নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে৷
যে সব দেশে সাধারণ মানুষের হাতে বেশি অস্ত্র
স্কুলে ঢুকে গুলি চালিয়ে মানুষ মারার ঘটনা বিশ্বে নতুন নয়৷ আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতাকেই এর জন্য দায়ী করা হয়৷ ‘ছোট অস্ত্র সমীক্ষা ২০১৮’- তে দেখা গেছে দুনিয়ায় বিভিন্ন দেশের প্রতি ১০০ নাগরিকের কাছে গড়ে কয়টি করে হাতিয়ার থাকে৷
ছবি: Imageo
অ্যামেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০ জনের কাছে ১২১ টি বন্দুক থাকে৷ সাধারণ মানুষের কাছে বেশি আগ্নেয়াস্ত্র আছে এমন দেশের তালিকায় শীর্ষে এই দেশ৷ অ্যামেরিকায় বন্দুকধারীর হামলার মতো পৈশাচিক ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে৷ এ কারণে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং এর প্রদর্শনকে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে আসছে অ্যামেরিকার বিভিন্ন সংগঠন৷ অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষের তাতে সায়ও ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gombert
ইয়েমেন
অ্যামেরিকায় পরেই ইয়েমেন৷ ১০০ জনের কাছে গড়ে ৫৩ টি বন্দুক থাকে সেখানে৷ এমনিতে সব দেশেই গোপনে অস্ত্র বহনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ অর্থাৎ, কাউকে অস্ত্র বহন করতে হলে তা দৃশ্যমান থাকতে হবে, লুকিয়ে রাখা যাবে না৷ এমনকি এক অঙ্গরাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে যেতে চাইলে সেই অঙ্গরাজ্যের অনুমতি লাগবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রো
১০০ জনের কাছে গড়ে ৩৯ টি বন্দুক পাওয়া যায় সেখানে৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
ক্যানাডা
১০০ জনের কাছে ৩৫ টি বন্দুক থাকে সেখানে৷ অ্যামেরিকার তুলনায় ক্যানাডার অস্ত্র আইন অনেকটাই কঠোর৷ এক বিবৃতিতে ক্যানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ক্যানাডার আইন ভিন্ন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/M. Renwick
ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ডে প্রতি ১০০ জনের কাছে গড়ে ৩২ টি বন্দুক আছে৷ সম্প্রতি একটি কারিগরি স্কুলে এক ছাত্রের বেপরোয়া গুলি চালানোর ঘটনার পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রীও অস্ত্র আইন কঠোর করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Dedert
লেবানন
লেবাননে প্রতি ১০০ জনের কাছে ৩২ টি বন্দুক পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/Anchal Vohra
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়াতে প্রতি ১০০ জনের কাছে ৩০ টি বন্দুক পাওয়া যায়৷
ছবি: Imageo
নরওয়ে
সেখানে প্রতি ১০০ জনের কাছে ২৯ টি বন্দুক থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Medichini
সুইজারল্যান্ড
প্রতি ১০০ জনের কাছে ২৮টি বন্দুক থাকে সুইজারল্যান্ডে৷
ছবি: DW/M. von Hein
জার্মানি, ফ্রান্স, ইরাক
সাধারণ মানুষের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার সমীক্ষায় দশম স্থানে একইসঙ্গে রয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইরাকের নাম৷ এ সব দেশে প্রতি ১০০ জনের কাছে ২০ টি বন্দুক থাকে৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/C. Rehder
10 ছবি1 | 10
এদিকে জার্মানির পুলিশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলিভার মালশোভ বন্দুক রাখার এই প্রবণতা সমর্থন করছেন না৷ দৈনিক ‘নয়ে অসনাব্রুকার সাইটুং'কে তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের অস্ত্র নিরাপত্তাবোধের একটা কৃত্রিম অনুভূতি দেয় এবং নিজেকে রক্ষা করার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু এসব কারণে বর্তমান পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এবং বন্দুকের মালিককে অপরাধীতে পরিণত করতে পারে৷''
মালশোভ মনে করেন, সশস্ত্র নাগরিকরা নিজেদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন৷ কারণ, তাঁরা যাঁদের মুখোমুখি হবেন, তাঁরা জানবেন না যে, তাঁদের কাছে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র আছে৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে অস্ত্রের আবেদনকারীকে পূর্ণবয়স্ক হতে হয় এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়৷ তবে জার্মানিতে প্রাণঘাতী অস্ত্র পাওয়া খুব সহজ নয়৷
‘দ্য জার্নাল অফ দ্য অ্যামেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন' বলছে, ২০১৬ সালে জার্মানিতে ৮২০ জন বন্দুক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৩৩ হাজার ৩৩৬ জন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ৬ তথ্য
ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার পর ফের মার্কিন মুলুকে বন্দুক ব্যবহারের প্রচলন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কীভাবে বন্দুক কেনা যায় সে দেশে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Breed
বন্দুকের শিকার
অ্যামেরিকায় সাধারণ নাগরিকের বন্দুক ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে৷ রাজনীতিতেও এর ঢেউ লেগেছে বহু সময়৷ তথ্য বলছে, প্রতিবছর বন্দুকের লড়াইয়ে অ্যামেরিকায় মৃত্যু হয় ৩৩ হাজার মানুষের৷ এর সঙ্গে অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে লড়াই, আত্মহত্যা, হত্যার চেষ্টার ঘটনা ধরলে সংখ্যাটি হবে ৩ গুণেরও বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Sladky
১৮ বছর হলেই বন্দুক
মার্কিন আইন অনুযায়ী বয়স ১৮ বছর হলেই সে দেশের যে কোনো নাগরিক বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ শটগান বা রাইফেলও কিনতে পারেন৷ সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ কার্তুজ৷ তবে হ্যান্ড গান, লিভলভার কিনতে হলে অপেক্ষা করতে হয় ২১ বছর বয়স পর্যন্ত৷
সকলকে অবশ্য বন্দুক কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হয় না৷ অতীতে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, দাগী অপরাধী কিংবা রাষ্ট্র যাদেরকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করে, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয় না৷ যদিও অভিযোগ, অস্ত্রের খোলা বাজার থাকায় অনেকেই বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহ করে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Krzaczynski
চাইলেই কি বিক্রি করা যায় বন্দুক
অস্ত্রের দোকান বা বন্দুকের দোকান খোলার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হয়৷ ২১ বছর না হলে এ ধরনের দোকান খোলার অনুমতি মেলে না৷ সকলকে বন্দুকের দোকান তৈরির ছাড়পত্রও দেওয়া হয় না৷ সেক্ষেত্রেও দেখা হয় আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড৷
ছবি: DW/I. Pohl
আবেদনকারীর অতীত পরীক্ষা
যাঁরা দোকান খুলতে চান, কিংবা যাঁরা বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন, সকলেরই অতীত সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হয়৷ স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করে কারা সেই তদন্ত করবে৷ সাধারণত এফবিআই এই কাজটি করে থাকে৷ তবে অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনও একটি তদন্ত চালায় আলাদা ভাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Barrera
খোলা রাস্তায় বন্দুক
বন্দুক কেনা গেলেও খোলা রাস্তায় বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে৷ কোনো কোনো রাজ্যে বন্দুক খাপে ভরে ঘোরা যায়৷ অধিকাংশ জায়গায় হ্যান্ড গান সঙ্গে রাখলে তার লাইসেন্সও সঙ্গে রাখতে হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যেই শট গান সঙ্গে নিয়ে যত্রতত্র ঘোরা যায়৷ তার জন্য কোনো বিধিনিষেধ নেই৷