ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনকে ঘিরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার প্রস্তাব দিল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডি৷ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে সংস্কারের দাবিকে সামনে রেখেই ডানপন্থি দল এএফডি'র এমন প্রস্তাব৷
বিজ্ঞাপন
সামনে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচন৷ এই নির্বাচনকে সামনে রেখে জার্মানির ডানপন্থি রাজনৈতিক দল এএফডি একটি নির্বাচনী ইশতাহার প্রকাশ করেছে৷ এই ইশতাহারে ২০২৪ সালের মধ্যে জার্মানিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে তারা৷
শুধু তাই নয়, ইশতাহারে রয়েছে বর্তমান ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ভূরি ভূরি সমালোচনাও৷ কিন্তু জার্মানির ‘ইইউ'-চ্যুতির এই প্রস্তাবের পাশে নেই এএফডি নেতৃত্বেরই আরেক অংশ৷
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড ও ইয়োর্গ ময়টেন-এর মতো নেতারা এই দাবির সমালোচনা করেছেন৷ গাউল্যান্ড জানান, ‘‘জার্মানিকে ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বলার এই পরামর্শ আদৌ যৌক্তিক কি না তা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে৷''
‘ডেক্সিট' ছাড়াও যে দাবি
ব্রেক্সিটের আদলে ‘ডেক্সিট' বা ‘ডয়েচলান্ড এক্সিট'-এর এই দাবির সাথে সাথে এই ইশতাহারে সমালোচিত হয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ৭৫১জন সদস্যের বিশেষ অধিকার লাভের বিধানটিও৷
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি দলটির প্রতিষ্ঠা হয় অন্যান্য রাজনৈতিক বক্তব্যের পাশাপাশি ‘ইউরো'-র প্রতি অনাস্থাকে কেন্দ্র করে৷ বর্তমানে এই অনাস্থা আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় আলোচনায় উঠে আসছে জার্মানির ‘ইউরো' মুদ্রাকে পরিত্যাগ করার প্রস্তাবও৷
কিন্তু এএফডি'র এই দুই চরম প্রস্তাবের বিপক্ষে ইতিমধ্যে টুইটারে সরব হয়েছেন এফডিপি, গ্রিন পার্টি সহ একাধিক দলের রাজনীতিকরা৷ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের কার্যক্রমের বিরোধিতা করেও এএফডি কেন এই নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, এই প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসা-বান্ধব দল এফডিপি'র প্রতিনিধি আলেক্সান্ডার গ্রাফ লাম্বসডর্ফ৷
এসএস/এসিবি (এএফপি/ডিপিএ)
এএফডি নেতাদের আপত্তিকর যত মন্তব্য
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) নেতারা গত কয়েকমাস ধরে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের সেরকম কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
ফ্রাউকে পেট্রি
‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া উচিত জার্মানির বর্ডার পুলিশের’, বলেছিলেন এএফডি’র কো-চেয়ার৷ ২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে তিনি জানান, পুলিশ অফিসাররা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে৷ সর্বশেষ সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হ্যোনেকার এ ধরনের কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
বও্যর্ন হ্যোকে
জার্মানির থ্যুরিঙ্গা রাজ্যের এএফডির প্রধান বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মন্যুমেন্ট অফ শেইম’ আখ্যা দিয়ে জার্মানিতে নাৎসি অতীতের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনের বছরে এই মন্তব্য করায় তাকে বহিস্কার করার পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন এএফডির সদস্যরা৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সান্ডার গাউলান্ড গতবছর বলেন, জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জ্যেরম বোয়াটেংকে তাঁর পারফর্মেন্সের জন্য অনেকে প্রশংসা করলেও, তাঁর মতো কাউকে কেউ প্রতিবেশী হিসেবে চাইবে না৷ কৃষ্ণাঙ্গ বোয়াটেংকে নিয়ে এমন মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
বিট্রিক্স ফন স্টর্চ
প্রাথমিকভাবে এএফডি ইউরো এবং বেইলআউটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুতই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটি৷ ইউরোপের এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘‘যারা সীমান্তে আমাদের থামার নির্দেশ গ্রহণ করে না, তারা আক্রমণকারী৷ আর সেসব আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
মার্কুস প্রেতজেল
এএফডির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের চেয়ারম্যান মার্কুস প্রেতজেল৷ ফ্রাউকে পেট্রির নতুন স্বামীও তিনি৷ বার্লিনে গত বছর ক্রিসমাস মার্কেটে প্রাণঘাতি হামলার পর তার মন্তব্য, ‘‘ম্যার্কেলের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে এরা৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/M. Murat
আন্দ্রে ভেন্ডট
স্যাক্সনি রাজ্যের সাংসদ সম্প্রতি জানতে চেয়েছেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীর পেছনে রাষ্ট্র কতটা খরচ বহন করবে৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ গত বছরের জুলাই অবধি ৫২,০০০ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে৷