মাদকদ্রব্যের অনুমোদন?
১৫ ডিসেম্বর ২০১২মাদকাসক্তি এক ধরনের অসুখ, যার চিকিত্সা প্রয়োজন৷ কেন না আসক্তির কারণে ক্যানসার, এইডস বা হার্টের অসুখের মতো কঠিন রোগ দেখা দিতে পারে, হতে পারে মৃত্যুও৷ মানসিক অসুখ-বিসুখের কবলেও পড়েন অনেকে৷ স্বাস্থ্যবিমাগুলির ব্যয় হয় প্রচুর অর্থ৷ আশার কথা, জার্মানিতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধুমপান ও অ্যালকোহল পানের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে৷ কিন্তু কিশোর ও তরুণদের মধ্যে তা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ জার্মান মাদকাসক্তি প্রতিরোধ কেন্দ্র, ডিএইচএস'এর মুখপাত্র গাব্রিয়েলে বার্টশ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জার্মানিতে অ্যালকোহল ও তামাক সেবনের কারণে প্রতিবছর ৭৩০০০ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ এই সংখ্যাটা প্রায় ব্রান্টেনবুর্গ শহরের জনসংখ্যার সমান৷''
মাদকের ওপর বিধিনিষেধ
পাশাপাশি ক্যানাবিস ও অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্যও মাদক বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এগুলি চেতনানাশক সংক্রান্ত আইনের আওতায় পড়ে৷ এই আইন অনুযায়ী মারাত্মক মাদকদ্রব্যের চাষবাষ, ব্যবসা বা সেবন নিষিদ্ধ, যা অমান্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এইভাবে মাদকজনিত অপরাধপ্রবণতা রোধ করার চেষ্টা করা হয়, বিশেষ করে মাদকসেবন করে যাতে স্বাস্থ্যের হানি না ঘটে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়৷ কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই ধরনের বিধিনিষেধ কতটা কার্যকরী হচ্ছে?
ডিএইচএস'এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফায়েন গাসমান জানান, ‘‘মাদকদ্রব্যের ওপর কড়াকড়ি আরোপ বা শিথিল করা হলে তার ফলাফল কীরকম হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যে৷ পর্তুগাল ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলিতে মাদকদ্রব্যের ওপর কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হওয়া সত্ত্বেও গত ১০ বছরে মাদকসেবনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়নি৷ অন্যদিকে, যে সব দেশে বিধিনিষেধের বেড়াজালটা বেশি, সেসব দেশে কিন্তু মাদক সেবন হ্রাস পায়নি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং বৃদ্ধিই পেয়েছে৷''
প্রতিরোধ সহজ নয়
আন্তর্জাতিক মাদক বিশেষজ্ঞরা মাদকাসক্তি রোধ করার ব্যাপারে একমত হলেও তা বিধিনিষেধ আরোপ করে সম্ভব কিনা, সে ব্যাপারে সন্দিহান অনেকে৷ রাফায়েল গাসমান বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানাবিস বা গাঁজা সেবনের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে৷ এশিয়ার কোনো কোনো দেশে তো আরো কড়া আইন প্রচলিত৷ অ্যামেরিকার কয়েকটি রাজ্যে অল্প কয়েক গ্রাম ক্যানাবিস নেওয়ার কারণে বছর দশেক কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু তবুও সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গাঁজা সেবনের দেশ বলে পরিচিত অ্যামেরিকা৷ অন্য কোনো দেশে এত বেশি ক্যানাবিস সেবন হয় বলে আমার জানা নেই৷''
আইনের বাধাও সুফল আনেনি
আইন প্রণয়ন করে মাদক সেবনের প্রবণতা কমানো যাবে কিনা, সে ব্যাপারে সন্দিহান এই বিশেষজ্ঞ৷ বরং বিধিনিষেধের ফলে মাদক সেবনের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে৷ এই প্রসঙ্গে একটি মডেলের কথা উল্লেখ করেন তিনি, যা প্রথমে সুইজারল্যান্ড ও পরে জার্মানিতেও প্রয়োগ করে সাফল্য দেখা গেছে৷ একটি কেন্দ্রে চিকিত্সকদের তত্ত্বাবধানে হিরোইন আসক্তদের মাদকদ্রব্যের ইন্জেকশন দেওয়া হয়৷ এইভাবে নিয়ন্ত্রিত মাদক সেবনের মাধ্যমে মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার পথটাও সুগম হয়৷ কাজে লাগে থেরাপিও৷ একই সাথে মাদক সংগ্রহের জন্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ থেকেও বিরত থাকেন মাদকসেবীরা৷ সহজেই আবার সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন তারা৷
সব মাদকে ছাড়পত্র নয়
তবে ডিএইচএস'এর মাদক বিশেষজ্ঞরা বেআইনি মারাত্মক মাদকদ্রব্যকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষপাতী নন, যেমনটি শোনা যায় ক্যানাবিসকে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে কিছু জার্মান রাজনীতিকের কন্ঠে৷ এই কথাই বলছিলেন রাফায়েল গাসমান, ‘‘বিষয়টি এই নয় যে, আমরা মাদকদ্রব্যের ওপর বিধিনিষেধ তুলে নেব কিনা৷ বরং স্বাস্থ্যনীতিটাই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ মাদকাসক্তি প্রতিরোধে আমাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, জনগণকে বোঝাতে হবে যে, মাদক সেবন অবসর সময় কাটানোর কোনো নির্দোষ আমোদপ্রমোদ নয়৷ এর ফলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷ বিশেষ করে অল্পবয়সী মাদকসেবীদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে, যাদের মধ্যে হিরোইন বা কোকেনের মত কড়া মাদকের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়৷ মাদক নিবারক ব্যবস্থার পাশাপাশি থেরাপির ওপর জোর দিতে হবে৷ তবে এসব কিছুর জন্যই প্রয়োজন অর্থের৷''
অর্থের সাশ্রয়
মাদক নিরোধক কেন্দ্রটি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে, মাদক নিবারণে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর মনোযোগ দিতে৷ এই ধরনের পদক্ষেপ শাস্তির চেয়েও বেশি কার্যকরী হবে৷ বিষয়টি ব্যয়সাপেক্ষ হলেও মাদকজনিত অসুখবিসুখের হাত থেকে রক্ষা পেলে অর্থের সাশ্রয়ও হবে৷ এছাড়া যাদের এখনও মাদকসেবনেরঅভিজ্ঞতা হয়নি, তারাও ওদিকে হাত বাড়াবে না৷