ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর জার্মানি সে দেশের সেনার জন্য বেশ কিছু যুদ্ধের হেলমেট পাটিয়েছিল। এরপর ইউক্রেন জার্মানির কাছে একাধিক প্রতিরক্ষার অস্ত্র চায়। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে, সংকটকালে, যুদ্ধপরিস্থিতিতে তারা অস্ত্র পাঠায় না। এটা জার্মানির নীতি।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎস এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জানিয়েছেন, জার্মানি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র পাঠাতে হলে সকলে মিলে ঘটনার মূল্যায়ন করতে হয়। ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে জোট সরকারের কেউই অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে নয়।

জার্মানির এই পদক্ষেপ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না ইউক্রেন। বেয়ারবকের সঙ্গে বৈঠক করেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

সমাজমাধ্যমে বহু মানুষ বলছেন, অতীতে যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠিয়েছে জার্মানি। তখন কোথায় ছিল তাদের নীতি? সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, আরব আমিরাত সর্বত্র যুদ্ধে জার্মান অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ।

জার্মানির অর্থ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে বহুদিন ধরে মিশরকে নিয়মিত অস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি। যে অস্ত্র মিশর ইয়েমেন এবং লিবিয়ার যুদ্ধে ব্যবহার করছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র গত এক বছরে জার্মানি মিশরকে চার দশমিক তিন চার বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানি সৌদি আরবের কাছে কয়েকশো কোটি ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে শুধু প্রতিরক্ষার অস্ত্র নয়, আক্রমণের অস্ত্রও আছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবকে ৪১ কোটি ৬০ লাখ ইউরোর অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জামাল খাশগজি খুনের পর অস্ত্র পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি। তারপরেও ২০২০ সালে সৌদি আরব তিন কোটি ৮০ লাখ ইউরোর জার্মান অস্ত্র পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আরবও ওই অস্ত্র ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। একাধিক মানবাধিকার রিপোর্ট বলছে, জার্মানির ওই অস্ত্র ব্যবহার করে আরব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু জার্মানি অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেনি।

সাম্প্রতিককালে জার্মানির সঙ্গে তুরস্কের একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। কিন্তু তার জন্য তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়নি। ওই অস্ত্র তুরস্ক লিবিয়া বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। কুর্দ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন ধরে ওই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা কথা হয়েছে।

জার্মানির সরকারি রিপোর্ট বলছে, কাতারকেও নিয়মিত অস্ত্র বিক্রি করা হয়। কাতারও সেই অস্ত্র একাধিক যুদ্ধে ব্যবহার করেছে।

জার্মান গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর ইরানের খোলা বাজারেও জার্মান অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। আইএস জঙ্গিদের হাতেও জার্মান অস্ত্র দেখা গেছে।