বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে উত্তেজনার কমতি নেই৷ এর বাইরে নন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনও৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিশ্বকাপ ছাড়াও কথা বলেছেন দেশের ফুটবল নিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে : আপনি তো বাংলাদেশের প্রথম ফুটবলার যিনি দেশের বাইরে পেশাদার ফুটবল খেলতে গিয়েছিলেন৷ ৭০-এর দশকে হংকংয়ে গিয়েছিলেন৷ সেই সময়ের অভিজ্ঞতা যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন?
কাজী সালাহউদ্দিন : আমরা প্রথম ফুটবল খেলতে গিয়েছি স্বাধীনতার পরপরই, ১৯৭২-৭৩ সালে৷ সেটা পেশাদার ফুটবল ছিল না৷ আর পেশাদার ফুটবল খেলতে গেছি ১৯৭৫-৭৬ সালে হংকংয়ে৷ সেখানে এশিয়ার যত টপ স্টার ছিল, তারা খেলতে যেত৷ তখন হংকংয়েই একমাত্র পেশাদার লিগ হত৷ এখন তো বহু দেশে পেশাদার লিগ হয়৷ আমাদের দেশেও হয়৷ তখন শুধু হংকংয়েই পেশাদার লিগ হত৷ ইউরোপের কিছু স্টারও তখন ওখানে খেলত৷ এখন আমরা যেভাবে ফুটবল খেলি, যেভাবে টেনিং করি, এর সঙ্গে তখনকার খেলার কোনো মিলই নেই৷
আপনি তো দীর্ঘদিন বাফুফের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন৷ এই সময়ের মধ্যে আপনি কি বাংলাদেশের ফুটবলকে একটা পেশাদার কাঠামোর উপর দাঁড় করাতে পেরেছেন?
আমি মনে করি পেরেছি৷ কারণ আমি যখন দায়িত্ব নেই তখন পেশাদার লিগই হচ্ছিল না, লিগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ আজকের যে উপমন্ত্রী জয়, তিনি তো ফুটবল প্লেয়ারদের নিয়ে তখন মিছিল করেছেন লিগের জন্য৷ লিগ না হলে তখন তারা খেতে পারত না৷ আমি আসার পর এমন কোনো সিজন নেই, যে সিজনে লিগ হয়নি, বা মাঠে বল ছিল না, এমন কথা বলতে পারবে না কেউ৷ আগে অপেশাদারভাবে ফেডারেশন চালানো হত৷ এখন সবকিছু হচ্ছে পেশাদারভাবে৷ স্পন্সরশিপ আমরা শিখিয়েছি৷ একটা কথা অবশ্য বলতে পারেন, মাঠে লোক কম৷ এটা আমি স্বীকার করি, আমাদের দেশে এই কালচারটা আছে৷
‘যতই কাজ করি, রেজাল্ট না হলে তা দেখা যায় না’
ইন্টারন্যাশনাল খেলা ছাড়া কেউ লিগ দেখতে আসে না৷ আগে সবাই মাঠে আসত৷ ফেডারেশনের প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব কোচ এনে দেয়া, ম্যাচের ব্যবস্থা করে দেয়া৷ কিন্তু আমি খেলে দিতে পারব না, গোল করে দিতে পারব না৷ ওটা তাদের করতে হবে৷ এখানে আরেকটা সমস্যা আছে৷ জাতীয় দলের প্লেয়াররা বছরের ১১ মাস থাকে ক্লাবের সঙ্গে, আর আমার সঙ্গে থাকে এক মাস৷ ১১ মাসের ট্রেনিং বা অভ্যাস এক মাসে পরিবর্তন করা খুবই কঠিন৷ এটা কীভাবে ঠিক করা যায়, তা নিয়ে আমরা বসেছিলাম৷ আসলে আমরা যতই কাজ করি, রেজাল্ট না হলে সেটা দেখা যায় না৷
সারা বিশ্বেই তো এমনই হয়৷ সব জায়গাতেই প্লেয়াররা ক্লাবে খেলে এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে দেশের হয়ে খেলতে যায়?
ঠিক বলেছেন৷ ৭ দিন বা ১০ দিন আগে তারা দেশের হয়ে খেলার জন্য যায়৷ দেখুন, লিভারপুলের প্লেয়ারদের কোচিং করাচ্ছেন ক্লপ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্লেয়ারদের কোচিং করান মরিনিয়ো৷ এই প্লেয়ারগুলো তো তৈরি হয়েই আসে৷ কোচ খালি বলে দেয় আমরা এই ফরমেটে খেলব এবং টিমটা সিলেকশন করে দেয়৷ কোচদের কিছুই করাতে হয় না৷ আমরা সেই জায়গায় আসছি৷ আমরা ক্লাবগুলোকে বলছি, তোমরা যদি ট্রেনিং ঠিক না করো তাহলে জাতীয় দলে ভালো প্লেয়ার আসবে না৷ আমাকে জাতীয় দলের ক্যাম্প করতে হচ্ছে৷ এখানে অধিকাংশ প্লেয়ারই ফিট না৷
এখানে শুধু ক্লাবগুলোকে দোষ দিলে হবে না৷ তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো খুবই দুর্বল৷ প্রথম ৪/৫টা ক্লাব ছাড়া অধিকাংশ ক্লাব খেলে আর ভাবে কবে লিগ শেষ হবে৷ ফুটবল কিন্তু এখন আর গরিবের খেলা না, বেসিক বেতন সপ্তাহে এক কোটি টাকা এমন ৩০০ প্লেয়ারের নাম আমি আপনাকে বলতে পারব৷ এটা তো অন্য কোন খেলা না, ৭/৮টা দেশ খেলে না৷ এখানে ২১১টা দেশ খেলে৷ সবাই এখানে ফাইট করে৷
ফুটবল নিয়ে হতাশা তো দীর্ঘই হচ্ছে, এটাও তো সত্যি?
হতাশার কিছু নেই৷ হতাশা কবে ছিল না বলেন? আগে এশিয়াতে ১০/১২টা দেশ খেলত৷ এখন সবগুলো দেশ পাগলের মতো খরচ করছে৷ ৩০ মিলিয়ন ডলারে প্লেয়ার বেচাকেনা হচ্ছে৷ আপনাকে এদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হলে তো অস্ত্র নিয়েই যেতে হবে৷ এটা আমি চেষ্টা করছি সরকারকে বুঝাতে, কিছুটা পেরেছি৷ এবার বলেছে বাজেটে দুই টাকা হলেও বরাদ্দ থাকবে৷ আমি একটা কোচ আনতে পারি না, একটা ট্রেইনার আনতে পারি না৷
বিশ্বকাপ রাশিয়ায় না বাংলাদেশে?
বিশ্বকাপে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা? হতে পারে, না-ও হতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে তারা মুখোমুখি৷ পুরো বাংলাদেশ যেভাবে মেতেছে ফুটবল উন্মাদনায়, তাতে চট করে মনে হতে পারে, বিশ্বকাপ যেন শুরু হলো বাংলাদেশে৷
ছবি: Noman Mohammad
পল্টন ময়দানে মুখোমুখি তারা
ঢাকার পল্টন ময়দানে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ৷ নাইন স্টার যুব সংঘ নামের একটি ক্লাব এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে৷ এর আগেও দু’বার তারা এমন ম্যাচের আয়োজন করেছিল৷
ছবি: Noman Mohammad
গুলিস্তান যেন বিশ্বকাপের বাজার
নানান দেশের পতাকা আর বিশ্বকাপের জার্সির বাজার হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান৷ ক্রেতারাও যেন লাইন ধরেছেন৷ আগেভাগেই কিনতে শুরু করেছেন প্রিয় দলের পতাকা বা জার্সি৷
ছবি: Bdnews24.com
ক্রিকেটার তারেক আজিকের দোকানে
ক্রিকেটার তারেক আজিজ তাঁর স্পোর্টস সামগ্রীর দোকানে বিশ্বকাপের নানান জার্সির পসরা সাজিয়ে বসেছেন৷ বিক্রিও হচ্ছে খুব৷
ছবি: Noman Mohammad
ব্রাজিল, না আর্জেন্টিনা?
ব্রাজিল, না আর্জেন্টিনা? তর্কের শেষ নেই৷ মেসি, না নেইমার, কে ভালো, কত ভালো তার বিশ্লেষণ চলছে৷ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলছে চাপা দ্বন্দ্ব, ফোঁসফাঁস৷ দোকানে সাজিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ জার্সির একটি বড় অংশই উঠবে এ দুই দলের সমর্থকদের গায়ে৷
দেয়ালে দেয়ালে এমন ছবিও চোখে পড়ছে শহরের অলিগলিতে৷ ব্রাজিলের তারকা নেইমারের অনেকগুলো ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে৷
ছবি: Noman Mohammad
জার্মান সমর্থক
ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি হলেও বাংলাদেশে জার্মান সমর্থকও খুব কম নয়৷ আর সমর্থক না হলেও ভালোবাসেন জার্মান জার্সিকে৷
ছবি: Noman Mohammad
দরদাম
বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে ঢাকার গুলিস্তানে পতাকা কিনেছেন এই সমর্থকরা৷ চলছে বিক্রেতার সাথে দরদাম৷
ছবি: Bdnews24.com
পোস্টার ও ক্যালেন্ডারেও তারা
প্রিয় দলের খেলোয়াড়রা জায়গা পেয়েছে পোস্টার ও ক্যালেন্ডারেও৷
ছবি: Noman Mohammad
রাস্তার ওপর
রাজউকের সামনে রাস্তার ওপরও পতাকা উড়তে দেখা গেছে৷
ছবি: Noman Mohammad
বাড়ির ছাদে
পতাকা উড়ছে বাড়ির ছাদে ছাদে৷ এ সময়টায় এ চিত্র দেখা যায় সারা দেশে৷ তবে সম্প্রতি একটি রিটের কারণে অন্য দেশের পতাকা উত্তোলন নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পতাকার ফেরিওয়ালা
একমাত্র বিশ্বকাপ এলেই পতাকার ফেরিওয়ালার বাঁশে আশ্রয় নেয় এমন রঙ-বেরঙের নানা দেশের পতাকা৷ অন্য সময় বাংলাদেশেরই বিভিন্ন সাইজের পতাকা থাকে সেখানে৷
ছবি: Bdnews24.com
ঈদেও জার্সি
সামনে রোজার ঈদ৷ অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাবেন৷ তাই গ্রামের বাড়িতে থাকা স্বজনদের জন্যও কেউ কেউ নিয়ে যাবেন জার্সি৷ ঈদের আনন্দের সাথে ভাগাভাগি হবে খেলার আনন্দ৷
ছবি: Bdnews24.com
13 ছবি1 | 13
আমরা আশার আলো দেখব কবে?
আশা করি ৪/৫ বছরের মধ্যেই সাউথ এশিয়ায় একটা ভালো টার্নওভার দেখবেন৷ আমি কথা দিচ্ছি৷ আমাদের অনূর্ধ্ব ১৭ বা ১৯ দল কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো রেজাল্ট করছে, মেয়েরা ভালো করছে৷ আমি তাদের ২৪ ঘণ্টা ক্যাম্প করাচ্ছি৷ মেয়েরা কোনো ক্লাবের আন্ডারে না৷ আমার তত্ত্বাবধানে তাদের দেশি বিদেশি কোচ দিয়ে ট্রেনিং করাচ্ছি, তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি৷ দেখেন অনূর্ধ্ব ১৭ দল এএফসি কাপে কাতারকে হারিয়েছে ২ গোলে৷ এই দলটাই কিন্তু ২০২২ সালে কাতারের বিশ্বকাপের দল হবে৷ এখানে হতাশ হতাশ বলে মিডিয়া একটা নেতিবাচক রোল প্লে করছে৷ এখানে ৪/৫ জন সাবেক ফুটবলার আমার বিরোধিতা করতে গিয়ে ফুটবলেরই বিরোধিতা করছে৷
দুই একটা সিরিজের ফলাফলে এই ধরনের সমালোচনা বদলে যেতে পারে?
ওটার জন্যই তো পাগলের মতো করে চেষ্টা করছি৷ এই যে বিদেশি কোচ আনছি, তাদের বেতন দেয়ার পয়সা কিন্তু ফেডারেশনের নেই৷ আমি এবং দুই এক জন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজেদের ফান্ড থেকে কোচদের বেতন দিচ্ছি৷
ভালো কিছুর জন্য ফেডারেশন নিশ্চয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তার কিছু যদি বলেন?
বরাদ্দ পেলে তিন বছরের জন্য বাচ্চাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাব৷ অনূর্ধ্ব ১৭ আর অনূর্ধ্ব ১৯৷ মেয়েদের কিন্তু আমরা প্রাইভেট ফান্ডিং করছি৷
সরকারি টাকায় তো আর কোন খেলাই চলে না৷ এক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টর ভূমিকা রাখে৷ এখানে ফুটবলে প্রাইভেট সেক্টরের আগ্রহ কেমন?
এখানে তাদের আগ্রহ খুব একটা নেই৷ এটাই আমার দুর্ভাগ্য৷ তাদের আগ্রহ ক্রিকেট নিয়ে৷ ক্রিকেটে রেজাল্টটা তো সহজ, সে কারণে তাদের আগ্রহ ক্রিকেটে৷
সামনেই বিশ্বকাপ, আপনি কোন দলকে ফেবারিট মনে করছেন?
অবশ্যই জার্মানি৷ তবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেনকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন না৷
কেন এদের ফেবারিট মনে করছেন?
শেষ ৫ বছরে তাদের পারফরমেন্সের কারণে৷ জার্মানির শেষ ৫ বছরের পারফরমেন্স দেখেন৷ তাদের ক্লাব অর্থনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী৷ ক্লাবগুলো প্লেয়ার তৈরি করে কোচের কাছে পাঠিয়ে দেয়৷ কোচ খালি সিটিংটা দেয়৷ এটা কিন্তু রেয়াল মাদ্রিদের মতো না৷ তারা বাইরে থেকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে প্লেয়ার কিনে আনে৷ ম্যুলাররা কিন্তু হোম গ্রোন৷ জার্মান কোচকে কিন্তু খুব বেশি কিছু করতে হয় না৷ অবশ্যই তাঁর ক্রেডিট আছে৷ ক্রেডিট দিচ্ছি না তা নয়৷ অবশ্যই তাঁর ক্রেডিট আছে৷ তাঁর হেল্পিং হ্যান্ড খুবই শক্তিশালী৷
বড় বড় ক্লাবের নিজস্ব অ্যাকাডেমি আছে৷ যেখান থেকে প্লেয়ার তৈরি হয়ে আসে৷ আমরা কি প্লেয়ার তৈরি হওয়ার জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছি?
অবশ্যই না৷ বাংলাদেশে একটা রং কনসেপ্ট আছে৷ এখানে মনে করা হয় ফেডারেশন প্লেয়ার তৈরি করবে৷ ইংলিশ ফেডারেশনের একটা অ্যাকাডেমি আছে৷ সেখানে বছরে ৭ মাসই খালি থাকে৷ কেবল জাতীয় দল বছরে ১৫-২০ দিনের জন্য সেখানে আসে৷ সব প্লেয়ার থাকে ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে৷ অনেকেই ইংলিশ ফেডারেশনের সভাপতির নামই বলতে পারবেন না৷ ফেডারেশনের কাজটা কি? টিম অর্গানাইজ করা, ডিসিপ্লিন দেখা, বাই লজ দেয়া, কোচ আনা, কোথায় খেলবে সেই ভেন্যু ঠিক করা, কবে খেলবে, কি খাবে এসব দেখা৷ সর্বশেষ ভারতে ইংল্যান্ডের যে অনূর্ধ্ব ১৭ দল চ্যাম্পিয়ন হল সেখানে আর্সেনাল, ম্যান সিটি, ম্যান ইউর প্লেয়ার আছে৷ তারা যে ফাইনাল খেলল স্পেনের সঙ্গে, সেখানে স্পেনের ৫টা প্লেয়ার বার্সেলোনার, তিনটা রেয়াল মাদ্রিদের, ৭টা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের৷ এরা ফুটবল ফেডারেশন অ্যাকাডেমির কোন খেলোয়াড় না৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
ছবি: Mir Farid
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ছবি: Noman Mohammad
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
ছবি: Mir Farid
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
ছবি: Khandakar Tarek
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
ছবি: Khandakar Tarek
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’
ছবি: Noman Mohammad
20 ছবি1 | 20
বাফুফে সভাপতির সঙ্গে আপনি কি একমত? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷