জার্মানিতে শিক্ষকরা মূলত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত৷ আর এই দুই শ্রেণীর মধ্যে বেতন এবং অন্যান্য সুবিধায় তারতম্য রয়েছে৷ এদের একটি শ্রেণীর আবার ধর্মঘটের মতো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ারও সুযোগ নেই৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে শিক্ষকদের চাহিদা অনেক৷ যেসময় এই মতামত লিখছি, তখনও অন্তত হাজার ত্রিশেক পদ শূণ্য পড়ে রয়েছে৷ এসব পদ পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না৷ এরকম অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ হাজার শিক্ষকের ঘাটতি তৈরি হতে পারে ইউরোপের কেন্দ্রের দেশটিতে৷
জার্মানিতে শিক্ষকদের অভাবের বিষয়টি ছাড়াও আরো একটি বিষয় নিয়ে মাঝেমাঝেই আলোচনা হয়৷ সেটা হচ্ছে বেতন বৈষম্য৷ জার্মানির ষোলটি রাজ্য মূলত নিজেরা নিজেদের মতো করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে৷ ফলে রাজ্যভেদে নিয়োগের ধরন আলাদা হতে পারে, বেতনও আলাদা হতে পারে৷
শিক্ষকদের যোগ্যতা একইরকম হলেও মূলত দুই ধরনের মর্যাদা দেয়া হয় তাদের৷ একটি হচ্ছে, ‘বেয়ামটে' বা পূর্ণাঙ্গ সরকারি কর্মচারী৷ অন্যটি, ‘আনগেস্টেলটে' বা নিয়মিত কর্মচারী৷
জার্মানির আটলাখের বেশি শিক্ষকের চারভাগের তিনভাগই পূর্ণাঙ্গ সরকারি কর্মচারী৷ তাদের চাকুরি হারানোর শঙ্কা নেই, পারফর্মেন্স নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না৷ বরং অপেক্ষাকৃত ভালো বেতন এবং শেষ বয়সে অবসর ভাতাও ভালোই পাওয়া যায়৷
তবে, বাকি অংশ যারা একই ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ সরকারি কর্মচারী নয়, বরং নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে পরিচিত, তাদেরক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা৷ এই অংশের বেতন অপেক্ষাকৃত কম এবং অবসর ভাতা ও স্বাস্থ্যবীমার ধরনও আলাদা৷
জার্মানিতে শিক্ষকদের দুই ধরনের চুক্তির মধ্যকার ব্যবধান কমাতে কখনো কখনো আন্দোলনও হয়৷ এরকম এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এক শিক্ষক জানিয়েছিলেন, ত্রিশ বছর চাকুরি করে তিনি যে বেতন পেয়েছেন, একই সময় একই চাকুরি করে তারচেয়ে প্রায় দুই লাখ ইউরো বা দুই কোটি টাকা বেশি পেয়েছেন সরকারি কর্মচারি হিসেবে স্বীকৃত শিক্ষকটি৷
এই ব্যবধান অবশ্য কমিয়ে আনার চেষ্টাও করছে জার্মান সরকার৷ বিভিন্ন সময়ে বেতন, ভাতা বাড়ানো হয়েছে৷
নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে যারা চাকুরি করছেন তাদের অবশ্য একটি অধিকার রয়েছে৷ সেটা হচ্ছে, ধর্মঘট করার অধিকার৷ এই অংশ নিজেদের বেতন ভাতা বাড়াতে বা বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয় নিয়ে চাইলেই ধর্মঘটের মতো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন৷ কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সরকারি কর্মচারী মর্যাদা পাওয়া অংশটি তা পারে না৷
জার্মান আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা ধর্মঘট করতে পারেন না৷ চার শিক্ষক প্রতিবাদের এই অধিকারের দাবিতে ২০১৮ সালে সাংবিধানিক আদালতে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু জার্মানির সর্বোচ্চ এই আদালত রায় দিয়েছেন যে সরকারি কর্মচারীরা ধর্মঘটে অংশ নিতে পারবেন না৷ এবং এই নিষেধাজ্ঞা জার্মানির ‘বেসিক ল' এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়!
শিক্ষক আন্দোলনের নানা মুখ
ঢাকায় চলমান শিক্ষকদের আন্দোলনে এসেছেন দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষকেরা৷ তাদের গল্প এই ছবিঘরে...
ছবি: DW
নতুন প্রজন্ম বাবার সাথে
আন্দোলন এ এসেছেন নতুন প্রজন্ম কাঞ্চন রয়, সহকারী শিক্ষক সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ফরিদপুর, থেকে এসেছেন তার শিশুপুত্র কুষাণ রায়কে নিয়ে এই আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছেন৷
ছবি: DW
আরো বড় জমায়েত
দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে এবার ক্লাস বন্ধ রেখে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা৷ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১ই জুলাই থেকে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে৷ আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বলছেন, প্রথমে কিছুসংখ্যক শিক্ষক কর্মসূচি শুরু করলেও বর্তমানে বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা৷ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা চালিয়ে যাবেন৷
ছবি: DW
বৈষম্য দূর করতেই হবে
সুরাইয়া বানু, ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসেছেন তিনি সরকারি শিক্ষকদের সাথে বেতন বৈষম্য ও জাতীয়করণের দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে আসছেন৷
ছবি: DW
আন্দোলন চলবে
জাতীয় প্রেসক্লাবের গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষকরা এসেছেন৷ এর ফলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নিয়েছেন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা৷
ছবি: DW
আন্দোলনে প্রযুক্তির ছোঁয়া
অনেক শিক্ষক সংগঠন তাদের প্রতিবাদের দৃশ্য ধারণ করছেন যাতে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া তে আপলোড করতে পারেন৷
ছবি: DW
আন্দোলনে প্রযুক্তির ছোঁয়া
অনেক শিক্ষক সংগঠন তাদের প্রতিবাদের দৃশ্য নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়াতে লাইভ করতে দেখা যায়৷
ছবি: DW
এক দাবি
চতুল উচ্চ বিদ্যালয়, বোয়ালমারী, ফরিদপুরের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব৷’’
ছবি: DW
দাবি আদায় না করা পর্যন্ত রাজপথেই
মোনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন তিনি এ আন্দোলনে যোগ দিতে আজকে এসেছেন মেহেরপুর থেকে আসছেন আজকেই তিনি বলেন ‘‘আমাদের এক দফা এবং দাবি একটিই-আমাদের জাতীয়করণ করতে হবে৷ দাবি আদায় না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথেই অবস্থান করবো৷’’
ছবি: DW
সকল সহকর্মী নিয়ে
নিলখী অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়, এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম তিনি বিদ্যালয় এর সকল সহকর্মী নিয়ে এ আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছেন ফেনী জেলা থেকে তিনি বলেন ‘‘আমাদের এক দফা এবং দাবি একটিই-আমাদের জাতীয়করণ করতে হবে৷’’
ছবি: DW
১৪ দিন ধরে
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষক মোখলেছুর রহমান জানান তিনি কুড়িগ্রাম থেকে এসেছেন আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে ১৪ দিন ধরে আছেন৷
ছবি: DW
একে অন্যের পাশে
অনেক শিক্ষকদের দেখা যায় এক সহকর্মী অন্য সহকর্মীর মাথায় তাদের দাবি লেখা পট্টি লাগিয়ে দিতে সাহায্য করছেন৷
ছবি: DW
সংবাদ প্রকাশ
অনেক আন্দোলনরত শিক্ষকদের দেখা যায় পত্রিকা পড়তে৷ সেখানে আন্দোলনের সংবাদ রয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখছেন তারা৷
ছবি: DW
স্লোগানলেখা পট্টি
‘মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ’ লেখা পট্টি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১০ টাকা করে৷ অনেকে তা কিনে মাথায় লাগিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন৷
ছবি: DW
বাস নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ
বাসে ব্যানার লাগিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে যান৷