1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে অনার কিলিং

আরাফাতুল ইসলাম১১ আগস্ট ২০১১

‘অনার কিলিং’৷ নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতের খুন হচ্ছে যুবক-যুবতীরা৷ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এমন হত্যাকাণ্ডের খবর শোনা যায়৷ কিন্তু জার্মানিতে ‘অনার কিলিং’?

** ARCHIV ** Blumen liegen am 16. Dezember 2008 vor dem Landgericht in Hamburg neben dem Foto der getoeteten 16-jaehrigen Afghanin Morsal O. waehrend einer Protestaktion der Frauenrechtsorganisation "Terre des Femmes". Morsal O. soll am 15. Mai 2008 von ihrem Bruder mit Messerstichen getoetet worden sein. Die Staatsanwaltschaft wirft dem jungen Mann vor, seine Schwester i aus Wut ueber deren angeblich unzuechtigen Lebenswandel mit 23 Messerstichen ermordet zu haben. Am Freitag 13. Februar 2009 soll das Urteil im sogenannten Ehrenmord Prozess gefaellt werden. (AP Photo/Fabian Bimmer, Archiv) --- ** FILE ** In this Dec. 16, 2008 file photo flowers are seen placed beside a picture showing Afghan born Morsal O., who was allegedly killed by her brother in an honour killing on May 9, 2008 during a demonstration of women's rights organisation "Terres des Femmes" prior to the trial against Ahmad O. at a court in Hamburg, Germany, on Tuesday, Dec.16, 2008. (AP Photo/Fabian Bimmer, File)
অনার কিলিং এর শিকার মোরসাল ও’র স্মুতিফলকে ফুলেল শ্রদ্ধাছবি: AP

পরিবারের সদস্যরাই হত্যা করল নিজ পরিবারের কাউকে৷ বলা হচ্ছে, পরিবারের সম্মান বাঁচাতে হত্যা করা হচ্ছে একান্ত আপনজনকে৷ ভুক্তভোগী হয়ত পরিবারের চোখে ‘অনৈতিক' কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, যা পরিবারের বা সমাজের অন্য সদস্যদের জন্য অপমানজনক, তাই হত্যা করা৷ এমন হত্যাকাণ্ডকেই বলা হচ্ছে ‘অনার কিলিং'৷ অধিকাংশক্ষেত্রে মেয়েরা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও, পুরুষরাও বাদ যাচ্ছে না৷

জার্মানিতে ‘অনার কিলিং' বিষয়ে কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছে মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট৷ এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণার আলোকে জার্মান সাম্পাহিক ‘ডেয়ার স্পিগেল' জানাচ্ছে, জার্মানিতে ‘অনার কিলিং'-এ অংশ নিচ্ছে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা৷ তবে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের হার বাড়েনি৷ আবার একেবারে কমও নয়৷

বার্লিনে হাতুন এস এর স্মৃতি ফলকছবি: picture alliance/dpa

২০০৯ সালে মার্চ মাসে ২০ বছর বয়সি তরুণী গুলসুম এস. কে হত্যা করে তার বাবা এবং ভাই৷ নিজের বাবা-ভাই গুলসুম এর মাথায় এতটাই আঘাত করেছিল যে, তার চেহারা শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ কুর্দি বংশোদ্ভূত এই তরুণীকে জার্মানিতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল, কেননা সে পরিবারের চোখে ‘অনৈতিক' উপায়ে কুমারীত্ব হারায়৷ তার গর্ভপাত করতে হয়েছিল, যা ছিল কুর্দি পরিবারটির জন্য অসম্মানজনক৷

২০০৫ সালে ভাইয়ের হাতে প্রাণ হারায় আরেক তরুণী, হাতুন সুরুচু৷ গুলি করে তাকে হত্যা করেছিল তারই আপন ভাই৷ মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সংগঠিত এরকম ৭৮টি ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেছে৷ এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী ১০৯ জন৷ প্রকাশিতব্য ২৫০ পাতার এই গবেষণায় ‘অনার কিলিং'-এর ভয়াবহত তুলে ধরা হয়েছে৷ যেমন, ২২ বছর বয়সি এক কুর্দি তরুণ তার ছোট বোনকে ৪৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে৷ বোনটির অপরাধ, সে তার স্বামীকে ত্যাগ করেছিল৷ একইভাবে জর্ডানের এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে হত্যা করে তার পরিবার, কেননা কিশোরী তার পরিবারের পছন্দসই ছেলেবন্ধুকে গ্রহণ করেনি৷

তবে এ সব গবেষণায় একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জার্মানিতে ‘অনার কিলিং'-এর হার বাড়ছে না৷ কয়েকবছরের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বছর ভেদে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা পরিবর্তিত হয়৷ যেমন, ১৯৯৮ সালে জার্মানিতে ‘অনার কিলিং'-এর ঘটনা ছিল দু'টি৷ ২০০৪ সালে আবার এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ১২টি৷ দেখা যাচ্ছে, গড়ে প্রতিবছর সাত থেকে ১০টি ‘অনার কিলিং' হচ্ছে জার্মানিতে৷

‘ডেয়ার স্পিগেল'-এ প্রকাশিত গবেষণার সারসংক্ষেপে দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে, পিতৃশাসিত পরিবারের নারীরা অবাধ্য হলে বা পরিবারের নিয়মকানুন না মানলে বিপদে পড়ছে৷ এসব নারীর পুরুষ সঙ্গী নির্বাচনের বিষয়টি পারিবারিক একটি ইস্যু হিসেবে গণ্য হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে যদি নারীটি প্রতিবাদ করে, তবে তা পরিবারের জন্য অসম্মানজনক হিসেবে গণ্য করা হয়৷

মাক্স প্ল্যাঙ্ক-এর গবেষণায় চার ধরনের ‘অনার কিলিং'-এর সন্ধান পাওয়া গেছে:

- ভুক্তভোগী ‘আইনসংগত' সম্পর্ক থেকে সরে আসতে চাচ্ছিল কিংবা সরে এসেছে৷ গবেষকরা ৪৩টি এরকম ঘটনা পেয়েছেন৷

- ভুক্তভোগী ‘আইনসংগত নয়' এমন সম্পর্কে অংশ নিয়েছিল৷ অর্থ হচ্ছে ভুক্তভোগী বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক অংশ নেয় এবং গর্ভধারণ করে৷ কিংবা পরিবারের চোখে ‘ভুল' কোনো পুরুষ সঙ্গী বেছে নিয়েছিল৷ ৭৮টি ঘটনার মধ্যে ২৫টি'র কারণ এটি৷

হামবুর্গে অনার কিলিং এর শিকার তরুণীকে খুনের ঘটনাস্থলছবি: picture alliance/dpa

- ভুক্তভোগী স্বাধীন জীবনযাপনে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল৷ মানে পশ্চিমা জীবনযাপনে আগ্রহী হয়েছিল কিংবা পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী বিবাহে সম্মত হয়নি৷ ২০টি হত্যাকাণ্ডের কারণ এটি৷

- ধর্ষিতাকে হত্যার ঘটনা৷ দেখা গেছে, কোনো তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা তার পরিবারের জন্য অসম্মানজনক৷ গবেষকরা এরকম আটটি ঘটনা পেয়েছেন৷

গবেষণার বিস্ময়কর দিক হচ্ছে, ভুক্তভাগী সবাই কিন্তু নারী নন৷ ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৩.১ শতাংশ পুরুষ৷ তবে, অনেকক্ষেত্রে পুরুষরা হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল না৷ বরং যে নারীকে হত্যা করা হয়েছে, তার পুরুষ সঙ্গীকেও হত্যা করা হয়েছে একইভাবে৷ ‘অনার কিলিং'-এর শিকার অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে৷ ভুক্তভোগীদের মধ্যে শুধুমাত্র সাত শতাংশের বয়স ৩০ বছরের বেশি৷

‘অনার কিলিং'-এ অংশে নেওয়া হামলাকারীদের বয়স অবশ্য বেশি৷ ৩২ শতাংশের বয়স চল্লিশের উপরে৷ ৭৮ ঘটনায় অভিযুক্ত ১২২ হামলাকারীর মধ্যে ৭৬ জনই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ এছাড়া বিভিন্ন আরব দেশ এবং সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বংশোদ্ভূতরাও জার্মানিতে ‘অনার কিলিং'-এ অংশ নিচ্ছে৷

শেষ করার আগে, ৫ আগস্টের একটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া যাক৷ বার্লিনে প্রকাশ্যে গুলি করে দুই মহিলাকে হত্যা করে এক যুবক৷ হত্যাকারীর অবশ্য লক্ষ্য ছিল তারই সাবেক স্ত্রী৷ তবে প্রাণে বেঁচে যায় সেই নারী৷ বরং প্রাণ হারায় তার মা এবং বোন৷ এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেক৷ ধারণা করা হচ্ছে, এটিও একটি ‘অনার কিলিং'৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ