সোমবার সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনে নেমেছেন জার্মান কৃষকেরা। দেশজুড়ে হরতালে কার্যত অবরুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন জার্মানির কৃষকেরা। সরকার কৃষকদের তেলের দাম থেকে ভরতুকি তুলে নিয়েছে, এর প্রতিবাদে শুরু হয়েছে আন্দোলন। রাজধানী বার্লিন-সহ একাধিক শহরে রাস্তায় নেমেছেন কৃষকেরা। ট্রাক্টর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন তারা। যার জেরে সোমবার দিনভর একাধিক শহরে যান চলাচল ব্যাহত হয়। একাধিক হাইওয়েও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে।
সম্প্রতি জার্মানির ওলফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন সরকার ঘোষণা করেছিল, কৃষকদের বহু ভরতুকি দেয়া হয়। এবার সেই ভরতুকির অনেকটাই তুলে নেওয়া হবে। তখনই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কৃষকেরা। বিক্ষোভের মুখে সরকার পিছু হঠলেও কয়েকটি খাতে ভরতুকি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সরকার অনড় থাকে। তার মধ্যে অন্যতম তেল। কৃষকেরা এতেও খুশি নন। তাই সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সরকারের অবশ্য দাবি দেশের বাইরের শক্তি এবং অতি ডানপন্থিরা এই আন্দোলন পরিচালনা করছে। তাদের মদতেই ট্রাক-ট্রাক্টর নিয়ে কৃষকেরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন।
জার্মান কৃষকেরা ক্ষেপে আছেন কেন?
সম্প্রতি হাজার হাজার কৃষক জার্মানির রাস্তায় নেমে এসেছিলেন৷ শ্লোগান দিয়েছেন, ‘আমরা ক্ষিপ্ত’৷ কিন্তু কেন? তারা বলছেন, তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Gateau
‘আমরা ক্ষিপ্ত’
১৮ জানুয়ারি বিক্ষোভটি হয় রাজধানী বার্লিনে৷ এতে অংশ নেন প্রায় ২৭ হাজার মানুষ৷ তারা রাস্তা বন্ধ করতে শত শত ট্রাকটর নামান৷ কৃষকেরা ছাড়াও পরিবেশবাদীরা অংশ নেন এতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
আয়োজনে কারা ছিলেন?
এর আগেও কৃষকরা বিক্ষোভ করেছেন নানা সময়৷ কিন্তু এবারেরটি আলাদা ছিল৷ একেবারে তৃণমূলের কৃষকদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠনগুলোর বাইরে গিয়ে এই আন্দোলন৷ একে বলা হচ্ছে ‘লান্ড শাফট ফেয়ারবিন্ডুং’ বা ‘যে সংযোগ দেশ তৈরি করে’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে যাত্রা শুরু
২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে এই আন্দোলনের যাত্রা শুরু৷ এর মধ্যেই এটি এক লাখ কৃষকের নেটওয়ার্কে দাঁড়িয়ে গেছে৷ জার্মানির ১৬টি রাজ্যের অন্তত সাতটিতে এর সাংগঠনিক কাঠামো আছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Gateau
সরকারের নতুন নীতি
জার্মানির সরকার নতুন সরকারি নীতি তৈরি করেছে৷ সেখানে চাষিদের নির্দিষ্ট সার ও পোকা মারার ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে৷ কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি জার্মানিতে পোকামাকড়ের সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷ ভূ-গর্ভস্থ পানিতে বেড়েছে নাইট্রেটের মাত্রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে
জার্মানিতে কৃষকদের নির্ভর করতে হয় সুপারমার্কেটদের দয়ার ওপর৷ গড়ে একেকজন বছরে ২২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ লাখ টাকা কামান, যা জার্মানির তুলনায় যথেষ্ট নয়৷ অনেকে কৃষি ব্যবসা বন্ধই করে দিচ্ছেন৷ তারওপর নতুন নীতির কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে৷ তখন সুপারমার্কেটগুলো পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করবে৷ এতে তারা আর বাঁচতে পারবেন না বলে দাবি করছেন কৃষকেরা৷
ছবি: picture-alliance/HMB Media/Schumacher
ক্ষতি হবে পরিবেশেরও
পরিবেশবাদীরা বলছেন, আমদানির কারণে বাড়তি কার্বন নিঃসরণ হবে৷ আমদানিকৃত খাবার ব্যবস্থাপনা ও পরিবহণ খরচ এর কারণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
সমাধানও আছে
কৃষকরা বলছেন, পোকামাকড়ের সংখ্যা কেন কমছে তার একটা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করা হোক৷ তার ওপর ভিত্তি করে কোন পদ্ধতিতে ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাষ করতে হবে তা বলা হোক৷ এর সঙ্গে নাইট্রেটের মাত্রা বাড়ার কৃষি ও অকৃষি কারণগুলো আলাদা করে বিচার করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
তবে কি খাবারের দাম বাড়ছে?
জার্মানির কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার বলেছেন, পরিবেশগত উদ্যোগগুলো না নেয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বছরে আট কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয় সরকারকে৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে নাইট্রেটের বিষয়টি ভেবে দেখার ব্যাপারে তিনি একমত৷ তিনি এও যোগ করেন যে, জার্মানির জনগণকে খাবারের পেছনে ব্যয় বাড়াতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
8 ছবি1 | 8
বস্তুত, সোমবারের আন্দোলনে একাধিক অতি দক্ষিণপন্থি পোস্টার, ফেস্টুন, পতাকা দেখা গেছে। এএফডি-র মতো দক্ষিণপন্থি দল সরাসরি এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। গত কয়েকবছরে এএফডি-র দ্রুত উত্থান হয়েছে জার্মানিতে। গোটা দেশে প্রায় ২৪ শতাংশ ভোট আছে তাদের।
এছাড়াও সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ, সিএসইউ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। সরকারে থেকেও বামপন্থি দল এসপিডি-র একাংশ কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে সরকারও বিপাকে পড়েছে। চ্যান্সেলর শলৎস প্রস্তাব দিয়েছিলেন করোনার জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের ফান্ড তৈরি করা হয়েছিল তা মূল বাজেটে ঢুকিয়ে নেয়া হোক। কিন্তু সাংবিধানিক আদালত তাতে রাজি হয়নি। যার ফলে অর্থ সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকট মেটাতেই ভরতুকি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।