নতুন নির্বাচন এড়িয়ে জার্মানিতে স্থিতিশীল সরকার গড়ার আশা এবার বাস্তব হয়ে উঠলো৷ এসপিডি ও ইউনিয়ন শিবির বুধবার প্রাথমিক আলোচনা শুরু করতে চলেছে৷ তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
সেপ্টেম্বরের শেষে জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে জার্মানিতে সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে৷ তিন শিবিরের ‘জামাইকা' জোট গড়ার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির এসপিডি দলের সঙ্গে আবার মহাজোট সরকার গঠন করতে আগ্রহী৷ এসপিডি প্রথমে এই সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করার পর জার্মান প্রেসিডেন্টের অনুরোধে নমনীয়তা দেখাতে শুরু করে৷ দলের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফলের পর শীর্ষ নেতা মার্টিন শুলৎস অবশ্য একা এই দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাননি৷ তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলের সদস্যদের রায় নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন৷ বৃহস্পতিবার দলীয় সম্মেলনে তিনি মহাজোটের দিকে অগ্রসর হবার সায় পেলেন৷
মার্চ মাসে ১০০ শতাংশ ভোট পেয়ে দলের সভাপতি ও চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হবার পর মার্টিন শুলৎস নির্বাচনে এসপিডি দলকে উদ্ধার করতে পারেননি৷ উলটে বিপর্যয় নেমে এসেছে৷ ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন৷
বৃহস্পতিবার শুলৎস আবার সভাপতি নির্বাচিত হলেন, তবে ৮১ শতাংশের মতো ভোট পেয়ে৷ নিজের অবস্থান আপাতত কিছুটা শক্ত করার পর তিনি দলের সদস্যদের কাছে ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার জন্য সম্মতি চেয়েছিলেন৷ তবে শুলৎস স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আলোচনা মানেই কিন্তু মহাজোট নয়৷ এই উদ্যোগের কোনো ‘স্বয়ংক্রিয়' পরিণতি নেই৷ অর্থাৎ মহাজোট ছাড়া বাইরে থেকে সংখ্যালঘু সরকারের প্রতি সমর্থন নিয়েও আলোচনা হতে পারে৷ অথবা ঐকমত্য না হলে নতুন নির্বাচনও সম্ভব৷ শেষ পর্যন্ত মহাজোটের বোঝাপড়া হলেও আবার দলের সদস্যদের রায় নেওয়া হবে৷ মোটকথা, এসপিডি দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অভিন্ন কর্মসূচিতে স্থান পেলে তবেই সরকারে অংশ নেবার কথা ভাববে এসপিডি৷ মার্টিন শুলৎস ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন৷
এসপিডি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এই অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জানালেও বিশেষ করে দলের মধ্যে তরুণদের গোষ্ঠী মহাজোটের ঘোরতর বিরোধী৷ তাঁদের মতে, আবার মহাজোটে যোগ দিলে এসপিডি দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে৷
আগামী সপ্তাহে বুধবার এসিপিডি ও ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির প্রথম আলোচনায় বসছে৷ এসিপিডি নেতা মার্টিন শুলৎস, সিডিইউ নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও বাভেরিয়ার সিএসইউ নেতা হর্স্ট সেহোফার ছাড়াও তিন পক্ষের সংসদীয় দলের শীর্ষ নেতারাও তাতে অংশ নেবেন৷ তাঁরা ভবিষ্যৎ আলোচনার সময়সূচি স্থির করবেন৷ তারপর দুই শিবির অভ্যন্তরীণ আলোচনার পর স্থির করবে, জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করা যায় কিনা৷ মহাজোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছালে তবেই জোট গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে৷ উল্লেখ্য, জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে মহাজোট সরকার গড়ার পক্ষে জনসমর্থন বেড়ে চলেছে৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷