লেবানন-ভিত্তিক সংগঠন হেজবোল্লাহকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে সারাদেশে এর সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে জার্মান সরকার৷ ম্যার্কেল সরকারের এই পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি কমিশন ও ইসরায়েল৷
বিজ্ঞাপন
লেবাননের শিয়া সংগঠন হেজবোল্লাহকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এবার জার্মানিতেও নিষিদ্ধ হলো সংগঠনটি৷
বৃহস্পতিবার জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র স্টিভ আলটার এক টুইট বার্তায় এ খবর জানান৷ টুইট বার্তায় আরো জানানো হয়, করোনা সংকটের মাঝেও দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ৷ ইতিমধ্যে বার্লিন, দর্টমুন্ড, ব্রেমেন, এবং ম্যুনশেনের চারটি মসজিদে অভিযান শুরু হয়েছে৷ মসজিদগুলোর বিরুদ্ধে হেজবোল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে৷
প্রতিক্রিয়া
জার্মানিতে হেজবোল্লাহ নিষিদ্ধ হওয়ার খবরে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি কমিশন সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ এক বিবৃতিতে জার্মানির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, ‘‘আশা করি জার্মানির এই সিদ্ধান্তের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দৃষ্টি দেবে এবং ভবিষ্যতে তারাও হেজবোল্লাহর বিষয়ে একই সিদ্ধান্ত নেবে৷’’
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাতসও হেজবোল্লাহকে নিষিদ্ধ করায় জার্মানির প্রশংসা করেছেন৷ টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন৷ তাদের প্রতি আচরণ সেভাবেই করা উচিত৷’’
লেবাননের রাজনীতিতে সক্রিয় হেজবোল্লাহর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ ইরান ও লেবাননের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলে তাই এখন দেখার বিষয়৷ ইউরোপে হেজবোল্লাহ
জার্মানিতে হেজবোল্লাহর অন্তত ১০৫০ জন সক্রিয় কর্মীরয়েছে৷ ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা হেজবোল্লাহর জঙ্গি শাখাকে নিষিদ্ধ করে৷ তবে সংগঠনটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর তখন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি৷
এসিবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ, এএফপি)
২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷