1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবৈধভাবে বসবাসকারীদের দুরবস্থা

নাস্তাসিয়া শ্টয়ডেল/আরবি৭ এপ্রিল ২০১৪

আনুমানিক ৪০০,০০০ বিদেশি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই জার্মানিতে বসবাস করেন৷ এইসব মানুষরা সবসময় আতঙ্কে থাকেন৷ মানবাধিকার ও নিয়মিত চিকিত্সার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা৷

ছবি: picture-alliance/dpa

ইকুয়েডর থেকে আসা মারিয়া (নাম পরিবর্তন করা) কখনও বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়েননি৷ ট্রাফিকের লাল বাতিতে রাস্তা পার হননি৷ কাজকর্মে ফাঁকি দেননি৷ ঝাড়ামোছা করেছেন মনোযোগ দিয়ে৷ কখনও অসুস্থতার কারণে ছুটি নেননি৷ যদিও তাঁর বেতন দিয়ে জীবনধারণ করাটা ছিল খুব কষ্টকর৷ ১৫ বছর ধরে ভালই কাটছিল৷ অবশেষে এল ২০০৯ সালের গ্রীষ্মকালের সেই দিনটি৷

অতর্কিতে পুলিশি নিয়ন্ত্রণ

সেদিন তাড়া ছিল মারিয়ার৷ শর্টকাট পথে স্টেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ অতর্কিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়েন তিনি৷ পুলিশ ডকুমেন্ট দেখতে চাইলে কিছু দেখাতে পারেননি মারিয়া৷ কেননা তাঁর তো কোনো বৈধ কাগজপত্রই ছিল না৷ এর পরের ঘটনা সহজেই অনুমান করা যায়৷ মারিয়ার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছিল৷ মেয়েকে বছরটি শেষ করার সুযোগ দেওয়া হয়৷ তা নাহলে সেদিনই মারিয়াকে বহিষ্কারের জন্য আটক করা হতো৷ মারিয়ার কন্যার জন্ম হয়েছে জার্মানিতে৷ মায়ের দেশকে চেনে সে শুধু মানচিত্র থেকে৷ স্প্যানিশ বলে খুব ভাঙা ভাঙা৷ তার বাবাও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জার্মানিতে বসবাস করতেন৷ মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হয়েছে অনেক আগেই৷

কাগজপত্রহীনদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ভিয়র্ট ও কর্টমানছবি: DW/N.Steudel

প্রশংসনীয় উদ্যোগ

‘‘এটা খুবই দুঃখজনক'', বলেন ৬১ বছর বয়সি সিগরিট বেকার-ভিয়র্ট৷ ‘মেডি নেত্স বন' নামে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তিনি৷ এর মাধ্যমে উলরিশ কর্টমান ও আরো দশ সহকর্মীর সঙ্গে শরাণার্থী ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জার্মানিতে বসবাস করছেন, তাঁদের দেখাশোনা করেন বেকার-ভিয়র্ট৷ এইসব মানুষ যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া চিকিত্সা পায়, সেই চেষ্টা করেন তিনি৷

এই উদ্যোগটি গঠিত হয় ২০০৩ সালে৷ তখন আশা করা হয়েছিল একদিন হয়তো এর আর প্রয়োজন হবে না৷ কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত অবস্থার পরিবর্তন হয়নি – বলেন প্রাক্তন শিক্ষিকা সিগরিড বেকার-ভিয়র্ট৷

তাঁর নেটওয়ার্কে বন শহর ও আশেপাশের অঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগের ৮০ জন হৃদয়বান চিকিৎসক সম্পৃক্ত৷ এটি একটি স্বাধীন সংস্থা৷ চাঁদার টাকায় চলে এর কর্মকাণ্ড৷ ২০১৩ সালে সাহায্যপ্রার্থী মানুষদের চিকিত্সাবাবদ ৪৩,০০০ ইউরো খরচ করে সংস্থাটি৷

‘মেডি নেত্স বন' এর অফিসছবি: DW/N.Steudel

কাগজহীনরা' চিকিত্সা পান

প্রতি সোমবার ‘কাগজহীনরা' বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য জড়ো হন বনের উত্তরাঞ্চলে বিবর্ণ একটি বাড়িতে৷ অনুমান করা হয়, বন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪,০০০-এর মতো মানুষ ‘অবৈধভাবে' জার্মানিতে বসবাস করছেন৷

অনেকে ভীতসন্ত্রস্তভাবে প্রবেশ করেন চিকিত্সাকেন্দ্রে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়েটিং রুম ভরে যায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষজনে৷ তাঁরা এসেছেন নানা অসুখবিসুখ নিয়ে ফিলিপাইন্স, পেরু, কসোভো, সিরিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে৷ নিজেদের পরিচয় দিতে চান না তাঁরা৷ তাঁদের আস্থা অর্জন করতে সিগরিড বেকার-ভিয়র্টকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷

কঠিন অসুখও দেখা দেয়

জ্বরজারি, পিত্তসমস্যা, টনসিলের ব্যথা ইত্যাদি সচরাচর দেখা দেওয়া রোগব্যাধির পাশাপাশি টিউমার ও ক্যানসারের মতো কঠিন অসুখবিসুখ নিয়েও আসেন অনেকে৷ কাজ হারানোর ভয়ে অসুখের কথা গোপন রাখেন কেউ কেউ৷ অনেকে আবার কার কাছে যেতে হবে, তাও জানেন না৷ তাই এই চিকিত্সাকেন্দ্রে আসতে আসতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়৷

চিকিৎসার জন্য এখানে এসে অপেক্ষা করতে হয়ছবি: DW/N.Steudel

এইসব মানুষের চিকিত্সার জন্যও জার্মানিতে কিছু আইনকানুন রয়েছে৷ তবে শুধু কঠিন অসুখবিসুখের ক্ষেত্রে৷ এই অবস্থায় জার্মানিতে সাময়িকভাবে অবস্থানের অনুমতি পান তাঁরা৷ অসুখ ভাল হয়ে গেলে সেটা আবার বাতিল হয়ে যায়৷ ‘মেডি নেত্স বন'-এর পক্ষে কেমোথেরাপির মতো চিকিত্সার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়৷ তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নামধাম প্রকাশ করে এই ধরনের অনুমতির ব্যবস্থা করতে হয় সিগরিড বেকার-ভিয়র্টকে৷

আর্থিক টানাপড়েনে কিংবা ধরা পড়ার আতঙ্কে থাকতে থাকতে মানসিক অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েন অনেকে৷ এ ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগীদের জন্য সাময়িক অনুমতির ব্যবস্থা করতে পারেন বেকার-ভিয়র্ট ও তাঁর সহযোগীরা৷

মানবতাই বড় বিষয়

মারিয়া ও তাঁর মেয়ের কী অবস্থা হয়েছিল, সেটা জানেন না বেকার-ভিয়র্ট৷ তিনি আশা করেন, অন্তত তারা ভাল আছে৷ বিশেষ করে বাচ্চা মেয়েটি পিতৃপুরুষের অপরিচিত দেশে মানিয়ে নিতে পেরেছে৷

আজ এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কঠিন পরিস্থিতির আওতায় ফেলে ‘অবৈধ অভিবাসীদের' আইনসিদ্ধ করার চেষ্টা করেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘যে সব বাচ্চার জন্ম জার্মানিতে, বন্ধুবান্ধবও রয়েছে এখানে, তারা তো আসলে বিদেশি নয়! এই দেশেরই মানুষ৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ